• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
তুলাতলী-মেরিন ড্রাইভ সংযোগ সড়ক উন্নয়নে অবহেলা

স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও তুলাতলী সড়কের উন্নয়নের দেখা মিলেনি টেকনাফ সদর ইউনিয়নের সাগর উপকুলীয় তুলাতলী এলাকার কাঁচা রাস্তাটি।

ছবি : বাংলাদেশের খবর

যোগাযোগ

তুলাতলী-মেরিন ড্রাইভ সংযোগ সড়ক উন্নয়নে অবহেলা

  • টেকনাফ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১০ জুন ২০১৯

সরকার আসে সরকার যায়, জনপ্রতিনিধিরা উন্নয়ন আশ্বাসের বাণী ছড়ায়। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও তুলাতলী সড়কের উন্নয়নের দেখা মিলেনি। বলতে গেলে ঐ সড়কের রয়েছে এক করুন কাহিনী। এ সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে গ্রামীণ অবকাটামো উন্নয়নমহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও অবহেলিত রয়ে গেছে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের সাগর উপকুলীয় তুলাতলী এলাকার কাঁচা রাস্তাটি।

স্বাধীনতা পরবর্তী এখানে কোন ধরনের দৃশ্যমান উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। নির্বাচনোত্তর প্রার্থীরা (জনপ্রতিনিধি) উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসে আর যায়। কিন্তু এ জনগুরুত্বপূর্ন রাস্তাটির উন্নায়নের তেমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বর্তমান সরকার পর পর তিন বার ক্ষমতায় আসলেও নির্বাচিত জন প্রতিনিধিদের প্রতিশ্রুত তুলাতলীর রাস্তাটি উন্নয়নে কোন উদ্যোগ গ্রহন করেনি। অথচ ওই গ্রামের দৈনিক প্রায় এক হাজার লোকের চলাচলের রাস্তাটি বঙ্গোপসাগরে মৎস আহরন এবং স্থাণীয় উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের তরিতরকারী বাজারজাত করনে একমাত্র মাধ্যম এ রাস্তাটি উন্নয়ন না হওয়ায় জনগণ ও ব্যবসায়ীরা দূর্ভোগের শিকার হয়ে আসছে। উল্লেখ্য যে, অন্যান্য ইউনিয়নের গ্রামীণ অবকাটামো খাতে উন্নয়নের জোয়ার হলেও তুলাতলী নামক রাস্তাটি যুগযুগ ধরে অবহেলিত রয়েছে।

বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও এখানে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। পূর্ব-পশ্চিম এ রাস্তটি হচ্ছে স্থানীয় আজলের দোকান হতে মরহুম মাওলানা আবদুল মজিদের বাড়ির সামনে হয়ে সোজা বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন মেরিনড্রাইভ পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রায় পৌনে দুই কিলোমিটার রাস্তাটির দৈর্ঘ্য। এটি দ্রুত বাস্তবায়ন হলে দেশীবিদেশী পর্যটকেদর চলাচল সহজ হয়ে ঊঠবে। তাই রাস্তাটি উন্নয়ন ও সংস্কার করে বর্ষা মৌসুমে জনদুর্ভোগ কমাতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন স্থানীয়রা। তা ছাড়া চলতি বর্ষা মৌসুমে রাস্তাাটি উন্নয়নের আওতায় না আনলে মানুষের চলাচলে দুর্দশা চরমে পৌঁছবে বলে আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।

এছাড়া রাস্তাটি উন্নয়ন হলে সাগরে মৎস্য আহরণ, কৃষকদের যাতায়াতে সহজতর হবে। ফলে মানুষের প্রয়োজনীয় ক্ষেত খামারের তরি তরকারি ও মৎস্য বিক্রির জন্য দ্রুত সময়ে বাজারে পৌঁছতে পারবে। এতে শ্রমজিবী মানুষের আয় বাড়ার পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভুমিকা পালন করবে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়া।

ভূক্তভোগী এলাকাবাসী জানায়, স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা ভোট প্রার্থনা করতে এসে জনগুরুত্বপূর্ণ ওই রাস্তাটি উন্নয়নণে প্রতিশ্রুতি দেয় । পরবর্তীতে কোন নেতা, চেয়ারম্যান-মেম্বাররা ওই রাস্তাটির উন্নয়নের ব্যাপারে খোঁজখবর রাখেনা।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত অর্থবছরে কর্মসৃজন প্রকল্পের আওতায় মাটি ভরাট করলে ও গেল বর্ষা মৌসুমে এটি তলিয়ে যায়। এবং রাস্তার বিভিন্নস্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়ে জনসাধারণের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

স্থানীয় অনেকে অভিযোগের সুরে বলেন , আঞ্চলিক রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের কারনের এমনটি হচ্ছে। এই গ্রামের আস-পাশের অনেক রাস্তা পাকা হয়ে গেছে, কিন্তু এ রাস্তাটি অদৃশ্য কারনে উন্নয়ন হয়নি আজোও। এতে করে এলাকার কয়েক হাজার মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন । তারা আরো বলেন, এই ইউনিয়নের অন্যান্য ওয়ার্ডের রাস্তা সমূহ উন্নয়নে এলাকার সৌন্দর্য বেড়েছে। অথচ এ জনগুরুত্ব পুর্ন তুলাতলীর প্রাচীন রাস্তাটি নিয়ে জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তেমন মাথা ব্যাথা নেই।

এদিকে ওই এলাকার স্থানীয় ব্যক্তি মাওলানা অলি হোছাইন, যুবলীগ নেতা নুরুল কবির, আবদুচ্ছলাম, নুরুল হকসহ অনেকে জানান, বর্ষা মৌসূম এলেই রাস্তাটি সামান্য বৃষ্টিতে গলা ও কোমর পরিমান পানি চলাচল থাকে। যার কারনে চাকুরীজীবি, মাদরাসা, স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে রাস্তায় পানি ও কাঁদায় একাকার হয়ে যায়। তাই বর্ষা মৌসূমে একপ্রকার পানিবন্দী জীবন কাটাতে হয় এলাকাবাসীর।

তারা আরো বলেন, বর্ষা মৌসূম এই এলাকার কেউ মৃত্যুবরন কারীকে কবরস্থানে নেওয়া এবং অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে উপজেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে চিককিৎসা করাতে চরম ভোগান্তিতে পোহাতে হয়। ওই গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩টি জামে মসজিদ ও ফোরকানিয়া এবং নূরানী মাদরাসাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। রাস্তার উন্নয়ণ না হওয়ায় মুসল্লি ও শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়ে থাকে।

স্থানীয় সমাজ ও সংবাদকর্মী মুহাম্মদ জুবাইর জানান, রাস্তাটির উন্নয়ন খুবই প্রয়োজন। এটি উন্নয়র হলে প্রচুর রাজস্ব আয় ও জনসাধারণের কষ্ট অনেকটাই কমে আসবে। বর্তমানে রাস্তাটি বালুমাটি এবং অনেকাংশ ঝোপ জঙ্গলে পরিণত হওয়ায় দিনের বেলায়ও রাস্তা দিয়ে চলাচলে ভীতিকর অবস্থায় পড়তে হয়। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে টিলা ও বৃষ্টির পানি ঐ রাস্তা দিয়ে চলাচলের কারণে হাঁটু, কোমর পরিমাণ পর্যন্ত পানি জমে থাকে। ফলে জনসাধরণকে পড়তে হয় দুর্ভোগে। বিশেষ করে মহিলাদের কষ্ট আরো বেড়ে যায়।

সমাজসেবক মোস্তাক আহমদ জানান, বর্ষায় পানি চলাচল ও শুকনা মৌসুম ঝুপড়ি থাকায় অনেক কষ্ট হয়। রাস্তাটি সংস্কার না করায় এলাকার মানুষ খুব কষ্টে রয়েছেন। বর্ষার সময় বৃষ্টির পানি জমে চলাচলে একদম অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তাই রাস্তাটির উন্নয়ন নিতান্ত জরুরি।

স্থানীয় মেম্বার শাহ আলম জানান, সড়কটি উন্নয়নের জন্য বড় বাজেট প্রয়োজন। এর উন্নয়নে সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে।

এব্যাপারে এলাকাবাসীরা স্থানীয় সাংসদ শাহীন আক্তার ও টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আলমের দৃষ্টি আকর্ষন ও হস্তক্ষেপ করেছেন এলাকাবাসী ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads