• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

যোগাযোগ

মহাসড়কের ২১ স্থানে বসছে ওভারলোড নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১০ অক্টোবর ২০১৯

দেশের মহাসড়কগুলোতে পণ্যবাহী গাড়ির ওজন নিয়ন্ত্রণে ২১টি স্থানে বসানো হচ্ছে ‘এক্সেল লোড’। অতিরিক্ত মালবোঝাই গাড়ির কারণে রাস্তা নষ্ট, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঠেকাতে এই যন্ত্র বসানোর প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি একনেকে এ সংক্রান্ত এক হাজার ছয়শ কোটি টাকার প্রকল্প পাস হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, সড়ক ও জনপদ বিভাগ এটি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে অতিরিক্ত ওজনের গাড়ি নিয়ন্ত্রণসহ মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে দেশের মহাসড়কগুলোতে পণ্যবাহী ট্রাক ধারণক্ষমতার অনেক বেশি পণ্য বহন করে। সর্বোচ্চ ১০ টন মালামাল বহনের ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানগুলো অতিরিক্ত মুনাফার লোভে ২০-৩০ টন মালামাল বহন করছে। একাধিকবার এটি থামানোর চেষ্টা করেও সুফল আসেনি। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম, তামাবিল, মোংলাসহ বিভিন্ন মহাসড়কের ২১টি স্থানে রাস্তার প্রবেশমুখে বসানো হচ্ছে স্বয়ংক্রিয় মেশিন। ‘এক্সেল লোড’ নামে পরিচিত এই যন্ত্র অতিরিক্ত পণ্যবাহী গাড়িগুলোকে আটকে দেবে। ফলে নির্ধারিত ওজনের বেশি মালামাল নিয়ে গাড়ি রাস্তায় চলাচল করতে পারবে না। আর এতে রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার হার কমার পাশাপাশি সাশ্রয় হবে সড়ক মেরামত ব্যয়। সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্যমতে, বর্তমানে তাদের আওতাভুক্ত সড়ক রয়েছে ২১ হাজার ৩০২ কিলোমিটার। এসব রাস্তায় মালামালসহ সর্বোচ্চ সাড়ে ১৫ টনের গাড়ি চলাচলের কথা। কিন্তু ২০-৩০ টন ওজনের গাড়িও চলাচল করছে সড়কগুলোতে। সাধারণত সড়কগুলো ১০-২০ বছর আয়ুষ্কাল ধরে ডিজাইন করা হয়। কিন্তু অতিরিক্ত ওজনের গাড়ি চলার কারণে আয়ুষ্কালের অনেকে আগেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায় সড়ক। অতিমাত্রায় ওভারলোড ট্রাক ও লরি চলার কারণে সড়কে ক্ষতির পাশাপাশি ওভারলোডের কারণে ঘটছে দুর্ঘটনা এবং এতে জানমালেরও ক্ষতি হচ্ছে। এ জন্য পণ্য পরিবহনের উৎসমুখে সড়কের ২১টি স্থানে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র স্থাপনের জন্য সম্প্রতি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে জুলাই ২০১৯ থেকে জুন ২০২২ সাল পর্যন্ত। ১ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পর অনুমোদিত সীমার অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন রোধ করা যাবে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে পণ্য পরিবহনের উৎসমুখে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র স্থাপন হলে অনুমোদিত সীমার অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন করা যাবে না। এর ফলে সড়কগুলোর ক্ষতির হার কমানো যাবে।

তবে এ উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও খানিকটা দ্বিমত দেখিয়েছেন বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান ট্রাক ট্রেইলার শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি আব্বাস ফকির। পরিবহন খাতের এ নেতা বলেন, অনেক সময় দেখা যায়-ওজন সাড়ে ১৬ টন হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে কী হবে। মালিক কি এক টন পণ্য রেখে আসবে? এ বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে সরকারকে। অল্প কিছু মাল বেশি হলে যেন সেটা বহন করার অনুমতি দেওয়া হয়। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই, এটা ভালো উদ্যোগ।

এ প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বিষয়ে তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, খেয়াল রাখতে হবে, কেউ যাতে টেম্পারিং করতে না পারে। এমন সিস্টেম করতে হবে যাতে লোক থাকুক আর নাই থাকুক এর ওপর দিয়ে গাড়ি গেলেই যেন গাড়ির নাম, নম্বর, ওজন এবং বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। এসব তথ্য যেন কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো একটি জায়গা থেকে মনিটরিং করা হয়। এ ছাড়া ট্রাক বা কাভার্ডভ্যানগুলো যেন নির্দিষ্ট মাপের তুলনায় বেশি মালামাল না নেয়।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) পরিচালক অধ্যাপক ড. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, অতিরিক্ত ভারী যানবাহন চলাচলে রাস্তার ক্ষতির পাশাপাশি দুর্ঘটনা ঘটে। অনেক সময় ট্রাকে অতিরিক্ত পণ্যবোঝাইয়ের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পণ্য পরিবহনে শৃঙ্খলা আসবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

 

যেসব সড়কে বসবে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র

 

জাতীয় মহাসড়কের ঢাকা-কাঁচপুর-ভৈরব-জগদীশপুর-শায়েস্তাগঞ্জ-সিলেট-তামাবিল-জাফলং জগদীশপুর একমুখী; কুমিল্লার ময়নামতি-ব্রাহ্মণবাড়ীয়া মহাসড়কের ময়নামতিতে উভয়মুখী; দৌলতদিয়া-ফরিদপুর-মাগুরা-ঝিনাইদহ-যশোর-খুলনা-মোংলা মহাসড়কের মোংলা (দীগরাজে) একমুখী; কাশীনাথপুর-দাশুড়িয়া-নাটোর-রাজশাহী-নবাবগঞ্জ-কানসাট-সোনামসজিদ-বালিয়াদিঘি বর্ডার মহাসড়কে কয়লাবাড়ী (নবাবগঞ্জগামী) একমুখী; ঢাকার যাত্রাবাড়ী-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম-টেকনাফ মহাসড়কের কেরানীহাট এলাকায় একমুখী; রৌমারী-তুরা জেলা সড়কের তুরা এলাকায় রৌমারীগামীতে একমুখী এক্সেল লোড; ঢাকার মিরপুর-উথুলী-পাটুরিয়া-নটাখোলা-কাশীনাথপুর-বগুড়া-রংপুর-বেলডাঙ্গা-বাংলাবান্ধা। মহাসড়কের ভজনপুরে (পঞ্চগড়গামী) একমুখী এক্সেল লোড বসেব।

এ ছাড়া পানামা স্থলবন্দরের সামনে-হিলি এলজিইডি সড়কে হিলিতে একমুখী; নকলা-নালিতাবাড়ী-নাকুগাঁও জাতীয় মহাসড়কের শিমুলতলায় (নকলগামী) একমুখী; ফুলপুর-হালুয়াঘাট-তিনকুনি মোড় জেলা সড়ক গোবড়াকুড়ায় (ময়মনসিংহগামী) একমুখী, আলীপুর-ভোমরা স্থলবন্দর সংযোগের নওবাদকাঠীতে (সাতক্ষীরাগামী) একমুখী; সৈয়দপুর-নীলফামারী আঞ্চলিক সহাসড়কের কাজীরবাজারে উভয়মুখী, জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল-জামালপুর সহাসড়কের বড় ইছাপুরে (টাঙ্গাইলগামী) একমুখী; ফেনী-পরশুরাম-বিলুনিয়া জেলা সড়কের বিলুনিয়ায় একমুখী, চুয়াডাঙ্গা-দর্শনা-জীবননগর-কোর্ট চাঁদপুর-কালীগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের দর্শনায় উভয়মুখী, ঢাকার যাত্রাবাড়ী-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম-টেকনাফ মহাসড়কে বন্দর সংযোগ সড়কে (ঢাকাগামী) একমুখী; ঢাকার বনানী-জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মাস্টারবাড়ীতে (উভয়মুখী) এক্সেল লোড। এ ছাড়া ঢাকার যাত্রাবাড়ী-মাওয়া-ভাঙ্গা-বরিশাল-পটুয়াখালী জাতীয় মহাসড়কের রুহিতপুরে একমুখী এক্সেল লোড; ঢাকা যাত্রাবাড়ী-মাওয়া-ভাঙ্গা-বরিশাল পটুয়াখালী মহাসড়কের ভাঙ্গায় (ঢাকাগামী) একমুখী, ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম-সীতাকুণ্ড সড়কের দারোগারহাটে উভয়মুখী, শেওলা-সুতারকান্দি জেলা সড়কে সুতারকান্দিতে উভয়মুখী এক্সেল লোড বসবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads