• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজারের দূরত্ব কমবে ৫০ কিলোমিটার

সংগৃহীত ছবি

যোগাযোগ

কক্সবাজার-ঈদমনি আঞ্চলিক সড়ক নির্মাণ প্রস্তাব

চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজারের দূরত্ব কমবে ৫০ কিলোমিটার

  • চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৭ এপ্রিল ২০১৯

কক্সবাজার শহর থেকে চকরিয়ার ঈদমনির লাল ব্রিজপর্যন্ত ৩৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মিত হলে চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে কক্সবাজারের দূরত্ম কমবে ৫০ কিলামিটার। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২হাজার কোটি টাকা। এর আগে, চকরিয়া-পেকুয়া-বাঁশখালী- আনোয়ারা আঞ্চলিক মহাসড়কের নির্মাণ কাজ বিএনপি সরকারের আমলে শেষ হয়েছে। বাকি অংশের কাজ সম্পর্ণ হলে এ আঞ্চলিক মহাসড়কটির গুরুত্ব বাড়বে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ১৫টি উপজেলার প্রায় অর্ধ কোটি মানুষের। 

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূলীয় আঞ্চলিক মহাসড়ক বাস্তবায়নের অংশ হিসাবে কক্সবাজার শহর থেকে চকরিয়ার ঈদমনি পর্যন্ত ১২০ ফুট চওড়া বিশিষ্ট ৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন সড়ক নির্মাণে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠিয়েছে সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়। আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে প্রস্তাবটি সড়ক মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হতে পারে বলে জানা গেছে।

 প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে একদিকে চট্টগ্রাম ও মাতারবাড়ি থেকে কক্সবাজার শহরের দুরত্ম ৫০ কিলোমিটারের বেশি কমে যাবে। অন্যদিকে উপকূলীয় অঞ্চলের বিশাল এলাকা অর্থনৈতিক জোন এলাকা হয়ে ওঠবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আগ্রহে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। কক্সবাজার শহর থেকে খুরুশকুল বাঁকখালী নদীতীর ও মহেশখালী চ্যানেলের তীর ধরে চৌফলদন্ডি পোকখালী-খুটাখালী-ডুলাহাজারা ও ফাঁসিয়াখালী হয়ে ঈদমনি সড়কের সাথে মিলিত হবে প্রস্তাবিত সড়কটি। বর্তমানে চট্টগ্রাম শহর থেকে ঈদমনি পর্যন্ত ৭৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নেটওয়ার্ক রয়েছে। নতুন সড়ক প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম শহর থেকে কক্সবাজার শহরের দুরত্ম এক তৃতীয়াংশ বা ৫২ কিলোমিটার কমে যাবে। এতে চট্টগ্রাম থেকে মাত্র দেড়-দুই ঘন্টার মধ্যে পৌঁছা যাবে কক্সবাজার শহরে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য শহরের সাথেও যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো সহজতর হয়ে যাবে এবং এতে কক্সবাজারের পর্যটনশিল্প আরো বিকশিত হবে। এছাড়া দেশের মেগা শিল্পজোন এলাকা মাতারবাড়ি থেকেও কক্সবাজারের দুরত্ম ৫০ কিলোমিটারের বেশি কমে যাবে। আগামী ৩ বছরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহে আরো বেশ কয়েক বছর আগে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূলীয় আঞ্চলিক মহাসড়ক বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রথম ধাপে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্যাকেজের মাধ্যমে চট্টগ্রাম অংশে সড়ক বাস্তবায়নের পর এবার কক্সবাজার অংশে আরো চওড়া সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা জানান, ‘কক্সবাজার-চৌফলদন্ডি-ঈদমনি সড়ক নির্মাণ’ নামের প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প গত পহেলা এপ্রিল চট্টগ্রামের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কার্যালয় হয়ে প্রধান প্রকৌশলীর দফতরে পাঠানো হয়েছে। পরে সেখান থেকে প্রস্তাবটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। প্রকল্পটি একনেকে উপস্থানের জন্য আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে একনেকে পাশ হলেই নব উদ্যমে ও দ্রুতবেগে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে।

তিনি জানান, এর আগে গতবছরের শুরুতে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ডিপিএম নামের একটি সংস্থাকে পরামর্শক নিয়োগ করে। সংস্থাটি ১৩ মাস ধরে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর গত ২৮ ফেব্রুয়ারি একটি প্রকল্প প্রস্তাব পেশ করে। কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলীরা প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প চূড়ান্ত করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটিতে কক্সবাজার শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে ঈদমনি পর্যন্ত দুরত্ম ৩৬.৯০ কিলোমিটার উল্লেখ করা হলেও এ পথে নতুন সড়ক নির্মাণ করতে হবে মাত্র ২০ কিলোমিটার। এছাড়া বাকী ১২ কিলোমিটার সড়ক একটু চওড়া করতে হবে। শহরের জিরোপয়েন্ট বা হলিডে মোড় থেকে খুরুশকুল ব্রীজ পর্যন্ত বর্তমানে সড়ক রয়েছে। কস্তুরাঘাটে বাঁকখালী নদীর উপর নির্মাণাধীন দ্বিতীয় সেতুটি বাস্তবায়িত হলে নতুন সড়কটি শহরের সাথে এ পথেই সংযুক্ত হবে। এর ফলে উপকূলীয় এলাকার প্রায় ২শ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শিল্প কলকারখানা গড়ে ওঠবে ও অর্থনীতির নতুন প্রাণ প্রবাহ শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূলীয় আঞ্চলিক মহাসড়ক বাস্তবায়ন কমিটির মহাসচিব এমএ আজিজ মাহবুব বলেন, সড়কটি বাস্তবায়িত হলে ২শ বর্গ কি.মি এলাকাজুড়ে প্রায় ৩০ হাজার একর সরকারি জমিতে শিল্পাঞ্চলসহ নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা যাবে। এতে অন্তত ৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

তিনি আরো জানান, প্রায় ১০ বছর ধরেই উপকূলীয় আঞ্চলিক মহাসড়ক গড়ে তোলার প্রস্তাবটি বিবেচনা করছে সরকার। কিন্তু মেগা প্রকল্প হওয়ায় তা প্রস্তুতিতেই অনেক সময় ক্ষেপন হয়েছে। এবার আসল কাজ শুরু হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, প্রকল্পটির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আগ্রহ থাকায় এটি অগ্রাধিকার প্রকল্পেরও আওতাভূক্ত করা হচ্ছে। নতুন অর্থবছরের (২০১৯-২০) শুরুতে প্রকল্পটির টেন্ডার ঘোষণা করা হতে পারে। 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads