• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
এবার দেড় শতাধিক নামের তালিকা নিয়ে মাঠে দুদক

লোগো দুর্নীতি দমন কমিশনও দুদক

সংরক্ষিত ছবি

অপরাধ

এবার দেড় শতাধিক নামের তালিকা নিয়ে মাঠে দুদক

  • সাঈদ আহমেদ
  • প্রকাশিত ২৯ মে ২০১৮

সরকারের চলমান মাদকবিরোধী যুদ্ধ কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি রেখে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) বেআইনি মাদক ব্যবসার মাধ্যমে অর্থসম্পদের মালিক হওয়া ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছে। দুদকের এ অভিযানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (নারকোটিকস) কর্মকর্তা-কর্মচারী, মাদকের পৃষ্ঠপোষকতা দানকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও বাদ পড়বে না।

দুদক সচিব ড. শামসুল আরেফিন বলেন, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সম্পদ অর্জন দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ। এ কারণেই মাদক ব্যবসার মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীদের শায়েস্তা করতে আইনি ব্যবস্থা নেবে দুদক।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে গত বছর নভেম্বরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কাছে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা চেয়ে পাঠায় দুদক। একই বছরের ডিসেম্বরে অধিদফতর দুদকে একটি গোপন প্রতিবেদন পাঠায়। ওই প্রতিবেদনে খোদ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, পুলিশসহ ১৪১ মাদক ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম উঠে আসে। প্রতিবেদনটি নিয়ে চার মাস হোমওয়ার্ক করে দুদক।

তালিকায় সরকারি ও বিরোধী দলের রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি, সরকারস্বীকৃত বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, ধনকুবের ও কতিপয় আমলার নামও রয়েছে।

এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক জামালউদ্দীন আহমেদ বাংলাদেশের খবরকে জানান, দুদক আমাদের কাছে মাদক ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তালিকা চেয়েছিল। আমরা প্রতিবেদন আকারে সেটি দিয়েছি। ওই সংস্থার তফসিলভুক্ত যেসব উপকরণ রয়েছে সেটি ধরে তারা ব্যবস্থা নিতে পারে। মাদক ব্যবসায় বিপুল অবৈধ অর্থের লেনদেন রয়েছে। সে হিসাবে দুদক এ ক্ষেত্রে বড় একটি ভূমিকা পালন করতে পারে।

শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের জেলাওয়ারি তালিকা ধরে কাজ করছে দুদক। এর মধ্যে মাদক ব্যবসায় ‘সমৃদ্ধ অঞ্চল’ হিসেবে রয়েছে টেকনাফ, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম। ওই এলাকার সরকারদলীয় এমপি ও তার পাঁচ ভাইয়ের নাম রয়েছে। এমপির পরিবারের সদস্য, তার সহকারী এবং ঘনিষ্ঠ কয়েকজন রয়েছেন।

দুদকে আসা গোপন ওই প্রতিবেদনে সরকারদলীয় এমপি সম্পর্কে বলা হয়, তিনি ইয়াবা ব্যবসাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনে জড়িত আছেন। মিয়ানমার থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে আসা ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে একচ্ছত্র অধিপতি তিনি।

প্রতিবেদনে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সাইফুল করিম ওরফে হাজী সাইফুল সম্পর্কে বলা হয়, তিনি ইয়াবার আন্তর্জাতিক চোরাকারবারি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যবসা করে আসছেন হাজী সাইফুল। তিনি এখন শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। এস কে ইন্টারন্যাশনাল নামক প্রতিষ্ঠানের আড়ালে তিনি এ ব্যবসা করেন। তিনি একজন সিআইপি এবং রাজনৈতিকভাবে সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত। কাজীর দেউড়ি ভিআইপি টাওয়ারে তার রয়েছে একাধিক বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট। কক্সবাজারের কলাতলী পয়েন্টে তার মালিকানাধীন হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের নির্মাণকাজ শেষের দিকে।

টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমেদ ওরফে জাফর এবং তার ছেলে মোস্তাকও আছেন দুদকে আসা তালিকায়। ইয়াবা ব্যবসার মাধ্যমে তিনিও গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। তালিকায় নাম থাকলেও বাপ-বেটা দুজনেই লোকচক্ষুর আড়ালে। এর মধ্যে ছেলে মোস্তাক দীর্ঘদিন ‘নিখোঁজ’ রয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

এ ছাড়া তালিকার ৭ নম্বরে রয়েছেন জাফর ওরফে টিটি জাফর। অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর ছেলে রাশেদ ও মাহবুব মোরশেদের নাম রয়েছে যথাক্রমে ১১ এবং ৪৭ নম্বরে।

মাদক ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন মীর কাশেম মেম্বার। সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর হোসেনের ভাই সৈয়দ হোসেনও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে মালিক হয়েছেন অঢেল সম্পদের। বদির বড় বোনের দেবর আক্তার কামাল (সম্প্রতি নিহত) এবং শহীদ কামাল রয়েছেন তালিকার ২০ নম্বরে। দুদকের দৃষ্টি তাদের দিকেও।

৩২ নম্বরে রয়েছেন মৌলভি আজিজের নাম। স্থানীয়ভাবে তিনি ‘দানবীর’ হিসেবে পরিচিতি পেলেও তার অর্থের উৎস খুঁজছে এ সংস্থা। তালিকার ৮৪ নম্বরে আছেন বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি রেহানা আক্তারের ভাতিজা ইসমাইল হোসেন।

এদিকে ঢাকা ও শহরতলির মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে রয়েছেন মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পের ইশতিয়াক, রামপুরা থানা যুবলীগ নেতা তানিম ও মেরুল বাড্ডার স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জয়নালসহ ৩২ জন। রাজশাহী বিভাগের ২১ শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর অর্থবিত্তের খোঁজ নিচ্ছে দুদক। এ ছাড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ৯ কর্মকর্তা এবং পুলিশের কয়েকজন সদস্য রয়েছেন মাদক ব্যবসার ‘সহযোগী’দের তালিকায়। দুদকের নিশানায় রয়েছেন তারাও।

মাদক ব্যবসায়ীদের অবৈধ অর্থসম্পদের বিষয়ে দুদকের বিশেষ অভিযান সম্পর্কে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, যেকোনো অপরাধ সংগঠনের পেছনেই অর্থযোগ রয়েছে। অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থই অবৈধ ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যয় হয়। দুদকের জন্য অত্যন্ত যৌক্তিক মাদক ব্যবসায়ীদের অর্থবিত্তের উৎস খতিয়ে দেখা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads