• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
স্বস্তির সঙ্গে আছে ভোগান্তিও

ছবি : সংগৃহীত

যোগাযোগ

ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিন

স্বস্তির সঙ্গে আছে ভোগান্তিও

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ০১ জুন ২০১৯

ঈদযাত্রায় দ্বিতীয় দিনের মতো বাড়ি ফিরেছেন ঘরমুখো মানুষ। গতকাল শুক্রবার সড়কে কোথাও কোথাও যানজটে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। আবার কোথাও এর লেশমাত্র ছিল না, স্বস্তিই ছিল। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

 

শেরপুর (বগুড়া):

ঈদযাত্রায় রাজধানী ছেড়ে আসতে শুরু করেছে উত্তরবঙ্গের মানুষ। তবে গতকাল যাত্রার দ্বিতীয় দিনে ঢাকা-বগুড়া-রংপুর মহাসড়কে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ।

সরেজমিন দেখা যায়, সিরাজগঞ্জ থেকে বগুড়া পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটারের ২০ কিলোমিটার রাস্তার বেহাল দশা। এখনো চলছে সংস্কারকাজ। সংস্কার আর খানাখন্দে সৃষ্টি হয় যানজট। সিরাজগঞ্জ জেলা থেকে বগুড়ার শহরতলী শেরপুর পর্যন্ত এ সংস্কারকাজ চলছে। ফলে গাড়ি চলছে থেমে থেমে।

অন্যদিকে খানাখন্দ মাড়িয়ে যানবাহন চলাচলে চালকদের যেমন ভোগান্তি হচ্ছে, ঠিক তেমনি যাত্রীরা সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছতে পারছেন না। রাস্তা সংস্কার আর মেরামতের কারণে জায়গায় জায়গায় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে রাস্তায় রয়েছে মৃত্যুঝুঁকিও। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার বগুড়ার শেরপুরের ছোনকা নামক স্থানে একটি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে যাত্রীবাহী শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসের সাথে ট্রাকের সংঘর্ষ হয়। এতে বাসের কিছু না হলেও ট্রাকচালক নিহত হন।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ওপর দিয়ে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক খুব একটা প্রশস্ত নয়। এই রাস্তায় চালকদের মধ্যে ওভার-টেকিং করার প্রবণতা বেশি থাকে। তাছাড়া রাস্তার দুই পাশে অবৈধ স্থাপনা সড়কটিকে আরো সরু করে দিয়েছে। যার ফলে এই মহাসড়কের এই অংশে যানজট লেগেই থাকে।

অন্যদিকে দুই লেনের রাস্তার মাঝখানে নামেমাত্র রোড ডিভাইডার দিলেও সেটি কোনো কাজে আসছে না। রিকশা, সিএনজি চালিত অটোরিকশা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না।

শেরপুরে স্থানীয় বাসিন্দা ফজলুল করিম বলেন, প্রতিবছরই ঈদকে কেন্দ্র করে এখানে তীব্র যানজট হয়। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে যানজট ও দুর্ঘটনা রোধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। যার ফলে শেরপুর বাজার থেকে বগুড়া ১০ কিলোমিটার দূরত্ব হলেও ঈদকেন্দ্রিক যানজটে দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্তও সময় লাগে। যে যানজট বগুড়া-রংপুর মহাসড়ক পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।

শ্যামলী পরিবহনের গাড়িচালক সোলায়মান আলী বলেন, সরু রাস্তার দুপাশ ডিভাইডার দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। সেখানে একটা গাড়ি চালানোই কঠিন। এর মধ্যে অনেকে গাড়ি অতিক্রম করতে চায়। ফলে দুর্ঘটনা ঘটে। এই বগুড়া-রংপুর মহাসড়কে দুর্ভোগ হবেই। কেননা দুর্ভোগ যেন না হয়, এমন ব্যবস্থা করা হয় না কখনো।

একই বিষয়ে এসআর পরিবহনের মতিয়ার হোসেন বলেন, দুর্ভোগ বা দুর্ঘটনা এড়াতে ঈদকেন্দ্রিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। নিলে এই যানজট হতো না।

 

যানজটমুক্ত টঙ্গী-কোনাবাড়ি সড়ক

গাজীপুরের টঙ্গী থেকে কোনাবাড়ি পর্যন্ত সড়ক যানজটমুক্ত রয়েছে। ঈদের আগে সাধারণত এই সড়কে যানজট লেগে থাকে। তবে এবার সড়কটিতে নির্বিঘ্নে চলছে যানবাহন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে উড়াল সেতু চালু হওয়া, ঈদ উপলক্ষে মহাসড়কে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখা ও যানজট নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তৎপরতার কারণে এমনটি সম্ভব হয়েছে।

আজ শনিবার ও আগামীকাল রোববার এ এলাকার পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হলে, যানজট হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন যানবাহনের চালক, যাত্রী ও স্থানীয়রা। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সচেতন থাকলে, যানজট ভয়াবহ রূপ নেবে না বলেও মনে করছেন তারা।

সরেজমিন দেখা গেছে, টঙ্গী থেকে জয়দেবপুরের চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত চালক ও যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে কাজ করে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই ১২ কিলোমিটার সড়কের বোর্ড বাজার, চেরাগআলী, বড়বাড়ি, এরশাদ নগর, স্টেশন রোড এলাকায় পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের কর্মীরা কাজ করছেন। ঈদ উপলক্ষে মহাসড়কের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখা হয়েছে।

গাজীপুরের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আরিছুর রহমান জানান, সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত ও যানজটমুক্ত রাখতে অতিরিক্ত এক হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তাছাড়া সিসিটিভি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ার, কন্ট্রোল রুম ও জেলা সিভিল সার্জন অফিস থেকে ভ্রাম্যমাণ প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

গাজীপুর মেট্রোর ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এসএসপি) থোআই অংপ্রু মারমা জানান, এবার লম্বা ছুটির কারণে মহাসড়কে চাপ পড়বে না। চালক ও যাত্রীদের যেকোনো ধরনের ভোগান্তি এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রয়েছেন।

বিনিময় পরিবহনের চালক ইসমাইল হোসেন বলেন, চন্দ্রার মোড়টি প্রশস্ত করায়, এবারের ঈদে যানজট কম হবে। তাই চালক ও যাত্রীদের মধ্যে আগাম যানজটের ভয় নেই বললেই চলে।

এদিকে, সড়কে ভোগান্তি এড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন। টঙ্গী থেকে গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কে বিআরটি প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের নির্বিঘ্নে যাতায়াত করা এবং রাস্তার কারণে যেন কোনো যানজট সৃষ্টি না হয়, সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিশেষ নজর রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন সিটি মেয়র অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম।

মেয়র বলেন, ঈদকে সামনে রেখে সড়কে যানজট নিরসন, গার্মেন্ট শ্রমিকদের সময়মতো বেতন ভাতা পরিশোধ, তাদের ছুটি দেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইতোমধ্যে যৌথ সমন্বয় সভা করেছে। ঈদে ঘরমুখো মানুষকে গন্তব্যে পৌঁছানোই গাজীপুর সিটি করপোরেশেনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রধান কাজ।

মেয়র আরো বলেন, ঈদের তিন দিন আগে মহাসড়কে সব ধরনের ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চলাচল বন্ধ থাকবে। সড়ক সচল রাখার জন্য পর্যাপ্ত লোকবল সড়কে থাকবে। টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত মহাসড়কে যেসব স্থানে খানাখন্দ রয়েছে, তা যত দ্রুত সম্ভব মেরামত করা হবে। সড়কের দুই পাশে পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনগুলো পরিষ্কার করতে হবে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম রাহাতুল ইসলাম বলেন, এই সড়ক দিয়ে ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা জেলার লোকজন নিয়মিত চলাচল করেন। তাদের যেন দুর্ভোগ পোহাতে না হয়, সেদিক লক্ষ রেখেই আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার থেকে সড়কে যানজট নিরসেনে আমরা কাজ করছি।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলার যানবাহন চলাচল করে। পাশাপাশি এই সড়ক দিয়ে গাজীপুরের শিল্প এলাকার শত শত যানবাহন ও হাজারো মানুষ যাতায়াত করে। ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলে যাতায়াতের একমাত্র পথ কালিয়াকৈরের চন্দ্রা।

 

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে স্বাভাবিক যান চলাচল

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল করেছে। এ রুটে কোনো যানজট নেই। তাই ঈদ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে উত্তরবঙ্গের মানুষ স্বস্তিতেই বাড়ি ফিরতে পারছেন।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে টাঙ্গাইল অংশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে কোথাও যানজট দেখা যায়নি। তবে ভোরে কিছুটা যানজট হলেও পুলিশ প্রশাসনের চেষ্টায় দ্রুতই তা স্বাভাবিক হয়। কর্মস্থলে কাজ শেষ করে ঈদের ছুটিতে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকেই অনেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন।

বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোশারফ হোসেন বলেন, মহাসড়কের কোথাও যানজট নেই। গাড়ি স্বাভাবিক গতিতেই চলাচল করছে। আশা করি, এবার ঘরমুখো মানুষ স্বস্তিতেই বাড়ি ফিরতে পারবেন।

 

ঢাকা থেকে তিন ঘণ্টায় ফেনী

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা অংশের মহাসড়কজুড়ে যানজটের সেই চেনা রূপ এখন আর দেখা যায় না। এই মহাসড়কে যেসব যাত্রী কুমিল্লা, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ফেনী এবং চট্টগ্রাম রোডে যাতায়াত করতেন ইতোমধ্যে তাদের চোখে মুখে স্বস্তির হাসি ফুটেছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মেঘনা ও গোমতী সেতু দুটি উদ্বোধনের পর মহাসড়কের দৃশ্যপট অনেকটা পাল্টে গেছে। গতকাল শুক্রবারও যানজটের সেই চিত্র নেই। সেতু দুটি উদ্বোধনের পর নির্বিঘ্নে যানবাহন চলাচল করতে পারছে। ফলে মহাসড়কের এই অংশে আর কোনো যাত্রীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে না।

স্থানীয় সূত্রমতে, জাতীয় এ মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩৫ হাজারেরও বেশি বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করে। আর এ বিপুল সংখ্যক যানবাহন গোমতী-মেঘনা সেতুর টোলপ্লাজা অতিক্রম করতে গিয়ে যানজটের কবলে পড়ত। নিত্যদিনের যানজটের কারণে মহাসড়কটি মহাভোগান্তিতে রূপ নিয়েছিল বিগত প্রায় পাঁচ থেকে ছয় বছর।

গাড়িচালক মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, এ চার লেনের সেতু চালু হওয়ার ফলে আমরা ও যাত্রীরা যানজটের অসহ্য ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেয়েছি।

কুমিল্লার যাত্রী মো. আবুল হোসেন বলেন, এ সড়কে যানজটের ভয়ে ঢাকাতে থেকে অফিস করতে হয়। আশা করছি এখন প্রতিদিন বাড়ি থেকে অফিস করতে পারব। আর ঈদের সময়টাতে এই সড়কে চলাচলকারী যাত্রীরাও নির্বিঘ্নে গন্তব্যে যেতে পারবে।

নিয়মিত যাত্রী ওয়াজ করনী বলেন, আগে ফেনী থেকে ৪-৫ ঘণ্টায় ঢাকায় যাওয়া যেত। গত ৫-৬ বছর ধরে যানজটের কারণে তা ৮-১০ ঘণ্টা লেগে যেত। এখন সেখানে সময় লাগছে মাত্র ৩-৪ ঘণ্টা। সত্যিই অবাক লাগছে। অনেক ভালো লাগছে।

গজারিয়া হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ কবির হোসেন বলেন, মেঘনা-গোমতী সেতু দুটি চালু হওয়ার পর মহাসড়কের গজারিয়া অংশে যানজট শূন্যের কোটায়। আশা রাখি কোনো সমস্যা হবে না। ঈদ উপলক্ষে আমাদের অনেক ভালো প্রস্তুতি রয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads