• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
তীব্র স্রোতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে ফেরি পারাপারে অচলাবস্থা

পদ্মা-যমুনা নদীতে তলিয়ে গেছে দৌলতদিয়ার ৬ নম্বর ফেরি ঘাটের পন্টুনে ওঠা নামার রাস্তা

ছবি: বাংলাদেশের খবর

যোগাযোগ

গোয়ালন্দে ৭ কিলোমিটার যানজট

তীব্র স্রোতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে ফেরি পারাপারে অচলাবস্থা

  • গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৮ জুলাই ২০১৯

পদ্মা-যমুনা নদীতে তীব্র স্রোতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌ-রুটে নৌযান চলাচলে প্রায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। প্রচণ্ড স্রোতের বিপরীতে ফেরিগুলো চলছে খুড়িয়ে খুড়িয়ে। চারটি ফেরি চলাচল করতে না পারায় বসিয়ে রাখা হয়েছে। যান্ত্রিক সমস্যায় সংস্কারে আছে রুটের সাতটি ফেরি। এতে ফেরির সংকটও দেখা দিয়েছে প্রকট আকারে।

এ সব কারণে গত কয়েকদিন ধরে এ রুটে যানবাহন পারাপার চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। উভয় ঘাটে নদী পারের অপেক্ষায় আটকে পড়ছে সহস্রাধিক যানবাহন। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা নাগাদ দৌলতদিয়া ঘাট থেকে গোয়ালন্দ রেলগেট পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার জুড়ে মহাসড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের। যানজটে আটকে পড়ে সহস্রাধিক যানবাহন। আটকে পড়া যাত্রী ও চালকরা সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ৩/৪ দিনেও নদী পার হতে পারছে না অপচনশীল পণ্যবাহী যানবাহন। ১/২ দিন ধরে আটকে থেকে কয়েকশ কাঁচামালবাহী ট্রাকের পণ্য পঁচতে/পাকতে শুরু করেছে। পাটুরিয়া ঘাটেও একই অবস্থা বিরাজ করছে।

বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া অফিস সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে পাটুরিয়া ঘাট থেকে যাত্রী ও যানবাহন বোঝাই করে রোরো ফেরি আমানত শাহ দৌলতদিয়া ঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। কিন্তু মাঝ নদীতে এসে তীব্র স্রোতের কারণে ফেরিটি আর সামনে এগুতে পারছিল না। এ অবস্থায় প্রায় ৪ ঘন্টা সেখানে ইঞ্জিন চালু রেখে ফেরিটি স্থির রাখতে পারলেও এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে ফের পাটুরিয়া ঘাটে ফিরে যায়। একইভাবে বেলা ১২টার দিকে রোরো ফেরি শাহজালাল পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়ার ৬নং ঘাটের কাছাকাছি আসলেও তীব্র স্রোতে শেষ পর্যন্ত ঘাটে ভিড়তে পারেনি। ওই ফেরিটিও ফের পাটুরিয়া ফিরে গিয়ে যাত্রী ও যানবাহন নামিয়ে দেয়। উদ্ধারকারী জাহাজের সহযোগিতায়ও ফেরি দুটিকে গন্তব্যে আনা সম্ভব হয়নি।

সূত্রমতে, তীব্র স্রোতের কারণে আগে থেকেই বন্ধ হয়ে আছে রোরো ফেরি খানজাহান আলী ও ইউটিলিটি ফেরি শাপলা-শালুক। এছাড়া রুটের ৫টি ফেরি প্রায় ১ মাস ধরে সংস্কারে আছে নারায়ণগঞ্জের ডকইয়ার্ডে। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত এ রুটে সচল ছিল মাত্র ১১টি ফেরি। কিন্তু ফেরিগুলোর নদী পার হতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ২-৩ গুণ সময় বেশী লাগছে। এভাবে ফেরি সার্ভিস চালু রাখা আমাদের জন্য খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। উভয় পারে অসংখ্য গাড়ী আটকে পড়ে যাত্রী, চালকসহ সংশ্লিষ্ট সকলে প্রচণ্ড দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। কিন্তু প্রকৃতির উপর আমাদের কারো হাত নেই।

এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, পদ্মায় পানি বেড়ে দৌলতদিয়ার ৬নং ঘাটের পন্টুন নিমজ্জিত হয়ে গেছে। পন্টুনের র‌্যাম উচু হয়ে যাওয়ায় সেখান দিয়ে ঠিকমত যানবাহন ফেরিতে উঠতে পারছে না। ঘাট মেরামতের দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লিউটিএ’র দায়িত্বশীল কাউকেই সেখানে দেখা যায়নি। এ সময় সেখানে উপস্থিত গোয়ালন্দের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবগত করলে তাদের কর্মীরা এসে ফেরির র‌্যাম ও নিমজ্জিত রাস্তায় বালু ও খোয়া ফেলে উচু করার কাজ শুরু করে।

এ ব্যাপারে গোয়ালন্দের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, দৌলতদিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘাট। অথচ এখানে বিআইডব্লিউটিএ’র কোন অফিস বা স্থায়ীভাবে কোন কর্মকর্তা থাকেন না। ফলে জরুরী মুহুর্তে তাদের অনুপস্থিতিতে জনদুর্ভোগ বেড়ে যায়। আমি বিষয়টি বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমোডর মোজাম্মেল হোসেনকে এ বিষয়ে অবগত করেছি।

বরিশাল থেকে আসা গোল্ডেন লাইন পরিবহনের চালক মিজানুর রহমান বলেন, তিনি বুধবার মধ্যরাতে দৌলতদিয়া আসেন। প্রায় ২০ ঘণ্টা ধরে দীর্ঘ সিরিয়ালে আটকে আছি। যাত্রী ও তারা সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তবে কিছু কিছু যাত্রী লঞ্চ ও ফেরিতে নদী পার হয়ে গেছে।

যশোর থেকে আসা কলা, পিয়াজ, কাচা মরিচ বোঝাই ট্রাক চালক আ. জলিল, রহমান মিয়া, লুৎফর রহমানসহ কয়েকজন জানান, দুদিন ধরে মহাসড়কেই দাঁড়িয়ে আছি। প্রচণ্ড রোদ ও গরমে কাঁচা পণ্যগুলো পাকতে ও পঁচতে শুরু করেছে। দ্রুত পণ্যগুলো গন্তব্যে পৌছাতে না পারলে ব্যাপক ক্ষতি হবে।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া অফিসের ব্যবস্থাপক আবু আব্দুল্লাহ রনি জানান, রুটে চলাচলকারী ১৫টি ফেরির মধ্যে তীব্র স্রোতের কারণে ৪টি ফেরি চলাচল করতে পারছে না। অন্য ফেরিগুলো ট্রিপে অতিরিক্ত সময় লাগায় ঘাট এলাকায় যানবাহনের সিরিয়ালের সৃষ্টি হয়েছে। তবে মানুষের দূর্ভোগ কমাতে যাত্রীবাহী যানবাহনগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে।

পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার বিষয়ে তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পচনশীল পণ্যবাহী কিছু ট্রাক বাসের সাথে দেওয়া হচ্ছে।

তিনি জানান, মেরামতে থাকা রুটের ৫টি ফেরি আগামী সপ্তাহে রুটে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads