• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
অব্যবস্থাপনার অভিযোগ

ছবি : সংগৃহীত

যোগাযোগ

ট্রেনের আগাম টিকেট বিক্রি

অব্যবস্থাপনার অভিযোগ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৩ মে ২০১৯

আসন্ন ঈদুল ফিতর সামনে রেখে ট্রেনের আগাম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে নানা অব্যবস্থাপনার মধ্যদিয়ে। যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে এবারই প্রথম কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের বাইরে চারটি জায়গা থেকে টিকেট বিক্রির ব্যবস্থা রাখার পাশাপাশি ই-টিকেটিংয়ের জন্য ৫০ শতাংশ টিকেট বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। তবে অ্যাপ বিষয়ে যাত্রীদের অভিজ্ঞতা সুখের নয়। অ্যাপস সঠিকভাবে কাজ করছে না জানিয়ে প্রথম থেকেই অভিযোগ জানিয়ে আসছেন যাত্রীরা।

গতকাল বুধবার সকাল ৯টা থেকে কাউন্টারগুলোতে ৩১ মে’র টিকেট বিক্রির মাধ্যমে ই-টিকেটিং কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু সকাল থেকেই রেলওয়ের ওয়েবসাইট বা অ্যাপ ব্যবহার করে টিকেট কাটতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন অনেকে।

ই-টিকেট সংগ্রহ করতে না পেরে সকালে অনেকেই ছুটছেন স্টেশনের দিকে। কমলাপুর স্টেশনে কাউন্টারে আগের রাত থেকে অপেক্ষমাণ টিকেটপ্রত্যাশীদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন তারা।

এদিকে বেলা সাড়ে ১০টার দিকে কমলাপুর স্টেশনে টিকেট বিক্রির কার্যক্রম পরিদর্শনের পর ই-টিকেটিংয়ের অব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা স্বীকার করে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সাংবাদিকদের বলেন, সেবাদাতা সংস্থা সিএনএসবিডিকে পাঁচ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ই-টিকেটিং সেবা ঠিক না হলে অবিক্রীত টিকিটগুলো ২৭ মে কাউন্টারে দেওয়া হবে।

এর আগে বেলা ১০টার দিকে কমলাপুর স্টেশনে আসেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি দল। তারা যাত্রীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অভিযোগ শোনেন। তারপর তারা রেলস্টেশন ম্যানেজারসহ রেলের ও সিএনএসবিডির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। সাড়ে ১২টার দিকে তারা চলে যান।

যাওয়ার আগে দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, টিকেট না পাওয়ার বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে আমরা এসেছি। তবে অভিযোগগুলো অ্যাপের মাধ্যমে ও অনলাইনে টিকেট কিনতে না পারার; কাউন্টারে টিকেট বিক্রি নিয়ে তেমন অভিযোগ নেই। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা সিএন‌এসবিডির কাছ থেকে কোনো সদুত্তর পাইনি। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কমিশনে আমাদের প্রতিবেদন জমা দেব।

সকাল থেকে অ্যাপের মাধ্যমে টিকেট কেনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে শান্তিনগরের গৃহিণী আসমা আরা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের কাউন্টারে আসেন। তিনি বলেন, আমরা ঈদের আগে দিনাজপুর যাব। একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেটের জন্য সকাল থেকে চেষ্টা করছি। পারলাম না। অ্যাপে ঢোকাই যাচ্ছে না। এজন্য আমি এখানে চলে এসেছি। বাসায় ছেলেকে বলে এসেছি সে যেন মোবাইলে চেষ্টা করে টিকেট কেনার।

কমলাপুর স্টেশনে আগামী ৩১ তারিখের রাজশাহীগামী বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট কাটতে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন জুবায়ের আল হাসান। তিনি বলেন, অনলাইনে ৫০ শতাংশ টিকিট থাকা সত্ত্বেও আমাদের স্টেশনে টিকিটের লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে। কারণ অ্যাপের মাধ্যমে কোনো টিকেট কাটা যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে লাইনে এসে দাঁড়িয়েছি। যদি সেবা নাই পাওয়া যায় তাহলে বড় বড় কথা বলে অ্যাপ নামিয়ে লাভ কী?

আরেক টিকেটপ্রত্যাশী সুলতান আহমেদও টিকেট কাটতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ান। তিনি বলেন, সকাল ৯টা থেকে টানা চেষ্টা করেছি অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট কাটতে, কিন্তু টানা ২ ঘণ্টা চেষ্টা করেও টিকেট কাটতে না পেরে স্টেশনে এসে লাইনে দাঁড়ালাম। আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ৩১ মে রংপুর যেতেই হবে। রেল কর্তৃপক্ষের কথা আশ্বস্ত হয়ে, ভেবেছিলাম এবার ভোগান্তি ছাড়া অনলাইনে অ্যাপের মাধ্যমে টিকেট কাটব। কিন্তু সে আশা পূরণ হলো না। সেবার মান ও টেকনিক্যাল বিষয়গুলো ঠিক না করে একটি মানহীন অ্যাপ বানানো হয়েছে।

অনেক সময় অ্যাপে প্রবেশ করা গেলেও ভেতরে টিকেট কেনার অপশনে যাওয়া যায়নি। ভেতরে ইন্টারফেস কাজ করেনি। এই ঘটনায় অভিযোগ তোলার পাশাপাশি ভুক্তভোগীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন রীতিমতো।

অন্যদিকে অনলাইনে টিকেট কিনতে না পেরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকে। বাংলাদেশ রেলওয়ের ফেসবুক পেজেও অনেকে এ বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন।

মাহবুব কবির মিলন নামে একজন বলেন, সকাল নয়টা থেকে রেলওয়ের অ্যাপ খালি ঘুরছে আর ঘুরছে। টিকেট বিক্রির দায়িত্বে থাকা সিএনএসবিডির অনলাইন অব্যবস্থাপনা এজন্য দায়ী।

ফাইয়াজ হোসেন নামে একজন বলেন, এই চোরের দেশে আর কী আশা করা যায়? কোনো বছর ঈদেই আমরা অনলাইনে টিকেট পাই না। সিএনএস নামক বিশ্ব চোর, রেলওয়ে নামক বিশ্ব বাটপাড়ের কারসাজিতে। রেলসচিব, রেলমন্ত্রী! আপনারা সৎ ও কর্মনিষ্ঠ বলেই আমরা মন থেকে বিশ্বাস করি। তাহলে কেন আপনারা এই দুর্ভোগ থেকে আমাদের মুক্তি দিচ্ছেন না?

এসব অভিযোগের বিষয়ে সিএনএসবিডির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনির-উজ-জামান চৌধুরী বলেন, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি ব্যবহারকারী টিকেট নিতে চেষ্টা করছে। ফলে সার্ভারের ওপর স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি চাপ সৃষ্টি হয়েছে, যেটা সার্ভার নিতে পারছে না। এ কারণে অনেকেই ইন্টারনেট থেকে ও অ্যাপের মাধ্যমে টিকেট নিতে পারেননি। তবে টিকেট বিক্রি বন্ধ নেই। তার দাবি, বুধবার কাউন্টারের জন্য বরাদ্দ ২০ হাজার ২৩৫টি টিকেটের মধ্যে বেলা ২টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত ১০ হাজার ৫৪০টি টিকেট বিক্রি হয়েছে, যা বরাদ্দকৃত টিকেটের ৫২ শতাংশ। আর ই-টিকেটিংয়ের জন্য বরাদ্দ ১১ হাজার ১৪৫টির মধ্যে একই সময় পর্যন্ত ৬ হাজার ৩৮০টি টিকেট বিক্রি হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ৫৭ শতাংশ।

রেলের অনলাইন টিকেট ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেমস লিমিটেড বাংলাদেশ (সিএনএসবিডি) সূত্রে জানা গেছে, এবার ৫০ ভাগ টিকেট অনলাইনে তিন পদ্ধতিতে দেওয়া হচ্ছে। মোবাইল ফোনের এসএমএসে, ওয়েবসাইট থেকে এবং রেলের টিকেট কাটার সবশেষ ফিচার অ্যাপের মাধ্যমে। ঢাকা থেকে সবগুলো আন্তঃনগর ট্রেন মিলিয়ে দিনে প্রায় ৩০ হাজার ট্রেনের টিকেট রয়েছে। এর মধ্যে ৫ ভাগ রেলওয়ে কমকর্তা-কর্মচারী ও ৫ ভাগ ভিআইপি ছাড়া বাকি সব টিকেটের ৫০ শতাংশ অনলাইন ও এসএমএস ও অ্যাপে পাওয়ার কথা।

উল্লেখ্য, বুধবার সকাল ৯টা থেকে কমলাপুরে ঈদের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে। অগ্রিম টিকেট পাওয়া যাবে ২৬ মে পর্যন্ত। গতকাল ২২ মে বিক্রি হয়েছে ৩১ মে’র টিটে। ২৩ মে যারা টিকেট সংগ্রহ করবেন তারা ১ জুন, যারা ২৪ মে সংগ্রহ করবেন তারা ২ জুন, যারা ২৫ মে সংগ্রহ করবেন তারা ৩ জুন, যারা ২৬ মে সংগ্রহ করবেন তারা পাবেন ৪ জুনের টিকেট।

যাত্রীদের সুবিধার্থে এবার পাঁচটি স্থান থেকে রেলের অগ্রিম টিকেট বিক্রি হচ্ছে। যমুনা সেতু দিয়ে সমগ্র পশ্চিমাঞ্চলগামী ট্রেনের টিকেট পাওয়া যাচ্ছে কমলাপুরে। চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে বিমানবন্দর স্টেশনে। ময়মনসিংহ ও জামালপুরগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট অগ্রিম সংগ্রহ করা যাবে তেজগাঁও রেলস্টেশন থেকে। নেত্রকোনাগামী মোহনগঞ্জ ও হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট সংগ্রহ করা যাবে বনানী স্টেশন থেকে। ময়মনসিংহ ও জামালপুরগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট অগ্রিম সংগ্রহ করা যাবে তেজগাঁও রেলস্টেশন থেকে। নেত্রকোনাগামী মোহনগঞ্জ ও হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট সংগ্রহ করা যাবে বনানী স্টেশন থেকে। এছাড়া সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট সংগ্রহ করতে হবে ফুলবাড়িয়া (পুরনো রেলভবন) থেকে। একজন যাত্রী চারটির বেশি টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন না। ঈদের অগ্রিম বিক্রীত টিকেট ফেরত নেওয়া হবে না। জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে টিকেট সংগ্রহ করতে হবে। যাত্রীরা ৫০ শতাংশ টিকিট অনলাইনে অ্যাপের মাধ্যমে কিনতে পারবেন। স্টেশন কাউন্টার থেকে ৫০ শতাংশ টিকেট অগ্রিম কিনতে পারবেন। অনলাইনে ৫০ শতাংশ টিকেট বিক্রি না হলে অবিক্রীত টিকেট কাউন্টার থেকে দেওয়া হবে। এদিকে রেলের ফিরতি টিকেট বিক্রি ২৯ মে শুরু হয়ে ২ জুন পর্যন্ত চলবে।

জানা যায়, ঢাকা থেকে ৩৩টি আন্তঃনগর এবং চারটি বিশেষ ট্রেনসহ ৩৭টি ট্রেনের ২৮ হাজার ২২৪টি টিকেট বিক্রি হবে। কমলাপুর স্টেশন থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে যাতায়াতকারী ১৬টি ট্রেনের ১৪ হাজার ৯৫টি টিকেট বিক্রি হবে। এর মধ্যে কাউন্টার থেকে পাঁচ হাজার ৯৪৪টি এবং অনলাইন ও মোবাইল অ্যাপসে আট হাজার ১৫১টি টিকেট বিক্রি হবে। বিমানবন্দর স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী ৭টি আন্তঃনগর ট্রেনের চার হাজার ৮৭৯টি টিকেট বিক্রি হবে। এর মধ্যে দুই হাজার ৫৪৮টি অনলাইনে এবং দুই হাজার ৩৩১টি টিকেট কাউন্টার থেকে বিক্রি হবে। তেজগাঁও স্টেশন থেকে জামালপুরগামী পাঁচটি ট্রেনের তিন হাজার ৪৪৪টি টিকেট বিক্রি হবে। এর মধ্যে ৬৪৪টি অনলাইনে এবং ৬১৪টি কাউন্টারে বিক্রি হবে। বনানী রেলওয়ে স্টেশন থেকে মোহনগঞ্জ রুটের দুটি ট্রেনের এক হাজার ২৫৮টি টিকেট বিক্রি হবে। ৬৪৪টি টিকেট অনলাইনে বাকি ৬১৪টি টিকেট কাউন্টারে দেওয়া হবে। ফুলবাড়িয়া পুরাতন রেলভবন থেকে সিলেট ও কিশোরগঞ্জ রুটের সাতটি আন্তঃনগর ট্রেনের চার হাজার ৫৪৮টি টিকেট বিক্রি হবে। এর মধ্যে দুই হাজার ২৫১টি টিকেট অনলাইনে এবং দুই হাজার ২৯৭টি টিকেট কাউন্টারে বিক্রি হবে। গতকাল বিক্রি হওয়ার কথা ২৫ হাজার ৫৭১টি টিকেট। বিশেষ ট্রেনের টিকেট বিক্রি হবে ২৪ মে থেকে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads