• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

যোগাযোগ

সড়ক ব্যবহারের চার্জ কমছে

ভারতকে প্রতি টনে কিলোমিটারপ্রতি এক টাকা ৮৫ পয়সা দিতে হবে

  • এম এ বাবর
  • প্রকাশিত ০৫ মার্চ ২০২১

পণ্য পরিবহনে কোনো ব্যবহার চার্জ ছাড়াই প্রায় এক বছর ধরে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর রুট ব্যবহার করছে ভারত। এ সময়ের মধ্যে সড়ক ব্যবহারে কী পরিমাণ চার্জ ধার্য হবে তা নিয়ে দেনদরবার চলছে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে। সম্প্রতি ভারতের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের প্রস্তাবিত চার্জের ওপর প্রতি কিলোমিটারে টনপ্রতি ২৫ পয়সা কমানোর প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ফ্রিতে আর নয়, প্রস্তাবিত চার্জ কার্যকর হলে আগামী অর্থবছরের শুরু থেকেই চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারে নির্ধারিত মাশুল দিতে হবে ভারতকে।

এর আগে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারে ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর চুক্তি সই করে ভারত। এর আওতায় গত জুলাইয়ে পরীক্ষামূলক পণ্য পরিবহন করে দেশটি। সে সময় সড়ক ব্যবহারে কোনো চার্জ নেওয়া হয়নি, যদিও এর আগেই বাংলাদেশের সড়ক ব্যবহারে প্রতি কিলোমিটারে টনপ্রতি ২ টাকা ১০ পয়সা হারে সড়ক ব্যবহার চার্জ প্রস্তাব করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। তবে ওই প্রস্তাবে আপত্তি ছিল ভারতের। সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনারকে পাঠানো এক চিঠিতে এ চার্জ কমানোর জন্য জানানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতি কিলোমিটারে টনপ্রতি চার্জ কমিয়ে ১ টাকা ৮৫ পয়সা চূড়ান্ত করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।

নতুন হার কার্যকর হলে রুটভেদে মাঝারি ট্রাকে (১৫ টন) সড়ক ব্যবহার চার্জ কমবে ৫৩৭ থেকে এক হাজার ৬৩৩ টাকা। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের এ প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য তা এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ে।

সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতে পণ্য পরিবহনে ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর ঢাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের মাঝে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন নৌপরিবহন সচিব ও ভারতের পক্ষে দেশটির নৌপরিবহন সচিব। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের সড়ক ব্যবহার করে ভারতের পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে কিলোমিটারপ্রতি দুই টাকা ১০ পয়সা মাশুল প্রস্তাব করা হয়। এর মধ্যে এক টাকা ৮৫ পয়সা সড়ক ব্যবহার মাশুল ও ২৫ পয়সা যানজট সৃষ্টি তথা কনজিশন মাশুল ২৫ পয়সা। বিদ্যমান টোল নীতিমালা বিবেচনায় এ প্রস্তাব করা হয়েছিল, যদিও ভারতীয় পক্ষ এ মাশুল কমানোর প্রস্তাব করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সড়ক ব্যবহার মাশুল কমিয়ে প্রতি টনে কিলোমিটারপ্রতি দুই টাকা প্রস্তাব করে, যা পরবর্তীসময়ে নৌপরিবহন সচিবকে জানানো হয়। তবে এ মাশুল চার্জ আরো কমানোর প্রস্তাব করে ভারত। এতে টোল নীতিমালার আওতায় প্রস্তাবিত মাশুল চার্জ প্রতি টনে কিলোমিটারপ্রতি এক টাকা ৮৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি আগের নির্ধারিত মাশুলের চেয়ে প্রতি টনে কিলোমিটারপ্রতি ২৫ পয়সা কম। এক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী সংশোধিত মাশুল চার্জ তখনই কার্যকর হবে, যখন তা অর্থ মন্ত্রণালয় অনুমোদন করবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন যুগ্মসচিব বলেন, গত ১ ফেব্রুয়ারি ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবকে এক ই-মেইল বার্তায় বাংলাদেশের সড়ক ব্যবহারে প্রতি টনে কিলোমিটারপ্রতি সড়ক ব্যবহার মাশুল চার্জ নির্ধারণের অগ্রগতি জানতে চান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই চিঠি দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতের পণ্য পরিবহনে সড়ক ব্যবহার মাশুল চার্জ নির্ধারণে গত ৩১ জানুয়ারি একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে প্রতি টনে কিলোমিটারপ্রতি সড়ক ব্যবহার মাশুল চার্জ এক টাকা ৮৫ পয়সা চূড়ান্ত করা হয়। বিষয়টি এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

সূত্রমতে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত ‘এগ্রিমেন্ট অন দ্য ইউজ অব চট্টগ্রাম অ্যান্ড মোংলা পোর্ট পল মুভমেন্ট অব গুডস টু অ্যান্ড ফ্রম ইন্ডিয়া’-এর আওতায় স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) সই করা হয় ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর। চুক্তির আর্টিকেল ৬-এ বন্দর ব্যবহারের জন্য ৮টি রুটের উল্লেখ রয়েছে। আর আর্টিকেল ৮-এ পণ্য পরিবহনের জন্য সড়ক ব্যবহারের মাশুল আদায় করা যেতে পারে।

গত ২৯ ডিসেম্বর ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎকার করে। সে সময় প্রতি কিলোমিটারে সড়ক ব্যবহার মাশুল টনপ্রতি এক টাকা ৮৫ পয়সা নির্ধারণের অনুরোধ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে কিলোমিটারপ্রতি সড়ক ব্যবহার মাশুল ও মাঝারি ট্রাকের (১৫ টন) জন্য প্রস্তাবিত মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রস্তাবনামতে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আখাউড়া পর্যন্ত সড়কপথের দৈর্ঘ্য ২৩০ কিলোমিটার। এক টাকা ৮৫ পয়সা হারে এ রুটে ১৫ টনের ট্রাকে সড়ক ব্যবহার মাশুল ধরা হয়েছে ছয় হাজার ৭০ টাকা। দুই টাকা ১০ পয়সা হারে এ মাশুল ধরা হয়েছিল ছয় হাজার ৮৮৭ টাকা। একইভাবে চট্টগ্রাম বন্দর-শেওলা রুটে সড়কপথের দৈর্ঘ্য ৪২৭ কিলোমিটার। এ রুটে ১৫ টনের ট্রাকে সড়ক ব্যবহার মাশুল ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৫৯৩ টাকা, যা আগের হারে ছিল ১০ হাজার ৮৭২ টাকা।

একইভাবে চট্টগ্রাম বন্দর-বিবিরবাজার রুটের দৈর্ঘ্য ১৫৫ কিলোমিটার ও চট্টগ্রাম বন্দর-তামাবিল রুটের দৈর্ঘ্য ৪৪২ কিলোমিটার। এ দুই রুটে ১৫ টনের ট্রাকে সড়ক ব্যবহার মাশুল ধরা হয়েছে যথাক্রমে তিন হাজার ৯৮৮ টাকা ও ১০ হাজার ৯ টাকা। আগের হারে এ দুই রুটে সড়ক ব্যবহার মাশুল ছিল যথাক্রমে চার হাজার ৫২৫ টাকা ও ১১ হাজার ৩৪৪ টাকা।

এদিকে মোংলা বন্দর-আখাউড়া রুটে সড়কপথের দৈর্ঘ্য ৩৪৯ দশমিক ৫০ কিলোমিটার। হ্রাসকৃত হারে এ রুটে সড়ক ব্যবহার মাশুল দাঁড়াবে ৯ হাজার ৬৯৯ টাকা, আগের হারে যা ছিল ১০ হাজার ৮৬৮ টাকা। একইভাবে মোংলা বন্দর-বিবিরবাজার রুটে ৩১৩ কিলোমিটারে মাশুল দাঁড়াবে আট হাজার ৬৮৬ টাকা। আগের হারে এ মাশুল ছিল ৯ হাজার ৮৬০ টাকা। এছাড়া মোংলা বন্দর-শেওলা রুটে ৪৯৪ কিলোমিটারের জন্য মাশুল পড়বে ১১ হাজার ৭৭৯ টাকা। আগের হারে এ মাশুল ছিল ১৩ হাজার ৩৫৬ টাকা। আর মোংলা বন্দর-তামাবিল রুটে সেতুসহ ৫০৯ দশমিক ৫০ কিলোমিটারে মাশুল পড়বে ১২ হাজার ১৯৫ টাকা, যা আগের হারে ছিল ১৩ হাজার ৮২৮ টাকা।

সড়ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ভারতের পণ্য বাংলাদেশের অভ্যন্তর দিয়ে চলাচলের ফলে সড়কে যানবাহনের চাপ বাড়বে। এতে সড়কের আয়ুষ্কাল কমবে, স্থায়িত্ব দ্রুত নষ্ট হবে ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বাড়বে। এসব বিষয় বিবেচনা করে সড়ক ব্যবহার মাশুল আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর সঙ্গে শুধুমাত্র সেতুগুলোর টোল যুক্ত হবে।

তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক ব্যবহারে পর্যায়ক্রমে টোল আরোপের কার্যক্রম চলছে। এটি শুরু হলে বাংলাদেশের মতো ভারতের পণ্যবাহী ট্রাকের ওপরও পৃথক টোল আরোপ করা হবে। সে সময় সড়ক ব্যবহার মাশুলের সঙ্গে টোলও যুক্ত হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads