• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
বন্যায় জামালপুরে রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি

জামালপুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ট্রেনলাইন

ছবি : বাংলাদেশের খবর

যোগাযোগ

বন্যায় জামালপুরে রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি

  • জামালপুর প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৫ জুলাই ২০১৯

বন্যার পানি নামতে শুরু করায় জেগে উঠছে রাস্তাঘাট। পানির প্রচণ্ড তোড়ে লন্ডভন্ড হয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে  জেলার বেশিরভাগ রাস্তাঘাট। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে দুর্গত এলাকার মানুষ। কোন কোন এলাকায় ভাঙা রাস্তার উপর স্থানীয়ভাবে তৈরি বাঁশের নড়বড়ে সাঁকোর উপর দিয়ে চলছে যাতায়াত।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জামালপুরে বন্যার পানি কমার সাথে বেশে উঠছে বিধ্বস্ত বাড়ি-ঘর ও রাস্তাঘাটের ধ্বংসস্তুপ। জামালপুর-সরিষাবাড়ি, মেলান্দহ-মাহমুদপুর, ইসলামপুর-গুঠাইল, দেওয়াগঞ্জ-সানন্দবাড়ি, সরিষাবাড়ি-তারাকান্দি, বকশীগঞ্জ-জামালপুরসহ অনেক রাস্তা ভেঙে বন্ধ রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। টানা ৭ দিনের বন্যায় পানির তোড়ে রাস্তা লন্ডভন্ড হওয়ায় ইসলামপুর, মেলান্দহ, সরিষাবাড়ি ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সদরের সাথে বেশিরভাগ ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। ওইসব ইউনিয়নে পৌঁছানো যাচ্ছেনা বন্যার্তদের ত্রাণ সামগ্রী। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে বানভাসি মানুষ। সাধারণ মানুষের দাবি রাস্তাঘাটগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যেই মেরামত করে তাদের দূর্ভোগ কমিয়ে আনবে বলে তাদের প্রত্যাশা।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় রেল লাইনের ৫০ ফুট এলাকার নিচের মাটি সরে ধসে গেছে (ওয়াস আউট)। এ কারণে ঢাকার সাথে দেওয়ানগঞ্জ সরাসরি আন্তঃনগর তিস্তা, ব‏হ্মপুত্রসহ এ পথে চলাচলকারী সব এখনো ট্রেন বন্ধ রয়েছে। এ পথে উত্তরাঞ্চলের গাইবান্ধার ফুলছড়ি, বুনারপাড়া কুড়িগ্রামের রৌমারি, রাজিবপুর, বকশীগঞ্জ, বাহাদুরাবাদে শতশত যাত্রী ট্রেনযোগে চলাচল করে। 

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দেওয়ানগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে ইসলামপুরমুখী রেললাইন দিঘলকান্দি ৩১নং রেল ব্রিজের পাশ  থেকে রেল লাইনের নিচ থেকে প্রায় ৫০ ফুট মাটি সরে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

আব্দুল আলিম জানান, ব্রিজ সংযোগ লাইনে ইঁদুরের গর্ত ছিলো। বন্যার পানি ঢুকে এবং বন্যার পানির চাপে রেল লাইনের নিচ থেকে মাটি সরে যায়।

আব্দুল গফুর জানান, রেলের কর্তৃপক্ষ আগে থেকে রক্ষণাবেক্ষণ করলে এ ঘটনা ঘটতো না। এ ব্রিজের সামান্য কিছু পশ্চিম দিকে গত বছর ওয়াস আউট হয়। এ বছর নতুন ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। নির্মিত ব্রিজটি বড় করে করলে বন্যার পানির চাপ থাকতো না।

জামালপুর রেলওয়ে সহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান জানান, আশা করি এ সপ্তাহের মধ্যে ট্রেন চলাচল উপযোগী করা হবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদারকি করছেন। একই অবস্থা জামালপুর-বঙ্গবন্ধু পূর্ব সেতু পর্যন্ত। এত লাইনের ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এড. মতিয়র রহমান তালুকদার স্টেশনের সহকারী জাহাঙ্গীর আলম জানান, রেলের উধর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে একটি তদারাকি টিম লাইন পরিদর্শন করছেন। খুব শীঘ্রই এ রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। 

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৭টি উপজেলার সর্বশেষ ৬২টি ইউনিয়ন ৮টি পৌর সভার মধ্যে ৭টি বন্যা কবলিত হয়েছে। সারা জেলায় ২২ লাখ ৯২ হাজার ৬শ ৭৪জন অধ্যাসিত  লোক সংখ্যার মধ্যে ৫ লাখ ৬২ হাজার ১শ ৮০টি পরিবারের রয়েছে তার মধ্যে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৫শ ৩০টি পরিবারের মোট ১২ লাখ ৮৩ হাজার ৭শ ৯০জন লোক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ৭ হাজার ২শ ৫০টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণরূপে এবং ৪৫ হাজার ৫শ ৮০টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১২ হাজার ৪৩টি নলকূপ এবং ৬১ হাজার ২৭টি ল্যাট্রিন বন্যার পানিতে তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১০.৭৫ কিঃমিটার সম্পুর্ণ এবং ৬০.৫০কিঃমিটার আংশিক পাকা রাস্তা এবং ১৭.২৫কিঃ মিটার সম্পূর্ণ এবং ২০০ কিঃমিটার আংশিক কাঁচা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ২৮টি ব্রীজ/কালভাটসহ প্রায় ২১কিঃমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৬শ ৮১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ১শ ৬৫টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা যায়, জেলায় বীজতলা, আখ, পাট, ভুট্টা, কাঁচা তরিতরকারিসহ ২৪ হাজার ২শ ১০ হেক্টর জমির ফসল আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, জেলায় ২২ হাজার ৪শ ৮৬টি পুকুরের মধ্যে বন্যা কবলিত হয়েছে ৮ হাজার ৪শ ২৫টি পুকুর ডুবে মাছ বেরিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাজারও মৎস্য চাষীরা। 

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত জেলায় ৯৮০ মেঃটন চাল এবং ১৭ লাখ ৩০ হাজার নগদ টাকা ত্রাণ বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ঈদ উপলক্ষে ভিজিএফ চাল ৫ হাজার ৮৯ মেঃটন বরাদ্দ দিয়েছেন যা ঈদের আগে বিতরণ করা হবে। এছাড়াও স্কুল-কলেজ, সরকারি-বেসরকারি অফিস, জিওএনজির পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনের ত্রাণ তহবিলে ত্রাণ সমগ্রী জমা করা হচ্ছে। এছাড়াও রান্না করার সুযোগ নেই, বাড়ি ঘরে অথৈই পানি। খেতে পারচ্ছে না, অনেকেই না খেয়ে দিন অতিবাহিত করছেন। এদের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জামালপুর সার্কিট হাউসে রুটি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।

সরিষাবাড়ির স্থানীয় বানভাসী মনিরুল ইসলাম, গেদা মিয়া, মনোহর আলী বলেন, সাধারণ মানুষের দাবি রাস্তাটি দ্রুত সময়ের মধ্যেই মেরামত করে তাদের চলাচলের উপযোগী করে দূর্ভোগ কমিয়ে আনার। শুধু রাস্তাঘাট নয় তাদেও বাড়ি-ঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান। 

মাদারগঞ্জের পরিবহন চালক আকমল হোসেন বলেন, পানির প্রচণ্ড তোড়ে লন্ডভন্ড হয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে জেলার বেশিরভাগ রাস্তাঘাট। ফলে আমরা গাড়ি চালাতে পারছি না। প্রায় বেকারই বলা চলে। রাস্তা-ঘাটগুলি যদি দ্রুত মেরামত করে দেয়া হয় তাহলে অনেকটা ভাল হতো আমাদের জন্য।

শিক্ষার্থী সুজন, বাবুল, কালাম, মানিক, রাশেদ, জামাল বললেন, জামালপুর কেন্দুয়া থেকে সরিষাবাড়ি যাওয়ার রাস্তাটি পানির তোড়ে ভেঙে যাওয়ায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের যাতায়াত করা খুবই কষ্ট হচ্ছে। এছাড়াও ১০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। যদি কেউ অসুস্থ্য হয়ে পড়ে তাকে ডাক্তারের কাছেও নেয়া যাচ্ছে না আমজাদ, ।

নির্বাহী প্রকৌশলী সড়ক ও জনপথ,জামালপুর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এবারের বন্যায় জামালপুর সড়ক বিভাগের প্রায় ৪০ কিলোমিটার রাস্তার ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে জামালপুর-সরিষাবাড়ি সড়কের ২০ মিটার সড়ক ধ্বসে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ রাস্তার ৫ কিলোমিটার এলাকা। বন্যার পানি নামা মাত্রই ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলো মেরামতের ব্যবস্থা করা হবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads