• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯

ছবি: বাংলাদেশের খবর

অপরাধ

ভুল চিকিৎসায় ঝরে যাচ্ছে নবজাতকের জীবিন 

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ২৯ এপ্রিল ২০১৮

চিকিৎসকদের অবহেলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না নবজাতকরাও। ভুল চিকিৎসার কারণে অনেকে জন্মের পরপরই মারা যাচ্ছে, কেউ কেউ শিকার হচ্ছে বড় ধরনের শারীরিক ক্ষতির। মায়ের গর্ভেও ভুল চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে শিশু। এমনকি জীবিত নবজাতককে চিকিৎসকের ‘মৃত’ ঘোষণায় দাফনের সময় নড়ে ওঠার চাঞ্চল্যকর ঘটনাও ঘটছে।

রাজধানীর অভিজাত হাসপাতাল থেকে শুরু করে মফস্বল শহরের চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোয়ও একের পর এক এসব ঘটনা ঘটছে। ভুল চিকিৎসায় নবজাতক মৃত্যুর ঘটনা বাড়ায় শঙ্কিত রোগী ও তার স্বজনরা। অনুসন্ধানে দেখা যায়,  পাঁচ বছরে অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় শিশুমৃত্যুর ঘটনার সংখ্যা প্রায় ৫০০। মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার তথ্য মতে, চার বছরে চিকিৎসকের অবহেলার পাশাপাশি ভুল চিকিৎসায় মারা গেছে অন্তত সাড়ে চারশ’ শিশু। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি।

ভুল চিকিৎসায় সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুদের মৃত্যুর কোলে ঠেলে দেওয়া হলেও দেশের প্রচলিত আইনে দায়ী চিকিৎসক ও হাসপাতাল মালিকদের যথাযথ শাস্তি দেওয়ার তেমন নজির নেই। জবাবদিহির অভাবে একশ্রেণির চিকিৎসক ও হাসপাতাল ব্যবসায়ীর দৌরাত্ম্য বাড়ছে। নিজেদের দোষ ঢাকতে তারা মৃত্যুসনদে (ডেথ সার্টিফিকেট) শিশুর মৃত্যুর ভিন্ন কারণ দেখাচ্ছেন। এমনকি শিশুর অভিভাবক, স্বজনদের হুমকি দেওয়াসহ নানা ধরনের কৌশলী ভূমিকা নিচ্ছেন। এর ফলে প্রায়ই হাসপাতালে ভাঙচুর, হাতাহাতিসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে।

বিষয়টি দেখার দায়িত্ব ‘বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের’ (বিএমডিসি)। অথচ প্রতিষ্ঠানটি এ বিষয়ে অনেকটা ‘নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে’। প্রতিনিয়ত ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর মিছিল বাড়লেও বিএমডিসিতে অভিযোগের সংখ্যা হাতেগোনা। ভুক্তভোগী কয়েকটি পরিবারের সদস্যরা জানান, বিএমডিসি কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির ওপর তারা আস্থা হারিয়েছেন। এ ছাড়া অনেকেই প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম সম্পর্কে কোনো ধারণা রাখেন না। ফলে তারা সেখানে অভিযোগও করেন না। এ বিষয়ে বিএমডিসির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘বিএমডিসি কোনো অভিযোগ পেলে তাতে গুরুত্ব দেয়।’

বাড়ছে জীবিতকে ‘মৃত’ ঘোষণার ঘটনা : ২৩ এপ্রিল সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে একটি শিশু জন্ম নেয়। দায়িত্বরত চিকিৎসকরা শিশুটিকে ‘মৃত’ ঘোষণা করেন। দাফনের জন্য ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে নিয়ে গোসল করানোর সময় শিশুটি নড়ে ওঠে। পরে ঢাকা শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।

২০১৬ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে জীবিত নবজাতককে ‘মৃত’ হিসেবে ঘোষণার পর দাফনের সময় নড়ে ওঠে। একই বছরের সেপ্টেম্বরে ফরিদপুরে একটি হাসপাতালে অপরিণত অবস্থায় জন্ম নেওয়া একটি শিশুকে মৃত ঘোষণা করলেও দাফনের সময় কেঁদে ওঠে শিশুটি। একই বছরের অক্টোবরে চট্টগ্রামের সিএসসিআর হাসপাতালে জীবিত নবজাতককে ‘মৃত’ ঘোষণায় মৃত্যুসনদ (ডেথ সার্টিফিকেট) দেওয়ার দায়ে হাসপাতালটির দুই চিকিৎসককে সাময়িক বরখাস্ত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

ভুল চিকিৎসায় নবজাতক মৃত্যুর যত অভিযোগ : চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল রাজশাহীর পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসকদের অবহেলায় ১০ মাস বয়সী একটি শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ করেন স্বজনরা। ২০ এপ্রিল ঢাকার কেরানীগঞ্জের ‘খাড়াকান্দি মেডিকেল সেন্টার’ নামে একটি ক্লিনিকে নতুনচর খাড়াকান্দি এলাকার গৃহবধূ রেজিয়া বেগমের সন্তান ভুল চিকিৎসায় গর্ভে মারা যায়।

২০১৭ সালের নভেম্বরে যমজ সন্তানের একটিকে প্রসূতির গর্ভে রেখে অস্ত্রোপচার শেষ করে সেলাই করে দেওয়ার ঘটনা ঘটে কুমিল্লার গৌরীপুরের লাইফ হাসপাতাল ও ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। ২০১৭ সালের বছরের ২১ ডিসেম্বর দেশের তিনটি হাসপাতালে একই দিন ভুল চিকিৎসায় তিনটি নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। এগুলো হলো— কুমিল্লা নগরীর মিডল্যান্ড হাসপাতাল, বাগেরহাটের চিতলমারী বাজারের ডা. ফারুক হোসেন ক্লিনিক ও নরসিংদীর সততা হাসপাতালে। একই বছরের ২২ ডিসেম্বর কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় রয়েল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। ঢাকার গ্রিন রোডের সেন্ট্রাল হাসপাতালে ২৪ জুন এক নবজাতকের মৃত্যু হয় ভুল চিকিৎসায়।

ঢাকার ৫০০ শয্যার মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় ২০১৬ সালের ২১ মার্চ মা ও গর্ভজাত শিশুর মৃত্যু হয় বলে নিহতের স্বজনরা অভিযোগ করেন। ২০১৫ সালে ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টায় ১০ শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads