• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
ঢাকায় নির্মিত হবে ২৩৮ কিমি পাতাল রেল

প্রতীকী ছবি

যোগাযোগ

ঢাকায় নির্মিত হবে ২৩৮ কিমি পাতাল রেল

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯

জাপানের ওসাকা শহরের অনুকরণে রাজধানী ঢাকার ২০ থেকে ২৫ মিটার মাটির গভীরে পাতাল রেল নির্মাণের পরিকল্পনা নিতে যাচ্ছে সরকার। এ প্রকল্পের আওতায় মোট ২৩৮ কিলোমিটার অংশের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং ৯০ কিলোমিটার অংশের প্রাথমিক নকশা প্রণয়ন করা হবে। এ লক্ষ্যে ‘ঢাকা শহরে সাবওয়ে (আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো) নির্মাণে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা (প্রথম সংশোধন)’ প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে সেতু বিভাগ। জানা গেছে, এর আগের ৯০ কিলোমিটার পাতাল রেল নির্মাণের উদ্যোগ থেকে সরে এসেছে সরকার। নতুন করে ৯০ কিলোমিটারের পরিবর্তে পুরো ঢাকায় ২৩৮ কিলোমিটার পাতাল রেল নির্মাণ করা হবে। ঢাকার মাটির ২০ থেকে ২৫ মিটার গভীরে পাতাল রেল ছড়িয়ে পড়বে জালের মতো। প্রথমে ঢাকার পাতাল রেল (সাবওয়ে) পথ নির্মাণের লক্ষ্যে চারটি রুট চিহ্নিত করেছিল সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। কিন্তু এখন চারটি রুটের পরিবর্তে ঢাকার মাটির নিচের একাধিক পাতাল রেল রুট নির্মাণ করা হবে। এজন্য প্রাথমিকভাবে ফিজিবিলিটি স্টাডি বা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্প সংশোধন করতে যাচ্ছে সরকার। ২২৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে এ সমীক্ষা পরিচালনা করার কথা থাকলেও ব্যয় বেড়ে ৩২২ কোটি টাকা হচ্ছে। ১৮ মাসের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে এ সমীক্ষা ২০২০ সালের এপ্রিলে শেষ হওয়ার কথা ছিল। এখন সমীক্ষা প্রকল্পের মেয়াদ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত।

প্রকল্পের আওতায় পাতাল রেলের অবস্থান, এলাইনমেন্ট ও দৈর্ঘ্য নির্ধারণ, জিওটেকনিক্যাল ইনভেস্টিগেশন ও ট্রাফিক সার্ভে পরিচালনার নকশা পরিবর্তনও করা হয়েছে। প্রাথমিক নকশা, ভূমি অধিগ্রহণ পরিকল্পনা ও আর্থিক বিশ্লেষণ করা হবে। এর পরেই বিশাল ব্যয়ের মেগা প্রকল্পটি গ্রহণ করবে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, যা বাস্তবায়ন করবে সেতু কর্তৃপক্ষ।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, ঢাকার যানজট নিরসনে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর স্টেশন এবং নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল ডিপো পর্যন্ত ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি (মাস র্যাপিড ট্রানজিট ) লাইন-১ নির্মাণ করা হবে। রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ উড়ালপথে এমআরটি-৬ নির্মিত হচ্ছে। এই দুটি মেট্রোরেলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই ঢাকায় পাতাল রেলের পূর্ণ নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হবে। ফলে ৯০ কিলোমিটারের পরিবর্তে ২৩৮ কিলোমিটার পাতাল রেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রকল্পের মেয়াদ ১৪ মাস বাড়ানো হয়েছে। নতুন প্রস্তাবনায় ১৪৮ কিলোমিটার অতিরিক্ত দৈর্ঘ্যের পাতাল রেলের সমীক্ষা কাজের জন্য মোট ১ হাজার ২৯ জন পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হবে।

জানতে চাইলে সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মোহাম্মদ ফেরদাউস বলেন, প্রথমে ঢাকায় ৯০ কিলোমিটার পাতাল রেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সে অনুযায়ী আমরা সমীক্ষা প্রকল্প অনুমোদন করেছিলাম। এখন পাতাল রেল নির্মাণ সমীক্ষার কাজের পরিধি বেড়ে ২৩৮ কিলোমিটার হচ্ছে। ফলে পৃথিবীর উন্নত শহরের মতো ঢাকা শহরে জালের মতো বিস্তার হবে পাতাল রেল। নতুন পাতালরেল রুটের নকশা করা হচ্ছে। ফলে সমীক্ষা প্রকল্পের সময়-ব্যয় বাড়ছে। ঢাকার আয়তন বাড়ছে এসব কথা মাথায় রেখেই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে।

নতুন সমীক্ষা রুটের নকশার রূপরেখা অনুযায়ী, টঙ্গী জংশন হয়ে গুলশান-মালিবাগ-সদরঘাটে একটি পাতালরেল রুট নির্মাণ করা হবে। এই রুটের দৈর্ঘ্য হবে ২৬ দশমিক ২৯ কিলোমিটার, মোট স্টেশন থাকবে ২৪টি। গাবতলী-মিরপুর-কুড়িল হয়ে পূর্বাচলে ১৭ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পাতাল রেল নির্মাণ হবে। এই রুটে ১৫টি স্টেশন থাকবে। বসিলা-মহাখালী হয়ে কায়েতপাড়া রুটে ১৬ দশমিক ১৭ কিলোমিটার রুটের পাতালরেল নির্মিত হবে। এই রুটে থাকবে ১৫টি স্টেশন। হাজারীবাগ-রাজারবাগ পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার পাতাল রেল নির্মাণ করা হবে। এই রুটে ১২টি স্টেশন নির্মিত হবে। কামরাঙ্গীরচর থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার পাতাল রেল নির্মিত হবে। এই রুটে ১২টি স্টেশন থাকবে। বসিলা-মালিবাগা রুটের দৈর্ঘ্য হবে ১৪ কিলোমিটার, স্টেশন থাকবে ১৩টি। গাবতলী-হাজারীবাগ থেকে শ্মশানঘাট রোড পর্যন্ত সাড়ে ১৪ কিলোমিটার পাতালরেল নির্মাণ করা হবে। এই রুটে ১৩টি স্টেশন থাকবে। গাবতলী-বাড্ডা হয়ে পূর্বাচল পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৭৬ কিলোমিটারের একটি পাতাল রেল নির্মাণ করা হবে। এই রুটে ১২টি স্টেশন থাকবে। টঙ্গী জংশন-মহাখালী-গুলশান হয়ে ঝিলমিল পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি পাতালরেল নির্মাণ করা হবে, এই বিশাল রুটে ২৬টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। টঙ্গী জংশন-মহাখালী-মালিবাগ হয়ে সদরঘাট পর্যন্ত ২৬ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পাতাল রেল নির্মিত হবে। এই রুটে ২৪টি স্টেশন থাকবে। টঙ্গী জংশন-গুলশান-গুলিস্তান হয়ে ঝিলমিল পর্যন্ত ২৮ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি পাতাল রেল নির্মিত হবে। এই রুটে ২৬টি স্টেশন নির্মিত হবে। কেরানীগঞ্জ-সায়দাবাদ হয়ে কাঁচপুর পর্যন্ত ১৯ দশমিক ১১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি পাতাল রেল নির্মাণ করা হবে। এই রুটে থাকবে ১৮টি স্টেশন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়-মাতুয়াইল-নারায়ণগঞ্জ রুটে ১০ কিলোমিটার একটি পাতাল রেল রুট যাবে। এই রুটে থাকবে ৯টি পাতাল রেল স্টেশন। আরো কিছু রুট নির্দিষ্ট করতে নকশা করা হচ্ছে। জে ও টি নামে দুটি রুট ঠিক করা হয়েছে। তবে এই রুটের এলাকা এখনো ঠিক করা হয়নি।

এ নিয়ে সেতু বিভাগ জানায়, সড়কপথে যেখানে ১০০ বাসে ঘণ্টায় ১০ হাজার যাত্রী চলাচল করতে পারে, সেখানে সাবওয়েতে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী চলাচল সম্ভব। তবে বিদ্যমান সড়কের ওপর মেট্রো বা সাবওয়ে নির্মাণ করা হলে সড়কের কিছু অংশ দখলের ফলে যানজট কমার ক্ষেত্রে তেমন প্রভাব ফেলবে না এবং নির্মাণকাজ চলার সময় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হবে। মাটির নিচে সাবওয়ে বা আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো নির্মাণ করা হলে জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশ মাটির নিচ দিয়ে চলাচল করবে। ফলে ভূমির উপরিভাগ যাতায়াতকারী জনসংখ্যা কমবে এবং যানজটও অনেকাংশে কমবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads