• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
দেড় কিলোমিটার দৃশ্যমান হচ্ছে পদ্মা সেতু

সংগৃহীত ছবি

যোগাযোগ

দেড় কিলোমিটার দৃশ্যমান হচ্ছে পদ্মা সেতু

  • মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১০ এপ্রিল ২০১৯

পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়েছে চলছে। ইতোমধ্যে ২৪৭টি পাইলের কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর মাওয়া প্রান্তে আজ বসছে দশম স্প্যান। ফলে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর দেড় কিলোমিটার দৃশ্যমান হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী হুমায়ুন কবীর জানান, বুধবার মাওয়া প্রান্তের ১৩ ও ১৪ নম্বর পিলারে স্প্যান ৩-এ বসানো হবে। ওই দিন সকালে মাওয়ার কুমারভোগের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে স্প্যান রওনা দেবে। কারণ, কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে স্প্যান বসানোর পিলারের দূরত্ব সামান্য। তাই এক দিনেই স্প্যানটি বসানো হবে বলে আশাবাদী প্রকৌশলীরা।

সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, এর আগে গত ২২ মার্চ সেতুর নবম স্প্যান বসানো হয়। আগামী ২০ এপ্রিল জাজিরায় ৩৪ ও ৩৩ নম্বর খুঁটির উপর এগারোতম স্প্যান বসানো হতে পারে। পদ্মা সেতুর কাজ শুরুর দিকে মাওয়া প্রান্তেই প্রথম স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু মাওয়া প্রান্তে পিলারগুলোতে সয়েল কন্ডিশন ভালো না থাকায় কাজ পিছিয়ে পড়ে। এরপর কাজ চলতে থাকে জাজিরা প্রান্তে।

গতকাল মঙ্গলবার পদ্মা সেতুর মাওয়া এলাকায় স্প্যান ফেব্রিকেশন ইয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, দশম স্প্যানটি পদ্মার দিকে নামানোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। তবে ক্রেনে টেনে এটি নেওয়া শুরু হবে আজ সকালে। এদিনই এটি ১৩ ও ১৪ নম্বর খুঁটির ওপর বসানো হবে।

পদ্মা সেতুর প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, ১০টি স্প্যান বসানোর পাশাপাশি সেতুর ২৪৭টি পাইল বসানোর কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। বাকি ৪৭টি পাইলের মধ্যে ১৫টি পাইলেরও অর্ধেকাংশ বসানো হয়ে গেছে। পদ্মা সেতুতে থাকছে মোট ৪২টি খুঁটি। এর মধ্যে ২২টির নির্মাণ এখন পুরোপুরি শেষ। আগামী জুন মাসের মধ্যে বাকি আরও ১০টি খুঁটির নির্মাণকাজ শেষ হয়ে যাবে। তখন আরও দ্রুতগতিতে স্প্যান বসানো যাবে। তখন প্রতি মাসে দুটি করে স্প্যান বসানো সম্ভব হবে বলে জানান সেতুর প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম।

সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীনের চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং (এমবিইসি) সূত্র জানায়, ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পদ্মা সেতু গড়তে তাদের সবচেয়ে বেশি যুদ্ধ করতে হয়েছে পদ্মার তলদেশে। তলদেশে মাটির গঠনগত বৈচিত্র্যের কারণে ১১টি খুঁটির নকশায় পরিবর্তন আনতে হয়েছে। শুরুর দিকে মাওয়া অংশে কাজ বাদ দিয়ে জাজিরা চলে যেতে হয়েছে তাদের। বছরখানেক পর ফের খুঁটির ডিজাইন হাতে পাওয়ার পর মাওয়া অংশে কাজ শুরু হয়। সেতুর মাওয়া অংশে ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটির পাইল গেঁথে দিয়ে গিয়ে দেখা যায় তলদেশে নরম মাটির স্তর বেশি। যে কারণে খুঁটি গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছিল না। এটি ছিল সবচেয়ে বেশি কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং। সেজন্য ট্যাম (টিউব অ্যা ম্যানশেট) নামের বিশেষ পদ্ধতিতে পাইল বানিয়ে তা পদ্মার গভীরে গেড়ে দিতে হয়েছে। সে কাজও এরই মধ্যে শেষ করেছেন সেতু নির্মাণে নিয়োজিতরা। যর ফলে গতকাল ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটির পাইল বসানোর কাজ শেষ হয় বলে জানায় সেতু কর্তৃপক্ষ।

সেতু সূত্র জানিয়েছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট নয়টি স্প্যান বসানো হয়। এর মধ্যে জাজিরা প্রান্তে আটটি ও মাওয়া প্রান্তে একটি স্প্যান বসানো হয়। এদের মধ্যে জাজিরা প্রান্তে ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২ খুঁটিতে আটটি ও মাওয়া প্রান্তে ৫ ও ৬ নম্বর খুঁটি একটি স্প্যান বসানো হয়েছে। অন্যদিকে জাজিরা প্রান্তে রেলওয়ে বক্স বসানোর কাজ চলছে। বসানো শুরু হয়েছে রোডওয়ে স্ল্যাব। একটি স্প্যানে ৭৪টি রোডওয়ে স্ল্যাব করে ছয় কিলোমিটারে দুই হাজার ৯৩১টি স্ল্যাব বসানো হবে বলে জানিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ।

২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এরপর ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি ৩৮ ও ৩৯ নম্বর খুঁটিতে বসানো হয় দ্বিতীয় স্প্যান। গত বছরের ১১ মার্চ ৩৯ ও ৪০ নম্বর খুঁটির ওপর বসে তৃতীয় স্প্যান। ১৩ মে ৪০ ও ৪১ নম্বর খুঁটির ওপর চতুর্থ স্প্যান বসানো হয়। ২৯ জুন সেতুর পঞ্চম স্প্যান বসানো হয়েছে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকায়। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে জাজিরা প্রান্তের তীরের দিকের ষষ্ঠ শেষ স্প্যান বসে। গত মাসে জাজিরা প্রান্তে ৩৫ ও ৩৬ নম্বর খুঁটির ওপর বসানো হয়েছিল সপ্তম স্প্যান, গত মাসের ২২ তারিখে জাজিরা প্রান্তে ৩৪ ও ৩৫ পিলারের ওপর বসানো হয় নবম স্প্যান বসানো হয়। আর গত বছরের শেষ দিকে মাওয়া প্রান্তে ৪ ও ৫ নম্বর খুঁটির ওপর একমাত্র স্প্যানটি বসানো হয়। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। ফলে দশটি স্প্যান মিলে দেড় কিলোমিটার দৃশ্যমান হতে যাচ্ছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads