• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

যোগাযোগ

চার জাহাজ চলছে ধুঁকে ধুঁকে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২১ ডিসেম্বর ২০২০

পিএস অস্ট্রিচ, পিএস মাহসুদ, পিএস লেপচা ও পিএস টার্ন- ঐতিহ্যবাহী চার জাহাজের মধ্যে অর্ধশত বছর পেরিয়েছে তিনটি। অবশ্য চারটি জাহাজই চলছে ধুঁকে ধুঁকে। শতবর্ষী পিএস অস্ট্রিচের গতি হতে চললেও বাকি তিনটির ভাগ্য নির্ধারণ নিয়ে বিপাকেই আছে খোদ বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি)। দুটি নৌযানে কিছুটা পরিচ্ছন্নতার ছাপ থাকলেও বাকি দুটি একেবারেই জরাজীর্ণ। বিআইডব্লিউটিসির একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রগুলো জানায়, পিএস অস্ট্রিচকে মেরিএন্ডারসন রেস্তোরাঁর আদলে পর্যটন হোটেল বানানোর জন্য একটি বেসরকারি কোম্পানির হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি তিনটি জাহাজ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ঢাকা-মোরেলগঞ্জ রুটে চলাচলের জন্য লাইনে থাকলেও এগুলো চলে না। বেশিরভাগ সময় নদীতেই পড়ে থাকে।

১৯২৯ সালে কলকাতার গার্ডেন রিচ শিপইয়ার্ডে নির্মিত হয় পিএস অস্ট্রিচ ও পিএস মাহসুদ। ১৯৩৮ সালে তৈরি হয় পিএস লেপচা। আর পিএস টার্ন ১৯৫০ সালে। শুরুতে এই চারটি জাহাজ কয়লায় চলেছে। অকেজো হওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত এগুলো তেলে চলেছে। ১৯৮৩ সালে এ চারটি স্টিমারের স্টিম ইঞ্জিন সরিয়ে ডিজেল ইঞ্জিন বসানো হয়। যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় ১৯৯৬ সালে পিএস অস্ট্রিচকে পুনর্বাসন এবং ১৯৯৫ সালে পিএস মাহসুদে মেকানিক্যাল গিয়ার সিস্টেম স্থাপন করা হয়। বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চারটি জাহাজই মেয়াদোত্তীর্ণ। ৭০ থেকে প্রায় ১০০ বছরের কাছাকাছি বয়স এগুলোর। ভেতরটা স্বভাবতই ভাঙাচোরা। বৃষ্টিতে জাহাজগুলোর প্রথম শ্রেণির কেবিনও পানিতে ভিজে যায়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির যাত্রীদের দুর্ভোগ আরো বেশি। এর মধ্যে কোনো জাহাজে ফ্রিজ নেই, টিভিও নেই। কেবিনের এসি কাজ করে না। বাথরুমের দুর্গন্ধে যাত্রীরা টয়লেটেও যেতে পারেন না। বিষয়টি বহুবার কর্তৃপক্ষের নজরে আনলেও কোনো সাড়া মেলেনি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বর্তমান বিশ্বে এ ধরনের প্যাডেল জাহাজ কিংবা স্টিমার এভন আর নেই। তবে এখনো অনেকে স্টিমারে ভ্রমণের স্বাদ নিতে এগুলোতে চড়েন। ভ্রমণের জন্য এগুলোকে নিরাপদ বিবেচনা করা হয়। ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথ পিএস অস্ট্রিচে একবার মেঘনা ভ্রমণ করেছিলেন। অথচ এমন ঐতিহ্যের কথা বিবেচনা করেও সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই।

বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-বরিশাল-মোরেলগঞ্জ এবং বরিশাল-খুলনা রুটে চলাচলকারী চারটি প্যাডেল জাহাজ সাশ্রয়ী হলেও এখন এগুলোর অবস্থা খুবই করুণ। সর্বশেষ গত বছরের এপ্রিলে খুলনা থেকে ঢাকা আসার পথে পিএস অস্ট্রিচ বরিশালের কাছে এবং ১৯ এপ্রিল ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে খুলনা পৌঁছার পর পিএস মাহসুদ বিকল হয়ে পড়ে। এর প্রায় আট মাস আগে পিএস মাহসুদকে পুরোপুরি মেরামত করতে সংস্থার ডকইয়ার্ডে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি। একই অবস্থায় রয়েছে পিএস লেপচা ও পিএস টার্ন। এর মধ্যে পিএস লেপচার ডকিংসহ পূর্ণাঙ্গ মেরামত জরুরি হলেও পিএস টার্নের মূল ইঞ্জিনের টার্বো চার্জার কাজ করে না বলে জানা গেছে।

বিআইডব্লিউটিসির মুখপাত্র নজরুল ইসলাম মিশা জানিয়েছেন, জাহাজগুলো লাইনে চলছে। তবে পিএস অস্ট্রিচকে বেসরকারি একটি কোম্পানির হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এটাকে পর্যটন হোটেল বানিয়ে নদীতেই রাখা হবে। বাকি তিনটি জাহাজ কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে আছে।

তিনি জানান, আনন্দময় ভ্রমণের জন্য এ জাহাজগুলো এখনো আরামদায়ক এবং নিরাপদ। বয়স হয়েছে অনেক, তাই মাঝেমধ্যে ইঞ্জিন অকেজো হয়। সেটা আবার মেরামত করে লাইনে চালানো হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads