• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯
ষড়যন্ত্র না হলে ২০১৩ সালে শেষ হতো পদ্মা সেতুর কাজ

ছবি : সংগৃহীত

যোগাযোগ

ষড়যন্ত্র না হলে ২০১৩ সালে শেষ হতো পদ্মা সেতুর কাজ

ষড়যন্ত্রের শিকার সৈয়দ আবুল হোসেন

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ২১ জুলাই ২০১৯

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়চেতা মনোভাব ও উদ্যোগে আজ পদ্মা সেতু দৃশ্যমান। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকার পদ্মা সেতু নিয়ে প্রথম মেয়াদে যেভাবে পরিকল্পনা নিয়েছিল সেটি সম্ভব হলে, ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতু চালু হতো। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে সেই উদ্যোগ ভেস্তে গেছে। ফলে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্থনীতি। নির্ধারিত সময়ে পদ্মা সেতুর নির্মাণ শেষ করা গেলে মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার আরো প্রায় এক শতাংশ বেড়ে যেত 

ষড়যন্ত্রের বড় শিকার হয়েছেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। তিনি ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে সৈয়দ আবুল হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আমি কোনো অন্যায় ও অসত্যের সঙ্গে কখনো আপস করিনি। বিশ্বব্যাংকের গ্লোবাল সার্চ, কানাডার আদালতের রায় এবং দুদকের নিবিড় তদন্তে আমার সম্পর্কে কোনো অনিয়ম খুঁজে পায়নি।

জানা যায়, পদ্মা সেতু নিয়ে ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলে আন্তর্জাতিক সংস্থা বিশ্বব্যাংক। সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন স্তরের দায়িত্বশীলরা অভিযোগ করেছেন, মিথ্যা, ভিত্তিহীন তথ্যে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণে অভিযোগ তোলে। যারা বাংলাদেশের উন্নয়নের বিরোধী তাদের একটি অংশ এ ষড়যন্ত্র করেছে। এতে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর শক্ত মনোবলে নিজেদের অর্থায়নে আজ পদ্মা সেতুর কাজ শেষ দিকে। আশা করা হচ্ছে, ২০২০ সালেই গাড়ি চলাচল করবে স্বপ্নের এই সেতু দিয়ে।

আরেক প্রশ্নের উত্তরে সৈয়দ আবুল হোসেন বলেন, ২০০৯ সালে আমি যখন যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব নিই, তখন পদ্মা সেতুর প্ল্যান ছিল না, চূড়ান্ত ডিজাইন ছিল না, অর্থের কোনো সংস্থান ছিল না, ছিল না কোনো দাতা সংস্থার কমিটমেন্ট। আমি দুবছরে প্রস্তুতিপর্ব শেষ করে ঠিকাদার নিয়োগ চূড়ান্ত করে নিয়ে এসেছিলাম। সেই ঠিকাদারই এখন পদ্মা সেতু নির্মাণ করছে। আমি যেভাবে পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে নিয়েছি, তাতে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতু চালু হতো। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে সেই উদ্যোগ ভেস্তে গেছে। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়চেতা মনোভাব ও উদ্যোগে আজ পদ্মা সেতু দৃশ্যমান।

বিশ্লেষকরা বলছেন, কথায় কথায় কাউকে দুর্নীতিবাজ বলা এখন মামুলি ব্যাপার। এটা অনুচিত এবং গুরুতর অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। মূলত কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেই প্রমাণিত না হওয়ার আগে দুর্নীতিবাজ বলা সঠিক নয়। ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা অভিযোগের কারণে অনেকের জীবন অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে। ভুক্তভোগীকে মানুষের কাছে, সমাজের কাছে হেয় হতে হয়, হেনস্তা হতে হয়।

আবুল হোসেনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠরা বলছেন, তিনি একজন কর্মোদ্যোগী মানুষ। ব্যক্তিজীবনে তিনি একজন সৎ ও পরোপকারী মানুষ। নিজস্ব অর্থায়নে এলাকার শিক্ষা প্রসারে তার অবদান কিংবদন্তি। এলাকার সংসদ সদস্য হিসেবে সততার সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন মানুষের সেবায় অনবদ্য এক উদাহরণ। যোগাযোগমন্ত্রী থাকাকালে তার হাত ধরে বাংলাদেশে মেগা প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন শুরু। তাকে মেগাপ্রকল্পের রূপকার বলা যেতে পারে। তিনি যোগাযোগমন্ত্রী হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন-ভাবনা যথাযথভাবে শুরু করেছিলেন। কিন্তু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্র সরকারের মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নে, দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সরকারকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করে। যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে টার্গেট করে সরকারকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চালায় এবং কতিপয় মিডিয়ার যোগসাজশে প্রাথমিকভাবে সফলও হয়। তিনি পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে মন্ত্রিত্বও ছাড়েন। কিন্তু বিশ্বব্যাংক শেষ পর্যন্ত অর্থ ছাড়ে সম্মতি দেয়নি। কিন্তু সম্প্রতি পদ্মা সেতুর কথিত দুর্নীতি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের করা মামলা কানাডার আদালতের রায়ে খারিজ হয়ে যায়। সৈয়দ আবুল হোসেনের সততা প্রমাণিত হয়। ‘সৈয়দ আবুল হোসেন একজন সৎ ও দেশপ্রেমিক’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ উক্তি সত্য হয়।

আসলে সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে পদ্মা সেতুর অনিয়ম ছিল একটি অজুহাত। এটি ছিল সরকারের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র। সৈয়দ আবুল হোসেন ছিলেন উছিলা মাত্র। প্রসঙ্গত এ সময় দেশীয় ষড়যন্ত্রকারীরা সৈয়দ আবুল হোসেনকে জনসমক্ষে বিতর্কিত করার জন্য মনগড়াভাবে নানা ইস্যুতে তাকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করে। সরকারকে নাজুক অবস্থায় ফেলার চেষ্টা করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- যোগাযোগমন্ত্রীর অফিস মেরামত, যোগাযোগমন্ত্রীর গাড়ি ক্রয়, কালকিনিতে বাড়ি নির্মাণ, সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরের মৃত্যুতে যোগাগযোগমন্ত্রীকে দায়ী এবং শহীদ মিনারে শিশুদের নিয়ে মানববন্ধন, দুটি পাসপোর্ট সংক্রান্ত বিষয়, আওয়ামী লীগ থেকে তার গায়েবি পদত্যাগপত্র, তার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জাল চিঠি- এসব অভিযোগ ছিল সরকারকে বিতর্কিত করার একটি প্রক্রিয়া। সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ছিল মিথ্যা। বিএনপির আমলে এসব অভিযোগ নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয় এবং সে সময় দুদক তদন্তে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। পরবর্তীতে ১/১১ সময় বারবার করা তদন্তেও এসব অসত্য অভিযোগের কোনো ভিত্তি না পাওয়ায় তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়।

জানা যায়, বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণে ‘প্রাকযোগ্যতা নির্ধারণী প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আনে এবং এ অভিযোগ তুলে তার বিরুদ্ধে সরকারের মধ্যে, দেশ ও বিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি করে। এর ফলে সৈয়দ আবুল হোসেন ক্ষতিগ্রস্ত হন এবং বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়। দেশ-বিদেশের আদালতে বিচার-সালিশ ও তদন্তের পর পদ্মা সেতু সংক্রান্ত বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ ও কানাডার আদালতের মামলা খারিজ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত কানাডার আদালতের মামলা চলেনি। অনেক ষড়যন্ত্র, অনেক সমালোচনা এবং অনেক পানি ঘোলা করার পর এবছর ২২ জানুয়ারি ‘প্রাপ্ত তথ্য ও রেকর্ডপত্রের আলোকে প্রমাণিত হয়নি বিধায় তা দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক পরিসমাপ্তির মাধ্যমে সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে পদ্মা সেতুসহ আনীত অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংকও তাদের ভুল বুঝেছে। তারা বিভিন্নভাবে ক্ষমাও চেয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads