• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
তীব্র স্রোত ও ভাঙনে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট

১নং ঘাট এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙনে রোধে চেষ্টা করছে

ছবি : বাংলাদেশের খবর

যোগাযোগ

তীব্র স্রোত ও ভাঙনে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট

# দুটি ঘাট পদ্মায় বিলীন #হুমকিতে অপর ৪টি

  • গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৫ অক্টোবর ২০১৯

পদ্মা নদীর ভয়াবহ ভাঙন ও তীব্র স্রোতে শনিবার সকালের দিকে দৌলতদিয়ার ১ ও ২নং ফেরিঘাট পুরোপুরি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে অপর ৪টি ঘাট। ওই ঘাটগুলো অফিসিয়ালি বন্ধ না হলেও স্রোতের তীব্রতা ৩, ৪ ও ৫নং ঘাটে কোন ফেরি ভিড়তে পারছে না। তীব্র স্রোতের কারণে শুক্রবার বেলা ১টা থেকে বন্ধ আছে রুটের লঞ্চ চলাচল।

আজ শনিবার দুপুরে দৌলতদিয়া ঘাট পরিদর্শনে আসেন বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমোডর এম মাহবুব উল ইসলাম। তিনি দৌলতদিয়া ঘাট এলাকার ভয়াবহ ভাঙন দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সেই সাথে মাত্র ২টি গ্রুপে শুধুমাত্র ১নং ঘাট এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিও ব্যাগ ফেলার কার্যক্রম দেখে হতাশা ব্যাক্ত করেন। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাজবাড়ী প্রকৌশলীকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, অতিসত্ত্বর অন্তত ১০-১২টি গ্রুপে সবগুলো ঘাট এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলুন। মাত্র একটি ঘাটে কাজ করা হলেও এটিও রক্ষা করা যায়নি। এ অবস্থায় অন্য ঘাটগুলোর দিকে নজর দেয়া দরকার।

ফেরি কতৃপক্ষ জানায়, তীব্র স্রোতের প্রতিকুলে রুটের রোরো (বড়) ফেরিগুলো চলতে পারছে না। সকাল থেকেই বেলা ২টা নাগাদ বড় ফেরিগুলো বাধ্য হয়ে বন্ধ রাখা হয়। রুটের মাত্র ৪টি ইউটিলিটি (ছোট) ফেরি দিয়ে কোনমতে সার্ভিস চালু রাখা হয়েছে। স্রোতের তীব্রতার সাথে লড়াই করে ইউটিলিটি ফেরিগুলো কোনমতে চলতে পারলেও রোরো ফেরিগুলো তাও পারছে না। ঘাটে আটকে থাকা কয়েক হাজার যানবাহন ও অসংখ্য যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে কর্তৃপক্ষ পূণরায় রুটের সবচেয়ে শক্তিশালী রোরো ফেরি গোলাম মওলা, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ও বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানকে চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। বিকেল সাড়ে ৪টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দৌলতদিয়া থেকে গোলাম মওলা ও হামিদুর রহমান ফেরি দুটি লোড নিয়ে পাটুরিয়ার উদ্যেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছিল। এর আগে পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে আসা ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান প্রাণপণ চেষ্টা করেও দৌলতদিয়ার ৬নং ঘাটে ভিড়তে পারছিল না। এর আগে বেশ কয়েকটি ফেরি এভাবে প্রায় এক-দেড় ঘন্টা চেষ্টার পরও ভিড়তে না পেরে পূণরায় পাটুরিয়ার উদ্যেশ্যে ফিরে যায়।

বিআইডব্লিউটিসি’র আরিচার এজিএম (মেরিন) আব্দুস সাত্তার জানান, ভয়াবহ ভাঙন ও তীব্র স্রোতের কবলে পড়েছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার অন্যতম প্রবেশদ্বার নৌপথ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট। ইতিমধ্যে ভাঙনের কবলে পরে বন্ধ হয়ে গেছে দৌলতদিয়ার ১ ও ২নং ফেরিঘাট। বাকি চারটি ঘাটে ফেরি ভিড়তে বেগ পেতে হলেও কোন রকমে সেখান দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। তবে ওই ঘাটগুলোও চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

এদিকে দৌলতদিয়ার ১ নম্বর ফেরিঘাট ও ২ নম্বর ফেরিঘাট এলাকায় সিদ্দিক কাজীর পাড়ায় শনিবার সকাল থেকে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। সেখানকার ফেরিঘাট দুটি বিলীনের পাশাপাশি ইতিমধ্যে নদী গর্ভে তলিয়ে গেছে সেখানকার শতাধিক ভিটে-মাটি। হুমকিতে আছে প্রায় ২০০ পরিবার। ভাঙন আতঙ্কে সকলে তাদের বসতভিটা ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিতে শুরু করেছে।

এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া গেজ স্টেশন পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি ৫ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানি কমার সাথে সাথে ভাঙনের তীব্রতা বাড়ছে।

বিআইডব্লিটিসি’র আরিচার জিএম জিল্লুর রহমান জানান, প্রবল স্রোত ও নদী ভাঙ্গনের কারণে রুটের ফেরি সার্ভিস ঠিক রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। রুটের ১৬টি ফেরির মধ্যে মাত্র ৪টি ইউটিলিটি ফেরি কোনমতে চলছে। বড় ফেরিগুলো স্রোতের বিপরীতে চলতে পারছে না। তবুও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। লঞ্চ বন্ধ থাকায় চলমান ফেরিগুলোতে যাত্রীদের প্রচন্ড ভীড় থাকায় যানবাহন তেমন একটা পার করা যাচ্ছে না। ফলে ঘাট এলাকায় ক্রমেই যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড রাজবাড়ীর প্রকৌশলী মোঃ সফিকুল ইসলাম জানান, হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দৌলতদিয়ায় তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে আমরা জরুরী ভিত্তিতে বালুর বস্তা ফেলার কাজ করে যাচ্ছি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads