• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
বিনাটিকেটের যাত্রী বেড়েছে, বেড়েছে লোকসান

ছবি : সংগৃহীত

যোগাযোগ

বিনাটিকেটের যাত্রী বেড়েছে, বেড়েছে লোকসান

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৬ জুলাই ২০১৯

ঢাকা শহরে যানজট নিয়মিত একটি বিষয়। এর ফলে মতিঝিল থেকে উত্তরা যেতে কয়েক ঘণ্টা সময় লেগে যায়। তবে আধা ঘণ্টায়ই মতিঝিল থেকে উত্তরা যাওয়া সম্ভব। অবশ্য এজন্য ট্রেনে যাতায়াত করতে হবে। ট্রেনে ৩০ থেকে ৩৫ মিনিটের মধ্যে কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর স্টেশনে পৌঁছানো যায়। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এভাবে ট্রেনে যাতায়াত করছেও। কিন্তু এত মানুষ নিয়মিত ট্রেনে যাতায়াত করলেও রেলওয়ে তাতে লাভবান হচ্ছে না। কারণ এসব যাত্রীর অধিকাংশই টিকেট কাটেন না। আবার যাত্রীরা টিকেট কাটতে চাইলেও অবকাঠামোগত কারণে সেটাও সম্ভব হয় না।

জানা গেছে, ঢাকা-বিমানবন্দর-গাজীপুর রুটে প্রতিদিন ৫৫টি ট্রেন চলাচল করে, যার মধ্যে ৩৪টি আন্তঃনগর ও ২১টি মেইল, ডেমু ও কমিউটার। এর মধ্যে শুধু ডেমু ও কমিউটার ট্রেনে টিকেট কাটার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু আন্তঃনগরে এই স্বল্প দূরত্বে টিকেটের ব্যবস্থা থাকলেও কাটার সুব্যবস্থা নেই। যাত্রীরা দীর্ঘপথের জন্য টিকেট কাটার লাইনে থাকেন। আর স্বল্প দূরত্বের যাত্রীরা যে ট্রেন পান, সেটাতেই ওঠেন। ফলে আগে থেকে তারা টিকেট কেটে রাখেন না। আর দীর্ঘপথের যাত্রীদের লাইনে স্বল্প দূরত্বের যাত্রীরা টিকেট কাটতে পারেন না বললেই চলে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর হয়ে গাজীপুর লাইনে লোকাল যাত্রীদের কাছ থেকে জুনে আয় হয়েছে ৪০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৪০ হাজার তাৎক্ষণিক টিকেট বিক্রি করে ১৮ লাখ টাকা আয় হয়েছে। মাসিক কার্ড বিক্রি করে পাঁচ হাজার যাত্রীর কাছ থেকে আয় হয়েছে প্রায় ২২ লাখ টাকা।

তবে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুরে আসা যাত্রীদের হিসাব আবার সম্পূর্ণ উল্টো। এক মাসে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত আসা যাত্রীদের কাছ থেকে রেলওয়ের আয় হয়েছে মাত্র চার হাজার টাকা। মানে বেশিরভাগ যাত্রীই টিকেট কাটেন না। এ প্রসঙ্গে কমলপুরের স্টেশন ম্যানেজার আমিনুল হক বলেন, এই পথে যাত্রীদের মধ্যে টিকেট কাটার প্রবণতা বেড়েছে। টিকেট কাটে না এমন মানুষের সংখ্যা খুব কম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেবল এই রুটে নয়- সারা দেশেই বিনা টিকেটে ট্রেনে যাতায়াত করছেন যাত্রীরা। নানা সময় বিভিন্ন জংশনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে এর প্রমাণ মিলেছে। এখানে কিশোরগঞ্জের ভৈরব স্টেশনের একটি চিত্র তুলে ধরা হলো। গত ১৩ জুলাই এই স্টেশনে অভিযান চালিয়ে ৬৯০ যাত্রীকে জরিমানা করা হয়, যারা টিকেট না কেটে ট্রেনে যাতায়াত করছিলেন। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর একই স্টেশনে বিনা টিকেটে ট্রেনে ওঠা ৭৫৮ যাত্রী ধরা পড়েন। তাদের কাছ থেকেও আদায় করা হয় জরিমানা। ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল অভিযান চলে দিনভর। আর সে সময় বিনা টিকেটের যাত্রীও ধরা পড়েন বেশি। সেদিন জরিমানার মুখোমুখি হন এক হাজার ৮০ জন যাত্রী।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের বিষয়ে জানতে চাইলে কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার আমিনুল হক বলেন, আগামীতে টিকেটের নজরদারিতে আরো আধুনিক পদ্ধতি আনার পরিকল্পনা হচ্ছে। কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর পথে প্রতিটি ট্রেনেই কিছু না কিছু আসন বরাদ্দ আছে। এই রুটের নিয়মিত যাত্রীর মাসে ৪৫০ টাকা দিয়ে কার্ডও কিনতে পারেন। এই কার্ড দেখিয়ে যতবার খুশি ট্রেনে যাতায়াত করা যায়।

এদিকে গত ১০ বছরে ঢাকা-গাজীপুর রুটে কিছু ডেমু ট্রেন চালু হলেও এর বেশকিছু এরই মধ্যে বসে আছে। তবে কিছু লোকাল ট্রেন এই রুটে চলে, কয়েকটি কমিউটারও যায়। আয় হয় মূলত এ থেকেই। যদি এখানে আলাদা লোকবল ও সুনির্দিষ্ট কাউন্টার থাকত, তাহলে এ খাত থেকে মাসে কয়েক কোটি টাকা আয় সম্ভব বলে জানান রেলওয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

ওই কর্মকর্তা আরো জানান, বিভিন্ন দেশে টিকেট কাটতে আলাদা বুথ থাকে। সেখানে নির্ধারিত টাকা বা পয়সা ফেললেই টিকেট বের হয়ে আসে।

যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক মনে করেন, যাত্রীদের টিকেট কাটতে বাধ্য না করার পেছনে রেলের কর্মীদের স্বার্থ জড়িত। তিনি বলেন, টিকেট কেটে রেলে চড়ার চেয়ে চেকারদের নগদ পয়সা দিয়ে চলা লাভজনক। টিটিরাও এটাকেই উৎসাহিত করেন। অর্থাৎ চুরির ক্ষেত্রে দু’পক্ষই উৎসাহী। রেলওয়েতে এই চক্র নিচ থেকে ওপর পর্যন্ত আছে বলেই আমরা মনে করি।

অন্যদিকে বিনাটিকেটে ট্রেনে যাতায়াত করার কারণে প্রতি বছরই বাড়ছে ট্রেনের লোকসান। বাংলাদেশ রেলওয়ের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০০৯-১০ অর্থবছরে রেলওয়ের লোকসান ছিল ৭৫৮ কোটি টাকা। পরের অর্থবছরে তা প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়ে হয় ১ হাজার ৮ কোটি টাকা। পরের বছর আবার ৫০ শতাংশ বেড়ে হয় এক হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। তবে ভাড়া বাড়ানোর পর ২০১২-১৩ অর্থবছরে লোকসান হয় ৮৮১ কোটি টাকা। পরের বছর তা কিছুটা কমে হয় ৮০৩ কোটি টাকা। এরপর আবার বাড়তে থাকে লোকসান। ২০১৪-১৫ সালে সরকারের ক্ষতি হয় ৯০০ কোটি টাকা। পরের বছর তা আরো বেড়ে হয় এক হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে লোকসান বেড়ে হয় এক হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। পরের বছর তা কিছুটা কমে দাঁড়ায় এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads