• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

যোগাযোগ

আবারো ধর্মঘটের কবলে দেশ

নৌসেবায় জিম্মি যাত্রীরা

  • মোহসিন কবির
  • প্রকাশিত ২৬ জানুয়ারি ২০২১

নৌসেবায় বার বার জিম্মি হচ্ছেন যাত্রীরা। এমন ঘটনা আবারো ঘটেছে গতকাল সোমবার। ঢাকার মেরিন আদালতে যাত্রীবাহী নৌযানের দুজন মাস্টারের (চালক) জামিন বাতিলের প্রতিবাদে হঠাৎ দুপুর ২টা থেকে ঢাকা-বরিশালসহ দেশের সব দূরপাল্লা রুটে নৌযান ধর্মঘট শুরু করেন নৌযান শ্রমিকরা।

জামাল হোসেন ও রুহুল আমিন নামের ওই দুই শ্রমিককে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন তারা। যাত্রীরা যাতে লঞ্চে উঠতে না পারে সেজন্য তারা ঘাট থেকে লঞ্চ সরিয়ে মাঝ নদীতে নিয়ে রাখে। ধর্মঘটের কারণে ঢাকার সদরঘাট, বরিশাল ও চাঁদপুরসহ বিভিন্ন নৌবন্দরগুলোর যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। নিরুপায় হয়ে অনেককে লঞ্চঘাট থেকে ফেরত যেতে হয়েছে। কেউবা বিকল্প পথে গন্তব্যে রওনা হন। বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম বাংলাদেশের খবরকে জানান, কুয়াশার কারণে গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের সঙ্গে একই কোম্পানির অ্যাডভেঞ্চার-২ লঞ্চের সংঘর্ষ হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় লঞ্চ দুটি। তবে দুর্ঘটনায় কোনো  যাত্রী হতাহত হয়নি বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘ওই ঘটনায় লঞ্চ দুটির চালকের লাইসেন্স ৪ মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছিল এবং তারা এতদিন জামিনে ছিল। কিন্তু সোমবার তারা হাজিরা দিতে গেলে জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোয় শ্রমিকরা সংক্ষুব্ধ হয়ে কাজে বিরত শুরু করে। ধর্মঘটের পেছনে তাদের কোনো হাত নেই দাবি করে আশিক বলেন, আমাদের ফেডারেশনের পক্ষ থেকে কোনো ধর্মঘট ডাকা হয়নি। এটি শ্রমিকদের বিষয়। তারা একটি অযৌক্তিক ঘটনার কারণে ক্ষুব্ধ হয়েছে এখানে আমাদের কোনো হাত নেই।’ আশিকুল আলমের দাবি এ ধরনের মামলা জামিনযোগ্য। 

দাবি আদায়ের নামে ঠুনকো অজুহাতে বারবার নৌ-ধর্মঘটের কারণে চরম হয়রানি আর ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। এছাড়া নানা অজুহাতে নৌযান মালিক ও শ্রমিকদের বারবার ডাকা ধর্মঘটের কারণে যাত্রীরা জিম্মি  হচ্ছেন। দাবি আদায়ের নামে যাত্রীদের জিম্মি করে  হয়রানির এমন অপকৌশল বন্ধের দাবি জানিয়েছেন যাত্রীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজ্জাম্মেল হক চৌধুরী বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘এ ধরনের কর্মকাণ্ড দেশের আইনের শাসনের পরিপন্থি এবং  সংবিধানবিরোধী। তাই এদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা না নিলে এ ধরনের হঠকারী কর্মসূচি বন্ধ হবেনা।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যাত্রী হয়রানি বন্ধে এ ধরনের কর্মসূচি এড়ানোর পরামর্শ সরকারকে দিতে গেলে উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সড়ক পরিবহনের মতো নৌ-পরিবহন সেক্টরেও বেশিরভাগ মালিকই সরকারপন্থি। এরা সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিলেও শ্রমিকদের তা দেয়না।’

এদিকে, সবশেষ পাওয়া খবরে উদ্ভূত সংকট মোকাবিলায় গতকাল সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত শ্রমিকদের সঙ্গে বিআইডব্লিউটিএ ও মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের আলোচনায় বসার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের পরিচালক রফিকুল ইসলাম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ মহলে জানিয়েছি। আজকের মধ্যে কোনো আলোচনা হবে কিনা সেটি বলা মুশকিল। তবে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।’

দেশের অন্যতম বৃহত্তম নদীবন্দর বরিশালেও চলছে ধর্মঘট। নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন বরিশাল জেলা সভাপতি শেখ আবুল হাসেম জানান, শ্রমিকরা সংক্ষুব্ধ হয়ে কারান্তরীণ দুই নৌযান মাস্টারের মুক্তির দাবিতে তাৎক্ষণিক ধর্মঘট শুরু করেছে। একই রুটের এমভি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের প্রথম শ্রেণির মাস্টার কবির হোসেন জানান, ওই দুই নৌযান মাস্টারকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত তাদের কর্মবিরতি চলবে।

এদিকে, ঢাকা,বরিশাল ও চাঁদপুরসহ যেসব রুটে যাত্রী পরিবহন বেশি হয় সেসব রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকলেও কয়েকটি রুটে লঞ্চ চলাচল অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে। পটুয়াখালী থেকে সন্ধ্যায় ঢাকার উদ্দেশে লঞ্চ ছাড়া হবে বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে টেলিফোনে জানিয়েছেন, পটুয়াখালী বন্দর বিআইডব্লিউটিএর সহকারী পরিচালক খাজা সাদিকুর রহমান। তিনি জানান, ‘এখনো আমাদের এখানে ঢাকার উদ্দেশে সবগুলো লঞ্চই ছেড়ে যাবার কথা রয়েছে।’ একই কথা জানিয়েছেন, সুন্দরবন লঞ্চের সুপারভাইজার মো. ইউনুস মিয়া।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads