• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
সুন্দরবনে ফের হরিণ শিকারে শ্যামনগর থানা পুলিশ

হরিণ শিকারে নিরাপত্তা ও নেতৃত্বদানকারীরা হলেন জেলার শ্যামনগর থানার এসআই লিটন, হাফিজ, এএসআই মামুন, ফজলুল করিম, কনস্টেবল আলমগীর ও উত্তম কুমার

প্রতীকী ছবি

অপরাধ

সুন্দরবনে ফের হরিণ শিকারে শ্যামনগর থানা পুলিশ

অপকর্ম ঢাকতে আটক দেখিয়েছে দুই ভাড়াটে শিকারিকে

  • কেএম আনিছুর রহমান, সাতক্ষীরা
  • প্রকাশিত ১০ জুলাই ২০১৮

সাতক্ষীরা রেঞ্জের গভীর সুন্দরবনে বিশাল এক বোটে ১৬ খণ্ড বরফ নিয়ে হরিণ শিকার করলেন শ্যামনগর থানার ছয় পুলিশ সদস্য ও তাদের সহযোগীরা। কিন্তু মধ্যরাতে বনবিভাগ ও কোস্টগার্ডের হাতে ধরা পড়ে শেষ পর্যন্ত শিকারি ওই পুলিশ সদস্যরা হয়ে গেলেন অভিযানকারী। আর তাদের হাতে গ্রেফতার হলেন মঞ্জু ও মহিবুল্লাহ নামে দুই শিকারি। এ সময় তাদের কাছে থেকে জব্দ দেখানো হয় তিনটি হরিণ ও তিনটি বন্দুক। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটে গত রোববার গভীর রাতে সাতক্ষীরা রেঞ্জের পশ্চিম সুন্দরবনে শ্যামনগর উপজেলার গভীর জঙ্গলে।

হরিণ শিকারে নিরাপত্তা ও নেতৃত্বদানকারীরা হলেন জেলার শ্যামনগর থানার এসআই লিটন, হাফিজ, এএসআই মামুন, ফজলুল করিম, কনস্টেবল আলমগীর ও উত্তম কুমার। তবে তারা বনবিভাগ ও কোস্টগার্ডের হাতে ধরা পড়ে গ্রেফতার দেখালেন শ্যামনগরের কদমতলির হরিণ শিকারি মঞ্জু ও পাতাখালীর মহিবুল্লাহকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিন দিন আগে শ্যামনগর থানার ওই ছয় পুলিশ সদস্য সুন্দরবনের গহিনে বিশাল এক বোট নিয়ে হরিণ শিকারের উদ্দেশ্যে একটি শিকারি দলের নেতৃত্বদানকারী হিসেবে যান। এ সময় ওই বোটে ছিলেন ভাড়াটে শিকারি পাতাখালীর আজিজ, রমজাননগর ইউপির সাবেক মেম্বার শিকারি আনারুল ও হরিণগরের শিকারি আবদুল আলিম। এ ছাড়া ছিলেন আরো কয়েকজন শ্রমিক। তিন দিনে অন্তত ১০টি হরিণ শিকারের পর বরফাচ্ছাদিত করে গত রোববার রাত ১২টায় ফিরে আসছিল শিকারি দলটি।

এ সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে বনবিভাগ ও কোস্টগার্ড সদস্যরা অভিযানে যান। বনের চুনকুড়ি নদী ও দোবেকির মধ্যবর্তী স্থানে শিকারি পুলিশ দলের মুখোমুখি হন বনবিভাগ ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা। এ সময় বনবিভাগ ও কোস্টগার্ড সদস্যরা তাদের চ্যালেঞ্জ করে বোট, হরিণ, বন্দুক ও পুলিশ সদস্যসহ সবাইকে নিয়ে বনবিভাগের দোবেকি স্টেশনে যান। সেখানে বনবিভাগ ও কোস্টগার্ডকে বোঝানো হয় তারা (পুলিশ) অভিযান চালিয়ে হরিণ, বন্দুকসহ ওই দুই শিকারিকে আটক করে থানায় নিয়ে যাচ্ছেন।

দোবেকি ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা মোবারক আলী জানান, গভীর রাতে সবাইকে স্টেশনে আনা হয়েছিল। পরে তারা শ্যামনগর থানার উদ্দেশে সবাই চলে যান।

এ বিষয়ে খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বসিরুল ইসলাম জানান, আমি খবর পেয়েছি, তিনটি শিকার করা হরিণ ও তিনটি বন্দুক জব্দ করেছে পুলিশ। তা ছাড়া পুলিশ বলছে, তারা অভিযান চালাতে গিয়েছিল। তাদের কথা তো আর অবিশ্বাস করা যায় না- বলেও তিনি জানান।

শ্যামনগর থানার ওসি সৈয়দ মান্নান আলী হরিণ শিকারে তার পুলিশ সদস্যদের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, সুন্দরবনের ঘটনাস্থল থেকে আমার থানার এসআই লিটন জানিয়েছিলেন, রোববার রাত সাড়ে ৯টায় মেঘনা নদীর মোহনায় একটি বোট দ্রুত গতিতে যেতে দেখে তিনি চ্যালেঞ্জ করেন। পরে ওই বোটে তল্লাশি চালিয়ে তিনটি হরিণ ও তিনটি একনলা বন্দুক উদ্ধার করা হয়। এ সময় গ্রেফতার করা হয় মঞ্জু ও মহিবুল্লাহকে। অন্যরা পালিয়ে যান।

তিনি আরো বলেন, ঘটনাটি নিয়ে বনবিভাগ ও কোস্টগার্ডের সঙ্গে পুলিশের কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। কারণ তারাও একই স্থানে অভিযান চালাতে গিয়েছিল।

এ সময় ওসির কাছে জানতে চাওয়া হয়, এসআই লিটন যে বোট নিয়ে অভিযান চালান, সেই বোটে ১৬ খণ্ড বরফ কেন ছিল এবং কেন তারা তিন দিন আগে হরিণ শিকারি দলের সঙ্গে বনে গেছেন? তবে ওসি এ প্রশ্নের কোনো সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৯ এপ্রিল শ্যামনগর থানার পুলিশ কর্তৃক সুন্দরবনে শিকার করা হরিণের সাড়ে সাত মণ মাংস ভাগাভাগি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পর শুরু হয় তোলপাড়। সে সময়ও শ্যামনগর থানার ওসি ছিলেন সৈয়দ মান্নান আলী। ওই সময় ছয়জন পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সে সময়ের হরিণ শিকারেও প্রত্যক্ষ সহায়তা দেন এসআই লিটন। কিন্তু তিনি বরখাস্ত থেকে কৌশলে রক্ষা পান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads