• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
নিম্নমানের সামগ্রী দিয়েই সড়ক সংস্কার!

ছবি : বাংলাদেশের খবর

যোগাযোগ

নিম্নমানের সামগ্রী দিয়েই সড়ক সংস্কার!

  • বামনা (বরগুনা) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৪ আগস্ট ২০১৯

বরগুনার বামনা উপজেলা সদরের গোলচত্ত্বর হয়ে রামনা ইউনিয়নের অযোধ্যা গ্রাম পর্যন্ত মোট আট কিলোমিটার সড়কটির নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে সংস্কার কাজ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বামনা উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানাগেছে, বামনা উপজেলা সদরের গোলচত্বর থেকে রামনা ইউনিয়নের অযোধ্যা গ্রাম পর্যন্ত মোট ৮ কিলোমিটার সড়কটি সংস্কার, ড্রেন নির্মাণ ও বর্ধিতকরণ কাজটি করার জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়ায় চুক্তিবদ্ধ হয় বরগুনার মেসার্স পলি কনষ্ট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। প্রায় ৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকায় সড়কটি সংস্কার ও প্রশস্ত করাসহ বামনা গোলচত্বর থেকে পূর্বসফিপুর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত বাজারের পয়ঃনিস্কাশনের জন্য ড্রেননির্মাণ প্রকল্পটি গত বছর জুন মাসে টেন্ডার আহবান করে বরগুনা নির্বাহী প্রকৌশলী অধিদপ্তর। তবে টেন্ডারের পরিপত্রে ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে কাজটি শুরু করা ও ৭ জুন ২০১৯ তারিখে শেষ করার বিধান থাকলেও তাদের সময়সীমা অতিবাহিত হবার পরেও সংস্কার কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের কোন অগ্রগতি নেই বলে জানিয়েছেন এলজিইডি দপ্তরের কর্মকর্তারা।

সরেজমিনে বামনা-খোলপটুয়া সড়কে গিয়ে দেখা গেছে, নিম্নমানের ইটের খোয়া(ম্যাকাডাম) দেওয়া হচ্ছে সড়কে। সামান্য হাত দিয়ে চাপ দিলেই ওই ম্যাকাড্যাম গুড়ো হয়ে যাচ্ছে। সড়কটির দুই পাশে বর্ধিত অংশে ইটদিয়ে যে এজিন নির্মাণ করা হয়েছে তার পাশে মাটি না থাকায় এজিন এর ইট আপনা আপনি হেলে পড়ে যাচ্ছে। টেন্ডার প্রক্রিয়ার সময় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে সড়কটি সংস্কারের প্রাক্কলনের যে শর্ত প্রদান করা হয়েছে তা কিছুই মানছেন না ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। সড়কের তিন ফুট করে বর্ধিত দুই পাশে দেড় ফুট গভীর বেড কাটলেও বেডে ৭ ইঞ্চি বালি ও বাকি ১১ ইঞ্চি বালির সাথে ম্যাকাড্যাম মিশিয়ে দেওয়া প্রাক্কলনে থাকলেও শুধু বালি দিয়ে বেড গুলো ভড়া হয়েছে। ফলে ওই সড়কটির দুই পাশ ডেবে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন, বামনা উপজেলা এলজিইডি অফিস, স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতৃবৃন্দ এই সড়কটি সংস্কারে নিম্নমানের সারঞ্জামাদী অপসারণ করার জন্য ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্টদের লিখিত ও মৌখিক অনুরোধ করলেও পলি কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধীকারী বাদশা মিয়া তা আমলে না নিয়ে নিম্নমানের সামগ্রী ও তার নিজের ইচ্ছে মত সংস্কার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এছাড়া সড়কটির সংস্কার কাজ নির্দ্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পরেও শেষ না হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই সড়কের পথচারীরা। বামনা গোলচত্ত্বর হয়ে পূর্ব সফিপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত সড়কটির এক পাশে বাজারের বর্জ্য অপসারণের জন্য একটি ড্রেন নির্মাণ কাজে বাঁধার সৃষ্টি হওয়ায় চলতি বর্ষা মৌসুমে সড়কের এই অংশে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হয়।

এ ব্যাপারে বামনা উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি মোশাররফ হোসেন জমাদ্দার বলেন, সড়কটি সংস্কারের কোন নিয়মই মানা হচ্ছেনা। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি টেন্ডারে কাজটি পাওয়ার পরে আমাদের দীর্ঘদিন এই কাজটি শুরুর জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। দেরিতে শুরু হলেও ভেবেছিলাম কাজটির মান ভালো হবে। কিন্তু তা না হয়ে নিম্নমানের ম্যাকাডাম দিয়ে এই সড়কটি সংস্কার কাজ শুরু করা হয়েছে। এই ম্যাকাডাম অপসারণ করে মানসম্মত সামগ্রী দিয়ে কাজটি শুরু করার দাবী জানান তিনি।

পলি কনস্ট্রাকশনের মালিক মো. বাদশা মিয়া জানায়, তিনি প্রাক্কলন অনুযায়ী সড়কটি সংস্কারের কাজ করছেন। প্রাক্কলনে কোন বালি দেওয়ার কথা না থাকায় সড়কের বর্ধিত অংশ ছাড়া কোথাও বালির ব্যবহার করছেন না। তিনি আরো জানান, এই সড়কে অন্তত ১০ স্থানের বৃষ্টিতে কাদার সৃষ্টি হয়েছে। সেই অংশ গুলোতে বেড কেটে বালি দিতে হলে প্রাক্কলন পরিবর্তন করে বরাদ্দ না বাড়ালে দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি জানান এই কাজটি শেষ করতে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। এই সড়কটি সংস্কার কাজে জড়িত অনেক শ্রমিককে প্রভাবশালীরা বিভিন্ন সময়ে মারধর করার অভিযোগ করেন।

বামনা উপজেলা প্রকৌশলী মীর আখতারুজ্জামান বলেন, নিম্ম মানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ পেয়ে কয়েকবার আমি নিজে গিয়ে সেগুলো অপসারণের নির্দ্দেশ দিয়েছি। কিন্তু ঠিকাদার তা অপসারণ না করে সংস্কার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। পরে তাকে গত ১ আগষ্ট লিখিত ভাবে চিঠি দিয়ে ওই সরবরাহ করা নিম্ম মানের সামগ্রী অপসারণ ও দ্রুত কাজটি শেষ করার তাগিত দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এবং তিন দিনের মধ্যে চিঠির জবাব চাওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ওই চিঠির কোন উত্তর আমার দপ্তরে পৌছায়নি।

এ ব্যাপারে জানতে বরগুনা এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী ফোরকান আহম্মেদ খানের সেল ফোনে একাধিক বার কল করা হলেও তিনি বারবার কলটি কেটে দেন।

বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাসানুর রহমান রিমন বলেন, কোন ভাবে নিম্ম মানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে এই গুরুত্বপূর্ন সড়কটি সংস্কার করতে পারবেনা। যদি সড়কের কোন স্থানের নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে থাকে তা দ্রুত অপসারণ করতে হবে। অনেকদিন ধরে ড্রেন নির্মাণ নিয়ে জটিলতা ছিলো তা এখন আর নেই তাই দ্রুত কাজটি শেষ করা না হলে ওই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads