• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
পদ্মা সেতুর সর্বশেষ পাইল বসানোর কাজ চলছে

পদ্মা সেতু

ফাইল ছবি

যোগাযোগ

পদ্মা সেতুর সর্বশেষ পাইল বসানোর কাজ চলছে

  • বাসস
  • প্রকাশিত ১৪ জুলাই ২০১৯

পদ্মা সেতুর সর্বশেষ পাইল বসানোর কাজ চলছে। মূল সেতুর ২৬ নম্বর খুঁটির (পিলার) ৭ নম্বর পাইলের টপ সেকশনের পাইল স্থাপন আজ রোববার বেলা ১১ টা ৩৫ মিনিটের দিকে শুরু হয়। গতকাল শনিবার সেতুর সর্বশেষ পাইলটি ড্রাইভ করার কথা থাকলেও বৈরি আবহাওয়ার কারণে তা সম্ভব হয়নি।

সেতু প্রকল্পের দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, সাধারণত ৬ থেকে ১০ ঘন্টার মত সময় লাগে। তবে এ পাইলটি ড্রাইভ করতে একটু বেশি সময় লাগছে। সব কিছু ঠিক থাকলে রোববার রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে এই পাইল ড্রাইভ সম্পন্ন হবার কথা রয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পাইল ড্রাইভ চলছিল। এর মধ্যদিয়ে পদ্মা জয় হয়েছে। এটির কাজ শেষ হলে পদ্মা সেতুর ২৯৪টি পাইলই বসানো সম্পন্ন হবে।

প্রবল স্রোত আর বৈচিত্রময় নদীর মাটির তলদেশের চ্যালেঞ্জ জয় করে সেতুর ভীত তৈরির মূল কাজটি সম্পন্ন হলো। তাই পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

প্রকল্প এলাকায় এখন আনন্দের ঢেউ। এই আনন্দ শুধু দেশী-বিদেশী প্রকৌশলী, কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের মাঝেই নয়। আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে পদ্মার দু’তীরসহ সর্বত্র।

পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের বলেন,‘পদ্মা সেতুর বড় চ্যালেঞ্জের কাজটি সম্পন্ন হতে যাচ্ছে,এটিই হচ্ছে অনেক আনন্দের। সেতুর এই বিশাল পাইল ড্রাইভের কর্মযজ্ঞটি ছিল নানা চ্যালেঞ্জে ভরা। উত্তাল পদ্মাকে জয় করার এই প্রচেষ্টা সাফল্যে রূপ নিয়েছে।’

এর আগে, ২৬ নম্বর খুঁটির বাকি থাকা ৭ নম্বর পাইলের বটম সেকশনের কাজ সম্পন্ন করা হয়।

বুধবার বিকালে এই পাইলের নীচের অংশ সম্পন্ন হলে মাটি সরিয়ে সব ঠিকঠাক হওয়ার পর বৃহস্পতিবার থেকে টপ সেকশনের টিউবটি ওঠানো হয়। এরপর ওয়েল্ডিংয়ের কাজ শুরু হলেও বৃষ্টির কারণে ওয়েল্ডিংয়ের কাজে বিলম্ব হয়। সাধারণত ওয়েলডিংয়ে দুই দিন প্রয়োজন হয়। ওয়েল্ডিং শেষ হওয়ার পর এনডিটি টেস্ট করেই রোববার পাইল ড্রাইভ শুরু হয়।

মাওয়া কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডে চীন থেকে আসা স্টিল প্লেট দিয়ে পাইল তৈরি করা হয়েছে। ৩ মিটার পরিধির একেকটি পাইল ১২০ মিটার পর্যন্ত নদীর তলদেশে গিয়েছে। এক লাখ ৪০ হাজার ঘনমিটার পানি প্রতি সেকেন্ডে প্রবাহিত হয়ে থাকে পদ্মা দিয়ে। কিন্তু পাইল ড্রাইভ এমনভাবে করা হয়েছে, যেন পাইলের ওপর পিলার টিকে থাকে শত বছর।

নদীর গভীর তলদেশে নরম মাটির স্তর। কিন্তু পাইল বসাতে গিয়েই দেখা দেয় বিপত্তি। তাই পদ্মা সেতুর নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরুর পরপরই মুন্সীগঞ্জের মাওয়া থেকে সরানো হয় শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে।
এরপর ধীরগতিতে পদ্মা সেতুর কাজ চলতে থাকলেও প্রায় অর্ধেকের বেশি পিলার (খুঁটি) নকশা চূড়ান্ত করা যাচ্ছিল না। গত বছরের শেষদিকে নকশা পুনর্বিন্যাস করার পর দ্রুতগতিতে প্রমত্তা পদ্মার বুকে বসতে থাকে একের পর এক পাইল।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পাইলগুলো বসানোর কাজ শেষ হলে এ বছরের মধ্যে চেষ্টা করা হবে সব ক’টি পিলারের নির্মাণ কাজ শেষ করতে। একই সঙ্গে স্প্যান বসানোর কাজও চলবে।

দায়িত্বশীল এক প্রকৌশলী জানান, নতুন নকশা চূড়ান্ত করার পর মূল সেতুর নির্মাতা চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি পাইল বসানোর কাজ শেষ করতে চলতি বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।

নকশা রি-ডিজাইনের পর এবারই প্রথম নির্ধারিত সময়ের প্রায় দু’ সপ্তাহ আগে পাইল বসানোর কাজ স¤পন্ন হলো। নকশা জটিলতার কারণে এর আগে পদ্মা সেতুর কোনও কাজই সময় মতো স¤পন্ন করা সম্ভব হয়নি।
৪২টি পিলারের ওপর ৪১টি ¯প্যানে গড়ে উঠবে পুরো পদ্মা সেতু। নির্মাণ কাজের শুরুতে মূল নদীর প্রতিটি পিলারে পাইলের সংখ্যা ছিল ছয়। আর দুই প্রান্তে ১ ও ৪২ নম্বর পিলারে ১২টি করে মোট ২৪টি পাইল ছিল প্রথম নকশায়। সব মিলিয়ে ৪২টি পিলারে পাইল ছিল ২৬৪টি। কিন্তু নদীর গভীর তলদেশে কাদামাটির স্তর থাকায় নতুন নকশা করতে হয়।

নতুন এ নকশায় ১ ও ৪২ নম্বর পিলারের ১৬টি করে মোট ৩২টি পাইল করা হয়। আর ২২টি পিলারে সাতটি করে মোট পাইল ১৫৪টি এবং ১৮টি পিলারে ছয়টি করে মোট ১০৮টি পাইল রাখা হয়। সব মিলিয়ে ২৯৪টি পাইলে ৪২টি পিলার থাকবে পদ্মা সেতুতে। এরমধ্যে ১৪টি ¯প্যান বসানোর পর পদ্মা সেতুর ২ হাজার ১০০ মিটার এখন দৃশ্যমান।

দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানান, পদ্মা সেতুর ৪২টি পিলারের মধ্যে ৩০টি পিলারের কাজ শেষ হয়েছে। এগুলো হলো ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৯, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১ ও ৪২।

চলতি ২০১৯ সালের মধ্যে বাকি ১২টি খুঁটির কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। সেতু প্রকল্পের সাথে জড়িতরা আশা করছেন ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads