• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
রাজশাহীর সঙ্গে বাস বন্ধ রাখা নাটকের অবসান

রাজশাহীর সঙ্গে সারা দেশের বাস চলাচল বন্ধ

সংগৃহীত ছবি

যোগাযোগ

রাজশাহীর সঙ্গে বাস বন্ধ রাখা নাটকের অবসান

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১০ নভেম্বর ২০১৮

শ্রমিক লাঞ্ছনার অভিযোগ ও অভ্যন্তরীণ বিরোধের অজুহাতে রাজশাহীর সঙ্গে সারা দেশের বাস চলাচল বন্ধ রাখা নাটকের অবসান হয়েছে অবশেষে। গত বৃহস্পতিবার ১৬ ঘণ্টা এবং গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে বন্ধ থাকার পর এদিন বিকালে আবার বাস চলাচল শুরু হয়েছে। রাজশাহী বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর রহমান পিটার বাস চলাচল শুরু হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। একই অজুহাতে নাটোর ও সিরাজগঞ্জ থেকেও রাজশাহী রুটে বাস যেতে দেওয়া হয়নি। পরে গতকাল বিকাল ৫টার পর নাটোর থেকে রাজশাহীসহ বিভিন্ন রুটে বাস চলাচল শুরু হয়। এ বিষয়ে পরস্পবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন রাজশাহী ও নাটোরের বাসমালিক ও পরিবহন শ্রমিক নেতারা। তবে রাজশাহী বিএনপির দাবি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে লোক আসা ঠেকাতেই বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

নাটোরে একজন বাস শ্রমিককে লাঞ্ছিত করা হয়েছে— এমন অভিযোগ এনে প্রথমে বৃহস্পতিবার বাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে কারা কোথায় কোন পরিবহনের কোন শ্রমিককে লাঞ্ছিত করেছেন তার হদিস পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় সন্ধ্যার পর থেকে ফের রাস্তায় বাস নামানোর ঘোষণা দেন পরিবহন মালিকরা। কিন্তু শুক্রবার সকাল থেকে কোনো অজুহাত ছাড়াই আবার বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

গতকাল সকালে রাজশাহীর শিরোইলসহ কয়েকটি বাস টার্মিনালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টার্মিনালগুলোতে পরিবহন শ্রমিকদের উপস্থিতি ছিল না। কাউন্টারগুলোও ছিল একেবারেই ফাঁকা। টার্মিনালে সারি করে রাখা ছিল চালক-হেলপারবিহীন সব বাস। ঢাকা বাস টার্মিনাল থেকে কিছু বাস ছেড়ে গেলেও সেগুলোতে যাত্রীসংখ্যা ছিল খুবই কম। ঢাকা বাস কাউন্টারগুলোর সামনে গিয়ে দেখা যায়, কাউন্টার খোলা। বাস ছাড়ছে, কিন্তু যাত্রী খুব বেশি দেখা যায়নি। এদিকে, রাজশাহীতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিভাগীয় সমাবেশ ছিল গতকাল। বিএনপি সমর্থক কয়েকজন বাস শ্রমিকের বরাত রাজশাহী জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম বলেন, রাজশাহীতে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশের কারণে বাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সকাল ৮টা পর্যন্ত রাজশাহী থেকে বিভিন্ন রুটে স্বাভাবিক ছিল বাস চলাচল। ৮টার পর আর কোনো গাড়ি ছাড়েনি। রাজশাহীতেও ঢোকেনি বাইরের কোনো বাস। শুধু বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা গাড়িগুলো ঢুকেছে শহরে।

তিনি জানান, সমাবেশে আসার জন্য যেসব এলাকায় বাসের বুকিং দেওয়া হয়েছিল পরে ওইসব এলাকার বাসমালিকরা বুকিং বাতিল করেছেন। জেলার বাগমারা থেকে রাজশাহী আসার জন্য ১০টি বাসের বুকিং দেওয়া হয়েছিল। বৃহস্পতিবার বাসের লোকেরা চারটি বাসের বুকিং বাতিল করেছিল। শুক্রবার সকালে বাকি বাসের লোকেরা আর ফোন ধরেননি। পরে তারাও বুকিং বাতিল করেন। এ ছাড়া পাবনা থেকে আসার জন্য ৮০টি বাস বুকিং দেওয়া হয়েছিল। সব বুকিং বাতিল হয়। পরে নেতারা প্রাইভেটকার নিয়ে সমাবেশে আসেন।

শফিকুল আলম অভিযোগ করেন, বিকল্প উপায়ে আসার ক্ষেত্রেও বাধা দিয়েছে পুলিশ। তিনি বলেন, শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে নওগাঁর মান্দা ফেরিঘাটে ১০টি ট্রাকে করে লোকজন আসছিল। পুলিশ সব ট্রাকের চাবি কেড়ে নেয়।

পরিবহন শ্রমিকদের বরাত ওই যুবদল নেতা আরো বলেন, মালিকরা শ্রমিকদের চিঠি দিয়ে বাস ভাড়া না দেওয়ার জন্য সতর্ক করে দিয়েছেন। শ্রমিকদের আশঙ্কা ছিল, নির্দেশ উপেক্ষা করে বাস ভাড়া দিলে পরে তাদের ‘চেইনে’ গাড়ি চালাতে দেওয়া হবে না, এমনকি জরিমানাও করা হতে পারে। তাই তারা গাড়ি নিয়ে পথে নামেননি।

এদিকে, সমাবেশকে কেন্দ্র করে শুক্রবারও বাস বন্ধ রাখা হতে পারে— এমন আশঙ্কায় রাজশাহীর আশপাশের জেলাগুলো থেকে অনেক নেতাকর্মী ট্রেন, প্রাইভেটকার, অটোরিকশা ও ট্রেনে করে সমাবেশে আসেন। অনেকে বৃহস্পতিবার রাতেই রওনা দেন। সকালে তারা রাজশাহীতে এসে পৌঁছেন।

একই অজুহাতে সিরাজগঞ্জ-রাজশাহী ও সিরাজগঞ্জ নাটোর রুটে দিনে বাস চলাচল বন্ধ ছিল গতকাল শুক্রবার। এদিন সিরাজগঞ্জ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে রাজশাহী ও নাটোরগামী কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। সিরাজগঞ্জ জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আনছার আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেন। হঠাৎ বাস চলাচল বন্ধ হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। সকালে বাস টার্মিনালে গিয়ে বাস না পেয়ে বাড়ি ফিরতে হয় নাটোর ও রাজশাহীগামী যাত্রীদের।

এসব ঘটনার পর শুক্রবার বিকাল ৫টার পর নাটোর থেকে রাজশাহী অভিমুখে বাস চলাচল শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে নাটোর জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন জানান, রাজশাহী শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা সব বিরোধ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস দেওয়ায় বাস চলাচল শুরু হয়েছে।  এর আগে টানা ১৬ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর গত বৃহস্পতিবার রাতে বাস মালিক এবং শ্রমিক সমিতি নাটোর থেকে সব রুটে বাস ধর্মঘট তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেন। শুক্রবার সকাল থেকে অন্যান্য জেলার সঙ্গে বাস চলাচল শুরু হলেও শুধু রাজশাহী অভিমুখে বাস ও অন্য কোনো যান ছেড়ে যেতে দেওয়া হয়নি। অন্যান্য জেলা থেকে আসা বাস নাটোর টার্মিনালে এসে যাত্রীদের নামিয়ে দেন। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads