• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
নির্বাচনী শোডাউনে ভেঙে পড়েছে রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থা

সংগৃহীত ছবি

যোগাযোগ

নির্বাচনী শোডাউনে ভেঙে পড়েছে রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১২ নভেম্বর ২০১৮

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজেদের সামর্থ্য ও সমর্থন জাহির করতে প্রতিদিন শোডাউন করছেন রাজধানীতে। গতকাল রোববার ছিল দলটির মনোনয়ন ফরম বিক্রির তৃতীয় দিন। আগের দুই দিনের মতো এদিনও ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঢল নামে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দলের নেতাকর্মীদের। একই দিন দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে সেখানে আসেন ফ্রন্টের নেতাকর্মী, সমর্থকরা। এ ছাড়া এদিন রাজধানীর গুলশানের একটি কনভেনশন সেন্টারে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করে জাতীয় পার্টি (জাপা)। সেখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে হাজির হন পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। তিন রাজনৈতিক দলের এই নির্বাচনী কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে মহানগরের এক একটি সড়ক থেকে আসে একাধিক মিছিল, সঙ্গে মোটরসাইকেল, পিকআপ ভ্যান ও বাসে চড়ে চলে সমর্থকদের মহড়া। গত ৯ নভেম্বর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরুর দিন থেকেই চলছে এ অবস্থা। রাস্তা দখল করে শোডাউনের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজধানীর পথচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিশেষ করে কর্মজীবীদের ভোগান্তি অবর্ণনীয়।

গতকাল অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, ট্রাফিক নিয়ম ভাঙা পরিণত হয়েছে নিয়মে। ট্রাফিক ব্যবস্থায় এখন হ-য-ব-র-ল অবস্থা। নিরুপায় হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে অফিসমুখো নগরবাসীকে। নিরুপায় হয়ে শেষতক পায়ে হেঁটে অফিসে যান কেউ কেউ।

গতকাল রোববার সরেজমিন দেখা যায়, কোনো ধরনের সিগন্যাল বা নিয়মের তোয়াক্কা না করে এসব শোডাউনে মেতে উঠেছেন সরকারদলীয় সমর্থকরা। যানবাহন চলাচল বন্ধ করে মিছিল করেছেন তারা। প্রতিটি মিছিলের সঙ্গে রয়েছে মোটরসাইকেলের বহর। এসব বহরেও মানা হচ্ছে না ট্রাফিক আইন। বেশিরভাগের মাথায় নেই হেলমেট। একটি মোটরসাইকেলে দুজনের বেশি চড়ার নিয়ম না থাকলেও তিনজন করে বসে থাকতে দেখা গেছে অনেক বাইকে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি হয় মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, সায়েন্সল্যাব, তেজগাঁও ও বিজয় সরণি এলাকায়। এসব এলাকার রাস্তায় যানবাহনগুলো একেবারেই থমকে ছিল ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এর প্রভাব পড়ে পুরো মহানগরে। তবে ভোগান্তি কমাতে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি ট্রাফিক পুলিশকে। তবে এ নিয়ে যারপরনাই বিরক্ত ছিলেন সাধারণ মানুষ।

সাত মসজিদ সড়কের ২৭ নম্বর মোড়ে যানজটে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা রিকশাচালক এখলাস মিয়া বলেন, ‘পুরা ঘণ্টা বইসা আছি। গাড়ি সামনে যায় না। যাত্রী নাইমা গেছে। ঘুরে অন্যখানেও যাইতে পারতেছি না।’

ধানমন্ডিতে সিটি কলেজের কাছে কথা হয় মতিঝিলগামী আফজাল হোসেন নামে একজনের সঙ্গে। এই বাসযাত্রী সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে রওনা দিয়ে দুই ঘণ্টায় এসেছেন সিটি কলেজে। সেখানে এসে বাস একেবারে দীর্ঘক্ষণ থেমে থাকায় অগত্যা পায়ে হেঁটে রওনা দেন মতিঝিলের দিকে।

আফজাল হোসেনের ভাষ্য, ‘গত দুই দিন ধরে যানজট দেখে আজকে একটু আগেই বাসা থেকে বের হয়েছি। হেঁটে যাচ্ছি অফিসে। গাড়ি চলে না, কী আর করার সব সমস্যা তো আমার মতো সাধারণ মানুষের। রাজনীতি করে তারা, সুবিধাও পায় তারা। আর অসুবিধার ভাগীদার আমরা সাধারণ মানুষ। আমাদের যে সমস্যা হচ্ছে এটা তারা মনেই করছে না।’

তবে নির্বাচনী শোডাউনে অংশ নেওয়াদের বক্তব্য ভিন্ন। এদের একজন এমদাদ হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনে তো ঈদের আনন্দ। একটু সমস্যা হয়, কিন্তু এটা জনগণ মেনে নিয়েছে।’

এদিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংবাদ সম্মেলন কেন্দ্র করে শাহবাগ থেকে মতিঝিল, কাকরাইল থেকে গুলিস্তান পুরো এলাকায় সৃষ্টি হয় যানজট। এসব যানজটে আটকেপড়া যাত্রীদের অনেককে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে ছুটতে দেখা যায়।

এদিকে এ নিয়ে নিজেদের গা বাঁচানোর মতো কথা বলেছেন ডিএমপি দক্ষিণ ট্রাফিক বিভাগ ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার আকরাম হাসান। তিনি বলেন, হাজারো মানুষের মিছিলকে ট্রাফিক আইন মানানো খুব কঠিন। হাজার হাজার নেতাকর্মী মিছিল করে, মোটরসাইকেলে শোডাউন করে ধানমন্ডিতে মনোনয়ন কিনতে আসছে। কাকে বাধা দেব। এটার নিয়ন্ত্রণ রাজনৈতিক নেতাদেরই করতে হবে। যারা এসব নেতাকর্মী নিয়ে আসছেন, তারা যদি সচেতন হন তাহলে দুর্ভোগ ও যানজট কমানো সম্ভব। আমাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘গত কয়েক দিনে ধানমন্ডি ও সংলগ্ন এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। চারদিক থেকে নেতাকর্মীরা আসছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। আমরা তাদের অনুরোধ করতে পারি। কিন্তু তারা যদি না মানেন, তাহলে আমাদের কঠোর অবস্থানে যেতে হয়। আবার কঠোর অবস্থানে গেলে বিশৃঙ্খলা আরো বেড়ে যাবে। যেসব নেতা মনোনয়ন ফরম কিনতে আসছেন এ ব্যাপারে তাদেরও সহায়তা প্রয়োজন।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads