• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
ঈদযাত্রার শুরুতেই ট্রেনে বিড়ম্বনা

ছবি : সংগৃহীত

যোগাযোগ

ঈদযাত্রার শুরুতেই ট্রেনে বিড়ম্বনা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০১ জুন ২০১৯

রাজধানী ঢাকা থেকে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রওনা হয়েছেন গ্রামের বাড়ির পথে। এর মধ্যে এবার ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রেলওয়ে প্রথম যে দিনের আগাম টিকেট বিক্রি করেছিল, সেই ট্রেন ছাড়া শুরু হয়েছে গতকাল শুক্রবার। ফলে সকাল থেকেই কমলাপুর স্টেশনে ছিল ঘরমুখো মানুষের বাড়তি ভিড়। কিন্তু প্রথম দিনই বেশ কয়েকটি ট্রেন ছাড়তে দেরি হওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে গরমের মধ্যে যাত্রীদের পড়তে হয় অপেক্ষার বিড়ম্বনায়।

ঘরমুখো মানুষের ভিড়ে শুক্রবার কমলাপুরে সৃষ্টি হয় জনস্রোত। কমলাপুর স্টেশন থেকে সকাল ৯টায় রংপুর এক্সপ্রেস ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তা দুপুর ১২টা পর্যন্ত স্টেশনে এসে পৌঁছায়নি।

এছাড়া কমলাপুর থেকে রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ভোর ৬টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তা দুই ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ে। চট্টগ্রামগামী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে ছাড়ার নির্ধারিত সময় থাকলে ছেড়েছে সকাল সোয়া ৮টায়। সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছাড়ার সময় থাকলেও ছেড়ে যায় সাড়ে ৭টায়। সকাল ৮টার চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস আড়াই ঘণ্টা দেরি করে সকাল সাড়ে ১০টায় ছেড়ে গেছে।

এদিকে নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন ছাড়তে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। সকাল ৯টায় কমলাপুর ছাড়বে রংপুর এক্সপ্রেস। তাই নির্ধারিত সময়ের আগেই বৃদ্ধা মা, স্ত্রী আর দুই সন্তানকে নিয়ে স্টেশনে হজির হন শিহাবুল ইসলাম নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবী। গত ২২ মে সেহরি খেয়ে ভোর ৫টায় কমলাপুরে রংপুর এক্সপ্রেসের টিকেটের জন্য টিকেটের লাইনে দাঁঁড়িয়েছেলন তিনি। টিকেট পেতে তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল প্রায় ৮ ঘণ্টা। যদিও এসি টিকেট প্রত্যাশা ছিল, কিন্তু তা না পেয়ে সাধারণ টিকেট নেন তিনি। এত ভোগান্তি সহ্য করে টিকেট কাটার পর যাত্রার দিন (৩১ মে) যখন ৫ ঘণ্টা বিলম্বে ছাড়ার বিষয়টি জানতে পারেন তখন নিজের ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন তিনি। তিনি বলেন, আজকের এ টিকেটের জন্য পুরো ৮ ঘণ্টা লাইনে দাঁঁড়িয়ে থেকেছি। ট্রেনের টিকেটটা খুবই জরুরি ছিল তাই শত ভোগান্তি উপেক্ষা করে টিকেট কেটেছি। কিন্তু আজ এসে দেখলাম ট্রেন ৫ ঘণ্টা বা তার চেয়েও বেশি বিলম্বে ছাড়বে, তখন এতটাই শক খেয়েছি, যা বলার মতো না।

এদিকে রেল কর্মকর্তারা জানান, বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ১৬টি ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে গেলেও সাতটি ট্রেনের যাত্রা বিলম্বিত হয়েছে কয়েক ঘণ্টা করে।

কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ আমিনুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুর লাইনে কিছু সমস্যা ছিল। সকালে তাই ধীরে চলতে হয়েছে। উত্তরবঙ্গগামী কয়েকটা ট্রেন ঢাকা এসেছে দেরি করে, ছাড়তেও দেরি হয়েছে।

তিনি জানান, অতিরিক্ত যাত্রীর চাপের মধ্যে বিভিন্ন গন্তব্য থেকে আসা ট্রেন ‘ড্রেসিং’ (পরিচ্ছন্নতা) করতে সময় লাগে। ময়মনসিংহ ও সিলেট লাইনের ট্রেন বিলম্বিত হয়েছে বলে স্টেশন মানেজার জানান।

ট্রেন ছাড়তে দেরির জন্য স্টেশনের মাইকে যাত্রীদের উদ্দশে বারবার ঘোষণা করা হয়- ‘আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত’। তবে যাত্রীদের অপেক্ষার কষ্ট তাতে লাঘব হচ্ছে না।

ধূমকেতু এক্সপ্রেসের যাত্রী ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন, সেহরির পর নামাজ পড়ে স্টেশনে আসছি। কিন্তু ট্রেন দেরি করেছে। এই গরমের মধ্যে কষ্টই হচ্ছে।

যাত্রীদের খোঁজখবর নিতে সকাল সাড়ে ৯টায় কমলাপুর স্টেশনে এসে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন আশ্বাস দেন, শনিবার (আজ) থেকে আর কোনো ট্রেনের যাত্রা বিলম্বিত হবে না।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ট্রেনে অতিরিক্ত যাত্রীদের ওঠানামা, স্টেশনে আসতে দেরি হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে কয়েকটি ট্রেন ছাড়তে দেরি হয়েছে। তবে এটা সূচি বিপর্যয় মানতে রাজি নন তিনি। ভোগান্তির জন্য যাত্রীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আগামীকাল (শনিবার) থেকে আর কোনো ট্রেন বিলম্বে ছাড়বে না। যে কটি ট্রেন আজ দেরি করে ছাড়তে হয়েছে, সেগুলোর দিকে আলাদা নজর দিয়ে নির্ধারিত সময়ে ছাড়ার ব্যবস্থা করা হবে।

রেলওয়ে খাতকে সরকারের আরো উন্নত করার পরিকল্পনা আছে জানিয়ে সুজন বলেন, আমাদের যেসব দুর্বলতা আছে সেগুলো কাটিয়ে ট্রেনের আরো উন্নতি করা হবে। আগামী কোরবানির ঈদে নতুন করে আরো চারটি ট্রেন যোগ হবে। এ সময় স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকা তারাকান্দিগামী অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস এবং পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেসের যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রী।

অগ্নবীণার যাত্রী ঢাকা ব্যাংকের কর্মকর্তা আল আমিন তাকে বলেন, আমাদের এলাকায় মাত্র দুটি ট্রেন যাতায়াত করে। কিন্তু যাত্রী বেশি হওয়ায় ধারণ ক্ষমতা থাকে না। আমাদের আরেকটা নতুন ট্রেনের ব্যবস্থা করা হোক।

এ সময় মন্ত্রী বলেন, আগামীতে ট্রেনের সুযোগ-সুবিধা পেছনের দিকে যাবে না, সামনের দিকে যাবে। আমাদের চেষ্টা থাকবে ট্রেনে উন্নত সেবা দেওয়ার। এরপর মন্ত্রী একই ট্রেনের যাত্রী বিসিএসআরের কর্মী আশরাফুল আলমের সঙ্গে কথা বলেন। আশরাফ জানান, তাদের দুটি ট্রেনের কোনোটিতেই এসি নেই। গরমে কষ্ট হয়। প্রতিমন্ত্রী তাকেও রেলেও উন্নত সেবার আশ্বাস দেন।

একতা এক্সপ্রেসের যাত্রী বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন, ট্রেনের এসি ও প্রথম শ্রেণির টিকেট স্টেশন ম্যানেজারের নিয়ন্ত্রণ থাকে। ফলে সাধারণ যাত্রীরা কিনতে পারে না।

মন্ত্রী সুজন এ অভিযোগের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তাকে। অভিযোগ জানাতে রেলওয়ে কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মোবাইল নম্বর সংবলিত একটি লিফলেটও তিনি যাত্রীদের হাতে বিতরণ করেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads