• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
পাহাড়ে চলছে খুনের বদলা খুন

পাহাড়ে চলছে খুনের বদলা খুন

সংরক্ষিত ছবি

অপরাধ

পাহাড়ে চলছে খুনের বদলা খুন

  • জীতেন বড়ুয়া, খাগড়াছড়ি
  • প্রকাশিত ৩০ মে ২০১৮

আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পার্বত্য অঞ্চল। একের পর এক খুন, গোলাগুলিতে আতঙ্কিত পাহাড়ি জনপদ। আতঙ্কে ইতোমধ্যে ঘর ছেড়েছেন সহস্রাধিক যুবক। এসবের নেপথ্যে রয়েছে পাহাড়ি চার সংগঠনের মধ্যে কোন্দল ও বদলা খুন। সংগঠনগুলোর আধিপত্য বিস্তার ও বদলার ঘটনায় গত ছয় মাসে প্রাণ হারিয়েছেন ২৪ জন।

সর্বশেষ গত সোমবার রাঙামাটির সাজেকে পাহাড়ি সংগঠনগুলোর আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে খুন হয়েছেন তিনজন। গতকাল মঙ্গলবার খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে মরদেহগুলোর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন আবাসিক চিকিৎসক নয়নময় ত্রিপুরা। করল্যাছড়ি এলাকায় ওই তিন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) কর্মীকে হত্যার ঘটনায় জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) ও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিককে দায়ী করেছে সংগঠনটি।

এর আগে গত ৩ মে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হন নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) সহসভাপতি শক্তিমান চাকমা। পরদিন তার শেষকৃত্যে যোগ দেওয়ার পথে প্রতিপক্ষের ব্রাশফায়ারে নিহত হন ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক দলের প্রধান তপন জ্যোতি চাকমা, একই দলের কেন্দ্রীয় নেতা কনক চাকমা, সুজন চাকমা ও সেতু লাল চাকমা। এ ছাড়া নিহত হন তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসের চালক মো. সজীব। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ইউপিডিএফকে দায়ী করে সংগঠন দুটি।

শুধু এই ঘটনাগুলোই নয়, সম্প্রতি পাহাড়ে ঘটা প্রত্যেকটি হত্যাকাণ্ডের পেছনে রয়েছে আধিপত্য বিস্তার ও বদলার ঘটনা। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন রয়েছে চারটি— পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ), জনসংহতি সমিতি সংস্কারবাদী (এমএন লারমা) ও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক।

গত বছরের ১৫ নভেম্বর ইউপিডিএফ ভেঙে ‘ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক’ নামে নতুন দল আত্মপ্রকাশ করার পর নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে প্রতিশোধমুখী সংঘাতের সূচনা ঘটে। খাগড়াছড়ি জেলা শহরে স্লুইসগেট এলাকায় ইউপিডিএফ সংগঠক মিথুন চাকমাকে খুন দিয়ে শুরু। এরপর ইউপিডিএফ ও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকের মধ্যে শুরু হয় অঘোষিত যুদ্ধ। এ যুদ্ধে প্রতিনিয়ত ঝরছে তরতাজা প্রাণ। গত এক মাসে খুন হয়েছেন ৯ জন।

স্থানীয়রা জানান, সংগঠনগুলোর নিজেদের মধ্যে অস্ত্রের লড়াইয়ে খাগড়াছড়ি জেলার পেরাছড়া, তেঁতুলতলা, পানছড়ি উপজেলার লোগাং, কুড়াদিয়াছড়া, লতিবানসহ চাকমা অধ্যুষিত পাহাড়ি পল্লীগুলোতে এখন যুবকরা ঘরছাড়া। অভিযোগ রয়েছে, এসব যুবককে জোরপূর্বক দলে যোগ দিতে বাধ্য করছে ইউপিডিএফ। তবে ইউপিডিএফের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

এসব ঘটনায় সাধারণ পাহাড়িরা ছাড়াও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা চরম আতঙ্কে রয়েছেন। বিশেষ করে খাগড়াছড়ির পানছড়ি ও সদর উপজেলার কয়েকজন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নিয়মিত কার্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।

যেখান থেকে সংঘাতের শুরু : ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকারের সঙ্গে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতি পার্বত্য শান্তি চুক্তি সই করলে এর বিরোধিতা করে প্রসিত চাকমার নেতৃত্বাধীন একদল পাহাড়ি ছাত্র ও যুবক। ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে তাদের নেতৃত্বে গঠিত হয় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। ২০০৭ সালে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতি ভেঙে রূপায়ণ দেওয়ান, সুধাসিন্ধু খীসা, শক্তিমান চাকমা ও তাতীন্দ্র লাল চাকমাসহ কিছু নেতাকর্মীর নেতৃত্বে গঠিত হয় জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা)। সর্বশেষ ২০১৭ সালে ইউপিডিএফ ভেঙে আত্মপ্রকাশ করে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক।

দলগুলোর মধ্যে আধিপত্য বিস্তার ও বদলার ঘটনায় গত দুই দশকে প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী ও সমর্থক। ২০১৫ সালে জনসংহতি সমিতি ও ইউপিডিএফের মধ্যে অলিখিত সমঝোতা হলে সংঘাত বন্ধ হয়। কিন্তু গত বছর ইউপিডিএফ ভাঙার পর সংঘাত নতুন মাত্রা পায়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads