• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
রাশেদকে গ্রেফতারের আগে গুমের হুমকি দেয় ছাত্রলীগ

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান

সংরক্ষিত ছবি

অপরাধ

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ

রাশেদকে গ্রেফতারের আগে গুমের হুমকি দেয় ছাত্রলীগ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৮ জুলাই ২০১৮

কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খানকে গ্রেফতারের আগের দিন গুম করার হুমকি দিয়েছিল ছাত্রলীগ। গতকাল শনিবার বিকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন রাশেদের পরিবারের সদস্যরা।

সংবাদ সম্মেলনে রাশেদসহ গ্রেফতার হওয়া সব আন্দোলনকারীর মুক্তি দাবি করা হয়। রাশেদের বাবা নবাই বিশ্বাস বলেন, ‘রাশেদকে গ্রেফতারের আগের দিন ঝিনাইদহ ছাত্রলীগের সভাপতি রানা আমার মোবাইল নম্বরের জন্য কয়েকজনকে আমাদের বাড়িতে পাঠায়। এরপর ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ আমার মোবাইলে ফোন দেয়। ফোনে বলে- আপনি কেমন সন্তান জন্ম দিয়েছেন, সে তো একটা কুলাঙ্গার। ছেলেকে এসব থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন, নাহলে গুম করে দেওয়া হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এরপর মোটরসাইকেলে চড়ে ১০ জন আমাদের বাড়িতে আসে। ছেলেকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমার ঘাড় ধরে হুমকি দিয়ে যায়। পরদিন আমার ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ছেলের খোঁজে শাহবাগ থানায় গেলে আমাদের দেখে তারা হাসেন। আমরা এখন পর্যন্ত রাশেদের সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। কোথায় আছে, কী অবস্থায় আছে? আমরা কিছুই জানি না। ওরা বলে, আমি জামায়াত-শিবিরের লোক, আমি নাকি রাজাকার। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল মাত্র ছয় মাস। আমি একজন সাধারণ দিনমজুর, কাজ করে খাই। আমার এবং পরিবারের সদস্যদের কোনো নিরাপত্তা নেই; আমরা নিরাপত্তা চাই।’

রাশেদের স্ত্রী রাবেয়া বলেন, ‘গ্রেফতারের দিন বেলা ১২টার দিকে রাশেদ আমাকে ফোন দিয়ে খাবার রেডি করতে বলে। আধঘণ্টা ধরে একজন লোক ঘোরাঘুরি করছে ও রাশেদকে খুঁজছে- এ কথা তাকে জানালে সে ভয় পেয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর রাশেদকে তারা টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায়।’

তিনি আরো বলেন, ‘তাকে (রাশেদ) নিয়ে যাওয়ার পর দৌড়ে থানায় যাই। কিন্তু সেখানে তারা কিছু জানাতে পারেনি। অথচ রাশেদকে যারা ধরে নিয়ে গেছে তাদের থানা থেকে বের হতে দেখেছি। কিন্তু ওসি সাহেব বলেছেন, উনি তাদের চেনেন না।’ তিনি বলেন, ‘পরের দিন আমরা শাহবাগ থানায় যাই। সেখানে খোঁজ করতে গেলে তারা আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করে। পরে আমরা সুপ্রিম কোর্টে যাই, জজ কোর্টে যাই। দেখি দুজন ডিবির লোক তাকে (রাশেদ) টেনে কোর্টে নিয়ে যাচ্ছে।’

ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়াসহ ২০ জন আইনজীবী বিনামূল্যে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের পক্ষে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। রাবেয়া বলেন, ‘গতকাল (শুক্রবার) স্যার (জ্যোতির্ময় বড়ুয়া) জানান, ওদের (রাশেদ) ব্যাপারে তাদেরও কিছু জানানো হচ্ছে না।’ রাশেদের সঙ্গে পুলিশ সেদিন আরেকজনকে তুলে নিয়েছিল বলে জানান রাবেয়া। তিনি বলেন, ‘রাশেদের সঙ্গে মাহফুজকেও তুলে নেওয়া হয়। মাহফুজের কোনো খোঁজ নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তারা, অথচ কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজ নেয়নি। আমরা রাশেদসহ গ্রেফতার হওয়া সবার মুক্তি চাই। তাদের পরীক্ষা বাকি আছে, সেটা দিতে দেওয়া হোক।’

রাশেদের মা সালেহা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘অন্যের বাড়িতে কাজ করে একমাত্র ছেলেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করেছিলাম। অথচ বিনা আপরাধে সেই ছেলের হাতে হাতকড়া পরানো হয়েছে।’ সংবাদ সম্মেলনে রাশেদের বোন সোনিয়া ও ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

গত ৩০ জুন মিরপুর ১৪ নম্বরের ভাষানটেক এলাকা থেকে রাশেদকে গ্রেফতার করে সাদা পোশাকধারী পুলিশ। তাকে শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগের এক নেতার করা তথ্য ও প্রযুক্তি আইনের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads