• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

যোগাযোগ

অপরিকল্পিত সেতুই গলার কাঁটা

বিভিন্ন স্থানে নৌপথের ওপর একাধিক কম উচ্চতার সেতু রয়েছে

  • সালাহ উদ্দিন চৌধুরী
  • প্রকাশিত ০১ মার্চ ২০২১

অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা সেতু এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কম উচ্চতার কারণে ওইসব সেতুর নিচ দিয়ে একদিকে যেমন চলাচল করতে পারছে না কোনো নৌযান, আবার নদী খনন করতে গিয়েও বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তাই সারা দেশের নৌপথের ওপর নির্মিত সেতুগুলোর উচ্চতা সরেজমিনে পরিদর্শনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

জানা যায়, নৌপথের ওপর সড়ক, রেল ও স্থানীয় সরকার বিভাগ সেতু নির্মাণ করে থাকে। কিন্তু এসব সেতু নির্মাণের আগে নৌমন্ত্রণালয়ের কোনো ছাড়পত্র নেওয়া হয় না। বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা যায়, দেশের ৫৩টি নদী নিয়ে ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। প্রতি বছরই এসব নদীর নাব্য ঠিক রাখতে খনন করতে হয়, যা শেষ হয় জুন মাসে। কিন্তু চলতি বছরে ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করা সম্ভব হবে না। এর কারণ হিসেবে দেশের বিভিন্ন নৌরুটে নির্মিত ব্রিজগুলোর উচ্চতাকে দায়ী করা হচ্ছে।

জানা যায়, কম উচ্চতা ও ঝুঁকিপূর্ণ ৪ ব্রিজের কারণে নেত্রকোনায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নদী খনন প্রকল্প। নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ হতে বারহাট্টা পর্যন্ত স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের (এলজিইডি)  অধীনে আতিতপুর, হুজরাপুর, চন্দ্রপুর ও বারহাট্টায় নির্মিত এই ব্রিজগুলোর কারণে বন্ধ রয়েছে নৌচলাচল।

মোহনগঞ্জ-নালিতাবাড়ী ও দিলালপুর-নিকলি-নেত্রকোনা পর্যন্ত বন্ধ থাকা নৌপথ সচল করার জন্য নদী খনন করছে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। নৌচলাচলের সুবিধার্থে ব্রিজগুলো সংস্কার করে উঁচু করার সুপারিশ করা হয়েছে।

জানা গেছে, সারা দেশে অভ্যন্তরীণ নৌপথের ৫৩টি রুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিং ২য় সংশোধিত প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে ২৪টি নৌপথ খনন করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১২টি রুটের কাজ সমাপ্ত এবং ১২টি রুটে খনন কাজ চলছে। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৭৯ শতাংশ। ১ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে চলতি বছরের জুনে প্রকল্পে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু উচ্চতা কম ও ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজের কারণে খননকাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের আওতায় ২০১৯ সালে জুলাই মাসে মোহনগঞ্জ-নালিতাবাড়ী ও দিলালপুর-নিকলি-নেত্রকোনা নৌপথে খনন কাজ শুরু হয়। এ পর্যন্ত এই দুটি রুটের সার্বিক অগ্রগতি ৮০ শতাংশ। কিন্তু কম উচ্চতা ও ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর কারণে এই রুটের নদী খনন কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সেতুর উচ্চতা কম থাকায় খননস্থলে ড্রেজার নেওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া নদীর মাঝখানে সেতুর পিলার থাকায় খনন শুরু করা যাচ্ছে না। নৌচলাচলের সুবিধার্থে সেতুগুলো উঁচু করার জন্য নৌ-মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়।

বিআইডব্লিউটিএ’র এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২১ জানুয়ারি মগড়া নদীর মদন-আটপাড়া পর্যন্ত নৌপথ সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়েছে। এই নৌপথে দিলালপুর-চামড়াঘাট হতে শান্তিপুর হয়ে আটপাড়া পর্যন্ত ৭৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৭১ কিলোমিটার নাব্য করা হয়েছে। মদন এলাকায় ৪ কিলোমিটার ড্রেজিং বাকি আছে। ড্রেজিংকৃত এলাকায় ১২-১৪ ফুট গভীরতায় পানি পাওয়া যায়। মরা নদীটি কাটার ফলে নদীতে পানি এসেছে। নদীতে কৃষকরা শত শত শ্যালো মেশিন বসিয়ে কৃষি কাজে নদীর পানি ব্যবহার করছে। নদীতে মালবাহী বড় বড় কার্গো, ট্রলার চলাচল করছে। ড্রেজিংকৃত মাটি দিয়ে সোনাজুর আশ্রয়কেন্দ্র, সোনাজুর কালী মন্দির, গোপাল আশ্রম স্কুল মধুয়াখালী, দেওশ্রী প্রাইমারি স্কুল, বাড়ি ভাদেরা স্কুল ও গ্রামের মাঠ ইত্যাদি প্রায় ৫০টি জায়গায় ভরাট করা হয়েছে।

সূত্র জানায়,অতিতপুর হতে বারহাট্টা পর্যন্ত এলজিইডি কর্তৃক নির্মিত অতিতপুর ব্রিজ, হুজরাপুর ব্রিজ, চন্দ্রপুর ব্রিজ ও বারহাট্টা ব্রিজ চারটি নিচু ব্রিজ রয়েছে। ৪টি ব্রিজের মধ্যে চন্দ্রপুর-হুজরাপুর ব্রিজটির পিলারে ফাটল ধরে রড বের হয়ে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। যেকোন মুহূর্তে ব্রিজটি ভেঙে যেতে পারে। নিচু ব্রিজগুলোর জন্য নদী মরে যাচ্ছে। যেহেতু এখানে নদীর প্রস্থ কম ৮০-১০০ ফুট, এমন নদীর মাঝখানে পিলার না দিয়ে নদীর দুপ্রান্তে পিলার ব্যবহার করে উঁচু করতে হবে, যেন বর্ষাকালে সব ধরনের নৌযান চলাচল করতে পারে। শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি থাকে না এবং বর্ষাকালে নিচু ব্রিজগুলোর জন্য ১৮ ইঞ্চি কাঁটার সাকশন ড্রেজার এ নদীতে প্রবেশ করানো যায় না। ফলে এ অংশের ড্রেজিং কাজ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এ মুহূর্তে এ অংশে বিকল্প ব্যবস্থা কাজ করা সম্ভব। মাটি সরানোর জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) আবদুল মতিন বলেন, সারা দেশের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর নৌপথ রয়েছে। সাধারণত নদীর ওপর সেতু নির্মাণের স্ট্যান্ডার্ট মান অনুযায়ী ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স (স্বাভাবিক পানি প্রবাহ) থেকে ৪৫ ফুট উচু প্রথম শ্রেণীর নৌপথ, ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স (স্বাভাবিক পানি প্রবাহ) থেকে ২৫ ফুট উঁচু বা ৭ দশমিক ৬২ মিটার এবং হরিজেন্টাল ক্লিয়ারেন্স ১০০ ফুট বা ৩০ দশমিক ৪৮ মিটার দ্বিতীয় শ্রেণীর নৌপথ ও ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স ৭ ফুটের বেশি উচ্চতা তৃতীয় শ্রেণির নৌপথ। কিন্তু দেশের বিভিন্ন স্থানে নৌপথের উপর সড়ক, রেল ও স্থানীয় সরকার বিভাগের একাধিক কম উচ্চতার সেতু রয়েছে। এর ফলে নৌপথে নৌ-চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বতর্মান সরকার নৌপথের যে গুরুত্ব দিয়েছে আগে এত গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তাই অনেক সংস্থা নৌমন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র ছাড়াই সেতু নির্মাণ করেছে। তাই সেসব স্থানে নৌচলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে সারা দেশের নৌপথের ওপর নির্মিত সেতুগুলো উচ্চতা সরেজমিনে পরিদর্শন মান নির্ণয় করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads