• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

ছবি: সংগৃহীত

অপরাধ

সন্ত্রাসী কাজের জন্য রাখা বলে দাবি র‌্যাবের

উদ্ধার ১০ কোটি টাকা নিয়ে ধূম্রজাল

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৮ এপ্রিল ২০১৮

রাজধানীর ইস্কাটনে এক ব্যবসায়ীর বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া ১০ কোটি টাকা নিয়ে শুরু হয়েছে ধূম্রজাল। কেউ বলছে হুন্ডির টাকা, র‌্যাব বলছে নাশকতার কাজে ব্যবহারের জন্য ওই টাকা বাসায় রাখা হয়েছিল। তবে পরিবার বলছে, গাজীপুরে তাদের স্পিনিং মিলে আগুন লাগায় টাকাগুলো বাসায় এনে রাখা হয়। পুলিশ টাকার মালিক মোশারফ হোসেনকে আটক করতে পারেনি। র্যাব ও পুলিশ বলছে তিনি পালিয়ে গেছেন। আর পরিবারের দাবি, তিনি পালাননি গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এর আগে র্যাব জানায়, নাশকতার কাজে অর্থ ব্যবহার পরিকল্পনার সংবাদ পেয়েই ওই ব্যবসায়ীর বাসায় মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে অভিযান চালায় তারা। বাসা থেকে ১০ কোটি টাকা উদ্ধার হলেও মোশারফকে আটক করতে পারেনি র্যাব। পরিবারের ঘনিষ্ঠজনরা সাংবাদিকদের জানান, সম্প্রতি তার মালিকানাধীন মিলে আগুন লাগলে ওই প্রতিষ্ঠানের টাকা বাসায় এনে রাখা হয়।

এদিকে উদ্ধার হওয়া টাকা জব্দ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে রমনা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে র্যাব।  বৃহস্পতিবার এসব টাকা আদালতের অনুমতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিয়েছে পুলিশ। পুলিশের রমনা জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। এর তদন্ত চলছে। অন্যদিকে র্যাবের করা মামলায় দাবি করা হয়, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য এই টাকা বাসায় জমা করা হয়েছিল। তবে টাকাগুলো কোথা থেকে আনা হয়েছে বা কোথায় পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল, তা জানতে পারেননি র্যাব কর্মকর্তারা।

আলোচিত মোশারফ হোসেন বড় ব্যবসায়ী। অভিযানের সময় তিনি বাসায় ছিলেন না। ঢাকার উপকণ্ঠে তার একাধিক স্পিনিং মিল রয়েছে। র্যাব-২-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আনোয়ার উজ জামান সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল সাত-আট দিন আগে ওই বাসায় ট্রলিব্যাগে করে বিপুল পরিমাণ টাকা মজুত করা হয়েছে। ব্যবসায়ীর স্ত্রী নাসরিন হোসেন টাকার উৎস সম্পর্কে কোনো তথ্য জানাতে পারেননি। র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, টাকার মালিক এগুলোর উৎস সম্পর্কে আদালতকে যথাযথ প্রমাণ দেখাতে পারলে সেখান থেকে টাকা ছাড়িয়ে নিতে পারবেন। আমরাও অনুসন্ধান করছি টাকাগুলো কেন তিনি মজুত করেন।

১০ কোটি টাকা উদ্ধারের ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে রমনা থানায় র্যাব-২-এর পুলিশ পরিদর্শক রুহুল কুদ্দুস বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এজাহারে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার মধ্যরাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-২-এর টিম জানতে পারে ৪১ নম্বর নিউ ইস্কাটন রোডের ইস্টার্ন গার্ডেন অ্যাপার্টমেন্টের ১১তলায় ১০০২ নম্বর ফ্ল্যাটে নাশকতার জন্য বিপুল অর্থ মজুত আছে। রাত ৩টা ৪০ মিনিটে ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে মোশারফ হোসেনের স্ত্রী নাসরিন হোসেনের কাছে টাকার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে একটি কক্ষ থেকে চারটি ট্রলিব্যাগ উদ্ধার করা হয়। এগুলোর তালা খুলে ভেতর থেকে মোট ১০ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়। এজাহারে বলা হয়েছে, মোশারফ হোসেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও নাশকতা করার জন্য অর্থ মজুত করে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের (সংশোধনী/২০১৩) ৭ ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

জানা গেছে, এই ব্যবসায়ী মোশারফ গ্রুপ নামে একটি গ্রুপ অব কোম্পানিজের চেয়ারম্যান। মুন্সীগঞ্জ সদর থানার রামপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোশারফ এক সময় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তার মালিকানাধীন গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো হলো মোশারফ কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, মোশারফ টুইস্টিং অ্যান্ড নিটিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, সোনালি টুইস্টিং অ্যান্ড নিটিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, একতা কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেড, নাটোর কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেড, মোশারফ ব্রাদার্স, আসুসেম, আবীর এন্টারপ্রাইজ, হাকিম অ্যান্ড সন্স, ক্রাউন টুইস্টিং ইন্ডাস্ট্রিজ। ইস্কাটন গার্ডেন সড়কের বোরাক টাওয়ারের ৮তলায় প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়। এ ব্যাপারে জানতে গণমাধ্যমকর্মীরা মোশারফ হোসেনের বাসা ও প্রতিষ্ঠানে গেলেও বিষয়টি নিয়ে কেউ কথা বলতে রাজি হননি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads