• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
নির্ধারিত স্টপেজে থামছে না বাস

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাসে উঠছে যাত্রী

ছবি : বাংলাদেশের খবর

যোগাযোগ

নির্ধারিত স্টপেজে থামছে না বাস

ফ্লাইওভারের দুই মুখেই চলছে ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রী ওঠানামা

  • রানা হানিফ
  • প্রকাশিত ১০ অক্টোবর ২০১৮

নির্দিষ্ট করে দেওয়া হলেও বাস দাঁড়ানোর নির্ধারিত জায়গায় (স্টপেজে) থামছে না বাস। চলছে যত্রতত্র বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হলো রাজধানীর ফ্লাইওভারগুলোর দুই প্রান্ত। অথচ সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে ঘোষণা অনুযায়ী রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে স্টপেজ নির্ধারণ করে দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। সড়কের এক পাশে ধাতব বেষ্টনীর সাইনবোর্ডের মাধ্যমে স্টপেজ নির্ধারণ করা হয়েছে। স্টপেজ এলাকা শুরুর ৫০ গজ পূর্বে দিকনির্দেশনা ও সতর্কীকরণ সাইনবোর্ডও বসিয়েছে ডিএমপি।

গত ৫ সেপ্টেম্বর মাসব্যাপী বিশেষ ট্রাফিক কর্মসূচিতে রাজধানীর মোট ১২১টি স্থান বাসস্টপেজ হিসেবে নির্ধারিত করার ঘোষণা দেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। তার এমন ঘোষণার পর সপ্তাহখানেক নির্ধারিত স্থানগুলোতে দুএকটা বাস থামতে দেখা গেলেও বর্তমানে ফিরে এসেছে সেই সাবেক চিত্র।

সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর পশ্চিম প্রান্তে (ফার্মগেটের দিকে) সাইনবোর্ড দিয়ে বাসস্টপেজ নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে বাস থামার আগেই সিগন্যালে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছে বাসগুলো। সড়কটির পূর্ব প্রান্তে আসাদগেটের দিকে আসতে ইন্দিরা রোড খেলার মাঠের পাশেই রয়েছে আরেকটি স্টপেজ। ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হলের সামনে থেকে শুরু হওয়া একটি স্টপেজ শেষ হয়েছে ওয়াসা পানির পাম্পের শেষ প্রান্তে। নির্দিষ্ট রুটের কিছু খালি বাস স্থানটিকে স্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহার করছে দীর্ঘ সময় ধরে যাত্রী ওঠানোর কাজে। ফার্মগেট থেকে আসাদগেট যেতে তেজগাঁও কলেজের সামনে নির্ধারণ করা হয়েছে আরেকটি স্টপেজ। এখানেও আগের মতোই সিজান পয়েন্টের সামনে হচ্ছে বাসের জটলা। ওভারটেকের সুযোগ না দিয়ে আড়াআড়িভাবে দাঁড় করিয়ে রাস্তা আটকে রাখছেন বাসচালকরা। তেজগাঁও কলেজের সামনের নির্ধারিত স্টপেজটি দখল হয়ে আছে রিকশা ও ভ্রাম্যমাণ হকারের ভ্যানগাড়িতে।

ফার্মগেট সিজান পয়েন্টের সামনে কথা হয় মতিঝিল-মিরপুর চিড়িয়াখানা রুটের নিউ ভিশন পরিবহনের সহকারী (হেলপার) শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। নির্ধারিত স্টপেজ থাকতেও যত্রতত্র বাস দাঁড় করানোর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, যতটুকু জায়গার মধ্যে স্টপেজ করা হয়েছে সেখানে দুইটার বেশি বাস দাঁড়ানো সম্ভব না। যদি আগে থেকেই সেখানে বাস থাকে তাহলে আমাদের তো অন্য জায়গাতেই দাঁড়াতে হবে।

ওই স্থানে দায়িত্বরত ডিএমপি ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট পরিতোষ মণ্ডল বাংলাদেশের খবরকে জানান, নির্ধারিত স্টপেজে বাস দাঁড় করাতে আমরা চালকদের বাধ্য করছি। যত্রতত্র বাস দাঁড় করিয়ে রাস্তায় অযথা যানজট সৃষ্টি করলে ব্যবস্থাও নিচ্ছি। তবে বাসের তুলনায় স্টপেজের জায়গা অনেক কম। সেক্ষেত্রে স্টপেজের নির্ধারিত স্থানের বাইরেও যাত্রী ওঠানামার কাজটা মেনে নেওয়া হচ্ছে।

কারওয়ানবাজার এলাকায় উভয় পাশের সড়কে নির্ধারণ করা হয়নি কোনো বাসস্টপেজ। বরং ফার্মগেটের দিকে যেতে কারওয়ানবাজার-পান্থপথ সিগন্যালটি পার হয়ে বাস দাঁড়ানোর ব্যাপারে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। সেখানে সতর্কীকরণ সাইনবোর্ডে ‘এই স্থানে বাস দাঁড়ালেই দণ্ড’ লেখা থাকলেও ট্রাফিক পুলিশের সামনেই চলছে যাত্রী ওঠানামার কাজ। একই চিত্র রাজধানীর বাংলামোটর, শাহবাগ, গুলিস্তান, মতিঝিল এলাকার নির্ধারিত বাসস্টপেজগুলোতেও।

যাত্রী ওঠানামার ঝুঁকিপূর্ণ কাজ চলছে ফ্লাইওভারগুলোর দুই প্রান্তে। মহাখালী ফ্লাইওভারের উভয় প্রান্তই পরিণত হয়েছে বাসস্টপেজে। ফ্লাইওভারটির রাওয়া প্লাজা প্রান্তের একপাশে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের ভিড় এবং অপর প্রান্ত দিয়ে ফ্লাইওভার থেকে নামতেও দাঁড় করিয়ে নামানো হয় যাত্রী। একই চিত্র মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভারের ওয়্যারলেস মোড়ের নামার ঢালে। বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানোয় ফ্লাইওভারটির এই প্রান্তে সব সময়ই লেগে থাকে যানজট। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের ওঠার প্রান্তগুলোতেও বাস দাঁড় করিয়ে চলে একই কাজ।

ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও গবেষণা) গোবিন্দ চন্দ্র পাল বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সেপ্টেম্বর জুড়ে চালিয়ে যাওয়া বিশেষ ট্রাফিক কর্মসূচিতে বাসস্টপেজ নির্ধারণ করা ও তা কার্যকরের ব্যাপারটা কিছুটা প্রতীকী ছিল। এমন উদ্যোগের মাধ্যমে চালকদের মধ্যে নির্ধারিত স্থানে বাস দাঁড় করানোর প্র্যাকটিসটা বাড়াতে চেয়েছি। পাশাপাশি সাধারণ যাত্রীরাও যেন যত্রতত্র বাসের জন্য অপেক্ষা না করে নির্ধারিত স্থানে দাঁড়ায় সেই সচেতনতা বাড়াতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে ধীরে ধীরে নির্ধারিত বাসস্টপেজ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে এবং যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো-নামানো বন্ধ করতে আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হবে।

রাজধানীর বাসের রুট ও কোম্পানি নির্ধারণ করতে মন্ত্রণালয় থেকে গঠিত একটি কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগও ওই কমিটির সদস্য। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাসের রুট ও নির্দিষ্ট কোম্পানি নির্ধারণ করা গেলে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামার চিত্র আর দেখা যাবে না বলেও জানান তিনি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads