• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

যোগাযোগ

ঘন কুয়াশায় বিপজ্জনক সড়ক-মহাসড়ক

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ২৬ জানুয়ারি ২০২১

তীব্র শীতের কারণে ঘন কুয়াশায় বিপজ্জনক হয়ে উঠছে দেশের সব সড়ক-মহাসড়ক। কুয়াশায় সামান্য দূরত্বেও ঠিকমতো দেখতে পাচ্ছেন না চালকরা। এতে হরহামেশাই ঘটছে দুর্ঘটনা।  স্বাভাবিক গতির চেয়ে কম গতিতে যানবাহন চালিয়েও সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছতে পারছেন না। রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকায় যাত্রীরাও হচ্ছেন নাজেহাল। ঘন কুয়াশার কারণে বঙ্গবন্ধু সেতুতেও মাঝেমধ্যে যান চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ফেরি বন্ধ রাখায় দুই পাশের ঘাটে তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ জট।

আবহাওয়া অফিস বলছে, ঘন কুয়াশা আরো কয়েকদিন থাকবে। সুতরাং রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনকে সতর্কতার সঙ্গে চলার পরামর্শ তাদের। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, দেশে কয়েকদিন ধরেই শৈত্যপ্রবাহের পাশাপাশি ঘন কুয়াশা হচ্ছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকেই কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে। এতে সামান্য দূর পর্যন্ত দেখতে না পাওয়ায় সমস্যায় পড়ছেন চালকরা। আর গাড়ির স্বাভাবিকের চেয়ে কম গতিতে চলায় সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছতে পারছে না। রীতিমতো দুর্ঘটনার শঙ্কা নিয়ে চলতে হচ্ছে তাদের। এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে কয়েকদিন ধরেই দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কের গোদাগাড়ী উপজেলার গোপালপুরে মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে ৫টি সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। এতে কয়েকজন আহত হন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে।

স্থানীয়রা জানান, ঘন কুয়াশায় রাস্তা ভিজে যাওয়ায় গত রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে এসব ঘটনা ঘটে। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মাহেন্দ্রাকে চাঁপাই নবাবগঞ্জগামী ট্রাক পেছন থেকে ধাক্কা দিলে পুকুরে পড়ে যায়। সড়কে যানবাহনগুলো দ্রুত গতিতে চলার কারণে ভেজা রাস্তায় ঠিকমতো ব্রেক কাজ না করায় এসব ঘটনা ঘটছে।

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের মুন্সীগঞ্জের কুচিয়ামোড়া এলাকায়ও দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে সাতটি গাড়ি। এসব যানের মধ্যে রয়েছে একটি ট্রাক, পাঁচটি প্রাইভেটকার ও একটি যাত্রীবাহী বাস। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে সাতটার সিরাজদিখান উপজেলার কুচিয়ামোড়া এলাকায়ও দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়া জানান, ঘন কুয়াশায় দেখতে না পেয়ে প্রথমে ঢাকামুখী একটি ট্রাক রাস্তার নিরাপত্তা বেষ্টনীর (রেলিং) সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এ সময় পেছনে থাকা পাঁচটি প্রাইভেটকার ও শেষে একটি যাত্রীবাহী বাস গিয়ে একের পর এক ধাক্কা লাগে। দুর্ঘটনায় শেষের প্রাইভেট কারটির সবচেয়ে বেশ ক্ষতি হয়। এই দুর্ঘটনায় মোট পাঁচজন আহত হয়। তাদের অবস্থা গুরুতর নয়।

দুর্ঘটনায় পর দীর্ঘক্ষণ এক্সপ্রেসওয়ের একটি পাশ দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। পরে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়িগুলো সরিয়ে নেওয়া হলে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয় বলে জানিয়েছে হাসাড়া হাইওয়ে পুলিশ।

ঘন কুয়াশার কারণে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এতে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পাড় থেকে টাঙ্গাইলের রসুলপুর ও সেতু পশ্চিম সংযোগ সড়ক থেকে সিরাজগঞ্জের নলকা পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

কর্তৃপক্ষ বলছে, ঘনকুয়াশার কারণে রোববার মধ্যরাত সাড়ে ১১টা থেকে গত সোমবার সকাল পর্যন্ত দফায় দফায় কয়েক ঘণ্টা সেতুর টোলপ্লাজা বন্ধ রাখায় এ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। তবে শিশু ও বয়স্ক যাত্রীরা বেশি কষ্টে পড়েছে।

সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, ঘনকুয়াশার কারণে সেতুর ওপর দুর্ঘটনা এড়াতে রোববার মধ্যরাত থেকে বেশ কয়েকবার টোল আদায় বন্ধ রাখা হয়। এ জন্য কয়েক ঘণ্টা সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল করতে পারেনি। তাই সেতুর দুই পাড়ে যানবাহন আটকা পরে গাড়ির দীর্ঘ সারির সৃষ্টি হয়। টোল আদায় বর্তমানে চলমান থাকলেও কুয়াশার মাত্রা বেশি থাকায় ধীরগতিতে যান চলাচল করছে।

বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জ কাজী আইয়ুবুর রহমান জানান, রোববার রাত ১০টার পর থেকেই কুয়াশা বেড়ে যায়। রাত সাড়ে ১১টার পর এর তীব্রতা আরো বাড়তে থাকে। এরপরে সেতু কর্তৃপক্ষ যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। রাতে টোল আদায় শুরু হলেও মহাসড়কটিতে গাড়ির দীর্ঘ সারি হয়। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই একই অবস্থা চলছে।

এদিকে কুয়াশার কারণে পদ্মা নদীর দুই রুট পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও বাংলাবাজার-শিমুলিয়ায় ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে বিআইডাব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষকে। ফেরি চলাচল বন্ধ হওয়ায় ঘাটগুলোর উভয় পাশে যানবাহনের পরিমান বাড়ছে।

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাট কর্তৃপক্ষ জানায়, রোববার রাত পৌনে ১১টার দিকে পদ্মায় কুয়াশার ঘনত্ব তীব্র আকার ধারণ করে। এতে ফেরির দিক নির্দেশক বাতি অস্পষ্ট হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে দুর্ঘটনা এড়াতে এই রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় মাঝ নদীতে যানবাহন ও যাত্রী নিয়ে আটকা পড়ে কয়েকটি ফেরি। এ ছাড়া ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় উভয় ঘাটে দীর্ঘ হচ্ছে যানবাহনের সারি এবং তীব্র শীতে ভোগা‌ন্তিতে পড়েছেন চালক ও যাত্রীরা।

একই অবস্থা বাংলাবাজার-শিমুলিয়া রুটেও। গত রোববার রাত সোয়া ৯টা থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। কুয়াশার ঘনত্ব তীব্র হয়ে উঠলে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এসময় শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে রোরো ফেরি এনায়েতপুরী পরিবহন লোড করে ঘাটেই নোঙর করে রাখে। এ ছাড়াও উভয় ঘাট থেকে ছেড়ে আসা একাধিক ফেরি পদ্মা নদীর বিভিন্ন স্থানে নোঙর করে রাখে।

এদিকে দীর্ঘ সময় ধরে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় উভয় রুটের ঘাটগুলোতে যানবাহনের দীর্ঘ সারি সৃষ্টি হচ্ছে। নদী পারের অপেক্ষায় রয়েছে কয়েকশ যানবাহন। এতে দুর্ভোগে পড়ছে যানবাহনের যাত্রী, চালক ও কর্মচারীরা।

কুয়াশার কারণে সড়কে ভোগান্তিতে পড়ছে যাত্রীরাও। গত শনিবার রাত ১১টার দিকে উত্তরাঞ্চলের শহর নওগাঁ থেকে ঢাকার বাসে উঠেন রামিম দেওয়ান নামের যাত্রী। স্বাভাবিক সময়ে তার ভোরেই নামার কথা। কিন্তু  তিনি নামেন পরের দিন বিকেল ৩টার দিকে। রাস্তার মধ্যেই তার বসে থাকতেই তার কেটে যায় আরো ৬/৭ ঘণ্টা।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুতে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার কারণে এ অবস্থা চলছে। তিনি বলেন, রাস্তায় শতশত গাড়ি আটকা পড়ে আছে। সন্ধ্যার পর থেকে কুয়াশার কারণে গাড়ি চলতে পারছে না। দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে।

রামিমের আরো কয়েকজন যাত্রী বলেন, সড়কের অবস্থা ভয়াবহ। যারা নাইট কোচে আসা যাওয়া করছেন তাদের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে। কুয়াশায় কিছু দেখা যায় না। চালকরা অতি সাবধানে একেবারে ধীরে ধীরে চলার কারণে দুর্ঘটনা থেকে আমরা বাঁচছি। তারা জানান, রাস্তায় মানুষ অনেক নাজেহালের শিকার হচ্ছেন।

হাইওয়ে রেঞ্জের ডিআইজি বেগম আতিকা ইসলাম বলেন, কুয়াশার কারণে সড়ক মহাসড়কে যানজট লেগে আছে। গাড়িগুলো ঠিকমতো চলতে পারছেনা। তিনি বলেন, কুয়াশায় সড়কে যেন দুর্ঘটনা না ঘটে সে জন্য হাইওয়ের প্রতিটি ইউনিটকে সতর্ক করা হয়েছে। প্রয়োজনে গাড়ি ১/২ ঘণ্টা অফ রেখে ধীর গতিতে চালানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads