• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশে মাদকবিরোধী অভিযানে 'বন্দুকযুদ্ধে' আরো নয়জন নিহত হয়েছেন

প্রতীকী ছবি

অপরাধ

মাদকবিরোধী অভিযান

'বন্দুকযুদ্ধে' সারা দেশে আরো নিহত ৯

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৭ মে ২০১৮

চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে দেশের বিভিন্ন জেলায় র‌্যাব ও পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আরো অন্তত নয়জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহত এই ব্যক্তিদের মধ্যে কক্সবাজারের টেকনাফের একজন পৌর কাউন্সিলরও রয়েছেন বলে জানা গেছে। শনিবার রাতের অভিযানে এরা নিহত হন। এছাড়া চট্টগ্রাম, খুলনা, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, চাঁদপুর, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ ও নোয়াখালীতে নিহত হয়েছেন বাকি আটজন।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযানে নামার পর ১৯ মে রাত থেকে এ কয়দিনে অন্তত ৭৭ জন নিহত হলেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, নিহতরা সবাই মাদক কেনা-বেচায় জড়িত। কিন্তু তাদের বক্তব্য ও ঘটনার বিবরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

কক্সবাজারের টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নোয়াখালিয়াপাড়া এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে নিহত হয়েছেন টেকনাফ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর একরামুল হক (৪৬)। তিনি উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মাদক ব্যবসায়ীর তালিকায় একরামের নাম রয়েছে বলে র‌্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

র‌্যাবের দাবি, দেড়টার দিকে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের পর ঘটনাস্থলে একরামুলের মৃতদেহ পাওয়া যায়। ঘটনাস্থল থেকে ১০ হাজার ইয়াবা, একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ওয়ানশুটার গান, ছয় রাউন্ড গুলি ও পাঁচটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে তারা।

র‌্যাব-৭ এর কক্সবাজার ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘নোয়াখালিয়াপাড়ায় একটি মাদক চক্রের লোকজন ইয়াবার চালান লেনদেনের জন্য জড়ো হয়েছে খবরে র‌্যাবের একটি দল অভিযান চালায়। এ সময় র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক চক্রের লোকজন এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করতে থাকে। আত্মরক্ষার্থে এক পর্যায়ে র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। এতে মাদক চক্রের লোকজন পিছু হটে পালিয়ে গেলে ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পৌর কাউন্সিলর একরামুল হকের মৃতদেহ পাওয়া যায়।’

পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে সীতাকুণ্ডে রায়হান উদ্দিন (২৮) নামে একজন নিহত হন। রাত ১টার দিকে এই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। তার বিরুদ্ধে খুন, ডাকাতি ও মাদকের সাতটি মামলা রয়েছে বলে সীতাকুণ্ড থানার ওসি সৈয়দ ইফতেখার হাসান নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘ইয়াবা পাচারের খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল রাত ১টার দিকে নড়ালিয়া বেড়িবাঁধ এলাকায় অভিযানে যায়। সেখানে ইয়াবা পাচারকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এক পর্যায়ে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। পরে সেখানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রায়হানের মৃতদেহ পাওয়া যায়।’

রায়হানের তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। তিনি জানান, ঘটনাস্থল থেকে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র, পাঁচ হাজার ইয়াবা, ২০ রাউন্ড গুলি ও দুটি ধারাল অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত রায়হানের বাড়ি সীতাকুণ্ডের গোলবাড়িয়া এলাকায়।

পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে শনিবার ভোর রাতে মতলব দক্ষিণে সেলিম (৩৭) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে সাতটি মাদক মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশের দাবি, থানা ও ডিবি পুলিশের একটি যৌথ দল মতলব সড়কের হাজীর ডোন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সেলিমকে আটক করে। এ সময় সেলিমের সহযোগীরা পুলিশের উপর গুলি ও হামলা চালায়। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এতে সেলিম গুলিবিদ্ধ হলে তাকে মতলব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।’

ঘটনাস্থল থেকে ৪ রাউন্ড গুলি, ৬ রাউন্ড কার্তুজ, ১১০টি ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধারে কথা জানিয়েছে পুলিশ। বন্দুকযুদ্ধে চার পুলিশ সদস্য আহত হন বলেও জানা গেছে। নিহত সেলিম মতলব দক্ষিণ উপজেলার উপাদী ইউনিয়নের সালামত উল্যাহর ছেলে।

শৈলকুপায় রফিকুল ইসলাম লিটন ( ৪০ ) নামে একজনের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া গেছে। পুলিশের দাবি, তিনি চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা। রাত ১টার দিকে রাত ১টার দিকে গোলাগুলির খবর পেয়ে মহাসড়কে থাকা টহল পুলিশ সেখানে পৌঁছে। ঘটনাস্থলে  একজনের গুলিবিদ্ধ লাশ  পড়ে থাকতে দেখে। পরে তার পরিচয় জানতে পারেন তারা। লিটন শৈলকুপা উপজেলার  শেখপাড়া গ্রামের হাকিম মোল্লার ছেলে। তার বিরুদ্ধে ১০টি মাদকের মামলাসহ ১২টি মামলা আছে।

তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে ১টি ওয়ান শুটার গান, ৫ রাউন্ড গুলি, অনেকগুলো ব্যবহৃত গুলির খোসা, ১০ বোতল ফেন্সিডিল ও ৪০০টি ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।

গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে অজ্ঞাত পরিচয়ের এক যুবক নিহত হয়েছেন। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আশিকুর রহমান বলেন, ‘রাত দেড়টার দিকে নগরীর মরাখলা এলাকায় মাদক বিক্রেতারা মাদক ভাগাভাগি করছে বলে খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। এক পর্যায়ে মাদক বিক্রেতারা পিছু হটলে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একজনকে পাওয়া যায়।‘

বন্দুকযুদ্ধে কনস্টেবল হুমায়ূন এবং আমির হামজা আহত হন বলে ডিবির ওসি জানান। ঘটনাস্থল থেকে ১০০ গ্রাম হেরোইন, ৪টি গুলির খোসা, ২টি রামদা, ১০০টি ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধারের কথাও জানান তিনি।

পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন সোনাইমুড়ি উপজেলায় হাসান নামে এক ব্যক্তি। বানুয়াই গ্রামের মৃত হানিফ মিয়ার ছেলে হাসানের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক কেনা-বেচাসহ বিভিন্ন অপরাধে ২১টি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানায়।

ভোররাতে বগাদিয়া ইস্তেমা মাঠ এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে হাসানের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘রাত ৩টার দিকে বগাদিয়ায় মাদকবিরোধী অভিযান চলাকালে হাসান ও তার সহযোগীদের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘটনাস্থলে হাসান মারা যায়।’ বন্দুকযুদ্ধে তিন পুলিশ সদস্য আহত হন বলে অতিরিক্ত এসপি জানান। ঘটনাস্থল থেকে একটি এলজি,৭ রাউন্ড কার্তুজ ও ১২০টি ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।

কথিত বন্দুকযুদ্ধে আবুল কালাম মোল্লা (৪০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন খুলনার দিঘলিয়া উপজেলায়। কালামের বিরুদ্ধে পাঁচটি মাদক মামলা রয়েছে বলে খুলনার পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ জানান। তার বাড়ি যশোরের অভয়নগর উপজেলার সিদ্দিপাশা গ্রামে।

পুলিশ সুপার বলেন, ‘কালাম উপজেলার বারাকপুর গ্রামে তার ভগ্নিপতির বাড়িতে আত্মগোপন করে ছিলেন। খবর পেয়ে ১০০ ইয়াবাসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে বারাকপুর নদীর কূলে শ্মশান ঘাটে কালামকে নিয়ে মাদক উদ্ধারে গেলে কালামের সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি করে। এক পর্যায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে কামালের মৃত্যু হয়।’

ঘটনাস্থল থেকে একটি শটগান, একটি হাতবোমা, এক রাউন্ড গুলি ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।

পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে সদর উপজেলায় হালিম মণ্ডল (৩৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি নাসির উদ্দিন জানান, শহরের হাউজিং ডি ব্লক মাঠে রাত দেড়টার দিকে এ গোলাগুলির ঘটনায় নিহত ওই ব্যক্তি সদর উপজলার বড়িয়া গ্রামের সেলিম মণ্ডলের ছেলে। হালিম পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী বলে এ পুলিশ কর্মকর্তার ভাষ্য।  

ওসি নাসির বলেন, ‘মাদক কেনাবেচার জন্য একদল মাদক বিক্রেতা সদরের হাউজিং ডি ব্লক মাঠে অবস্থান করছে খবরে সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় মাদক বিক্রেতারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে পুলিশও পাল্টা গুলি করে। ‘এক পর্যায়ে মাদক বিক্রেতারা পিছু হটলে হালিমকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। তাকে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক হালিমকে মৃত ঘোষণা করেন।’

ঘটনাস্থল থেকে একটি শুটারগান, একটি পাইপ গান, তিন রাউন্ড গুলি ও ৮০০ ইয়াবা উদ্ধারের কথাও জানিয়েছে পুলিশ। এছাড়া এ ঘটনায় চার পুলিশ সদস্য আহত হলে তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয় বলে ওসি নাসির জানান।

বাঘেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন মিটুল বিশ্বাস (৪৫) নামে এক ব্যক্তি। তিনি ওই উপজেলার কলাতলা ইউনিয়নের চিংগুড়ি গ্রামের খোকা বিশ্বাসের ছেলে। মিটুলের বিরুদ্ধে নয়টি মাদক, একটি হত্যা, তিনটি পুলিশের ওপর হামলার মামলাসহ মোট ২০টি মামলা রয়েছে বলে চিতলমারী থানার ওসি অনুকুল চন্দ্র সরকার জানান।

ঘটনাস্থল থেকে শুটারগান, দুই রাউন্ড গুলি, দুই কেজি গাঁজা ও ১০০টি ইয়াবা উদ্ধারের কথাও জানিয়েছেন ওসি।লাশ ময়নাতদন্তের জন্য বাগেরহাট সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads