• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

যোগাযোগ

সরকারি পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন

নতুন আরো ২০০ বাস কিনছে বিআরটিসি

  • এম এ বাবর
  • প্রকাশিত ২৭ নভেম্বর ২০২০

যাত্রীসেবার মান বাড়াতে এবং সংস্থার উন্নয়নে নতুন করে আরো ২০০টি বাস কেনার উদ্যোগ নিয়েছে বিআরটিসি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এরই মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ঋণ গ্রহণের চেষ্টা করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এদিকে সামান্য ত্রুটিযুক্ত পুরনো বাসগুলো মেরামত না করে ঋণনির্ভর নতুন বাস কেনার বিষয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটির ঘাড়ে নতুন বোঝা চাপানো বলে মনে করছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, প্রতিনিয়ত লোকসানে থাকা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনকে (বিআরটিসি) লাভজনক করতে ত্রুটিযুক্ত বাসগুলো মেরামত করে বহরে যুক্ত করাই মঙ্গলজনক।

কয়েক ধাপে গত ১০ বছরে বিআরটিসিকে এক হাজার ৫৫৮টি বাস কিনে দেয় সরকার। এগুলোর পাশাপাশি সংস্থাটির বহরে পুরনো বাস ছিল ৫৯২টি। সব মিলিয়ে বর্তমানে দুই হাজার ১৫০টি বাস থাকলেও সেগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারেনি বিআরটিসি। এতে ৫০০-র বেশি বাস অচল হয়ে পড়ে আছে। বাকি বাসের বেশিরভাগই ইজারায় চালানো হচ্ছে। এরই মধ্যে বিআরটিসির বহরে নতুন করে যুক্ত হতে যাচ্ছে ৫০টি ইলেকট্রিক একতলা বাস, ৫০টি একতলা সিএনজি এসি বাস ও ১০০টি ডিজেলচালিত একতলা এসি বাস। সম্প্রতি এই প্রকল্পের প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (পিডিপিপি) অনুমোদন করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ঋণ গ্রহণের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নতুন প্রকল্প সংক্রান্ত চিঠিটি পরিকল্পনা কমিশন থেকে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে পাঠানো হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী নীতিগতভাবে বাস ক্রয় প্রকল্প অনুমোদন করেছেন। প্রকল্পটির অনুকূলে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন ফান্ড (ইডিসিএফ) দক্ষিণ কোরিয়ার আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তির লক্ষ্যে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়।

তথ্যমতে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিআরটিসির বাস সার্ভিসকে পুনরুজ্জীবিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে নর্ডিক ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (এনডিএফ) ঋণে ২০১০ সালে চীন থেকে কেনা হয় ২৭৫টি একতলা সিএনজিচালিত বাস। ২০১১ সালে কোরিয়ার ঋণে দেশটি থেকে কেনা হয় ১৫৫টি নন-এসি ও ১০০টি এসি একতলা সিএনজিচালিত বাস। আর ভারতের ঋণে ২০১২ সালে ২৯০টি দ্বিতল এবং ২০১৩ সালে ৫০টি আর্টিকুলেটেড ও ৮৮টি এসি বাস যুক্ত হয় বিআরটিসির বহরে।

এরপর গত বছর ভারত থেকে ৬০০ বাস কেনে বিআরটিসি। এর মধ্যে রয়েছে ৩০০টি দ্বিতল বাস, ১০০টি নন-এসি বাস, ১০০ সিটি বাস (এসি) ও ১০০ আন্তঃনগর বাস (এসি)। এক হাজার ৫৫৮টি বাসের মধ্যে ২২টি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপহার দেওয়া হয়। অবশিষ্ট বাসের মধ্যে বেশকিছু বাস কনডেম (ব্যবহার অযোগ্য ঘোষণা) করা হয়। এতে বাসের সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ৮৭৩-তে। এর মধ্যে ৩৮৪টি রুটে চলছে ১ হাজার ৩৫৭টি বাস এবং ২২৪টি বাস বিকল হয়ে পড়ে আছে। তবে সেগুলো মেরামত করে রাস্তায় নামানো সম্ভব। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৩৪টি ও সচিবালয়ের স্টাফ বাস হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে ১৪৪টি।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নিয়মিত নতুন বাস কেনা হলেও এগুলোর সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। ফলে ২০১০ সালে চীন থেকে আনা বাসগুলোর অধিকাংশই এখনো বিকল। মাত্র ৬০টি চলাচল করলেও নিয়মিত ওয়ার্কশপে যাতায়াত করে। ভারত ও কোরিয়ার বেশকিছু বাসও অচল হয়ে আছে। বাসগুলো এখন গাজীপুর, কল্যাণপুর, মিরপুর ও মতিঝিলে বিআরটিসির বাস ডিপোতে ফেলে রাখা হয়েছে। এছাড়া বিগত সরকারের সময় কেনা ভলবো বাসগুলো ছিল খুবই ব্যয়বহুল। কিন্তু ৫০টির মধ্যে ৪৯টিই বিকল হয়ে পড়ে আছে।

বাকিগুলোর মধ্যে শুধু এসি বাসগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালাচ্ছে বিআরটিসি। আর নন-এসি, দ্বিতল ও আর্টিকুলেটেড (দুই বগি জোড়া লাগানো) কয়েকটি বাস ইজারায় চলছে। দৈনিক জমার ভিত্তিতে এসব বাস ইজারা দেয় সংস্থাটি। ফলে প্রতি বছর বড় অংকের লোকসান করছে সংস্থাটি। এমনকি ঋণের কিস্তিও (ডিএসএল) অনেক সময় পরিশোধে ব্যর্থ হয় বিআরটিসি।

বিআরটিসির নতুন ২০০ বাস কেনার উদ্যোগ আত্মঘাতী মন্তব্য করে গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এম সালেহ উদ্দিন বলেন, সরকারের এ সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসতে হবে। এতে ঋণ বাড়ার সাথে সাথে সংস্থাটিতে আরো লোকসানের বোঝা বাড়বে। বরং পুরনো বাসগুলো মেরামত করে বহরে যুক্ত করাই মঙ্গলজনক।

পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক সামছুল হক বলেন, অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে বিআরটিসি। পাশাপাশি সঠিক তদারকি না থাকায় সংস্থাটি অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। তাই নতুন বাস কেনার আগে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সংস্থাটিকে সাজাতে হবে। সংস্থাটির লোকসানের বোঝা কমাতে নিজস্ব অর্থায়নে সামান্য ত্রুটির কারণে ফেলে রাখা বাসগুলো মেরামত করার পরমর্শ দেন তিনি।

নতুন বাস কেনার ব্যাপারে বিআরটিসির চেয়ারম্যান এহসানে এলাহী বলেন, চাহিদার তুলনায় বিআরটিসি বাসের সংখ্যা অপ্রতুল। রাজধানীর যানজট কমাতে মূলত নতুন এই বাস কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সহজ শর্তে ইডিসিএফ ঋণ নেওয়ার জন্য চেষ্টা চলছে। তাছাড়া সংস্থাটি লাভজনক করতে এবং গণপরিবহন সেবার মান বাড়াতে নতুন বাস কেনার বিকল্প নেই।

বর্তমান বাসগুলোর ব্যাপারে তিনি জানান, চালক ও অন্যান্য জনবল সংকটে বেশকিছু বাস ইজারা দেওয়া আছে। তবে আন্তঃজেলা রুটের বেশিরভাগ বাস নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালানো হচ্ছে। এছাড়া কিছু বাস মেরামত করে পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত বাসের সংখ্যা বাড়াতে ড্রাইভার ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে আরো বাস নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালানো যাবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads