• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
বাড়ি ফিরেছে পাচার হওয়া চার যুবক

ভারতে কারাভোগ শেষে ফিরে আসা নারায়ণগঞ্জের চার যুবক। বা থেকে বিল্লাল, হাসান, ফয়সাল ও আরিফ

ছবি বাংলাদেশের খবর

অপরাধ

বাড়ি ফিরেছে পাচার হওয়া চার যুবক

  • নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১২ জুলাই ২০১৮

ভালো কাজের প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলা হয় নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকার চার কিশোর ও তরুণদের। পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকায় প্রতারকদের ফাঁদে পড়ে তারা দালাল চক্রের মাধ্যমে পাড়ি জমায় পাশের দেশ ভারতে। পাসপোর্ট ছাড়াই সীমান্ত দিয়ে দালাল ও প্রতারক চক্রের সদ্যরা চারজনকে ভারতে প্রবেশ করিয়েই চম্পট দেয়। অথচ তাদের কথাছিল চেন্নাইতে গার্মেন্ট সহ নানা কারখানায় চাকরির ব্যবস্থা করবে। কিন্তু সীমান্ত পার হওয়ার পরেই গ্রেফতার হয় পুলিশের অভিযানে। গন্তব্য হয় সেখানকার কারাগার আর কিশোর সংশোধনাগারে। প্রায় এক বছর পর গত ১১ জুলাই ফিরে এসেছে দুইজন। আর দুইজনের একজন ৩ মাস ও অপরজন ফিরেছেন ২ মাস আগে।

গতকাল বৃহস্পতিবার কথা হয় এ চারজনের সঙ্গে। চারজনের বাড়িই বন্দরের সালেহনগর এলাকাতে। আলাপকালে জানান তাদের সেই ভয়াল অভিজ্ঞতা আর কারাগারে নির্মম যন্ত্রনা অত্যাচারের কথা। তাদের মধ্যে বাদল মিয়ার ছেলে ফয়সাল (১৬) ও মো. জাকির দেওয়ানের ছেলে হাসান দেওয়ান (১৭) ভারতের এক কিশোর সংশোধন হোম থেকে গত ১১ জুলাই বাড়িতে এসে পৌঁছায়। আর বাকি দুজন মো. তৈয়্যব আলী গাজীর ছেলে মো. আরিফ হোসেন গাজী (২০) ও কালাম বাদশার ছেলে বিল্লাল বাদশা (১৯) ভারতের কলকাতার সদর জেলে দীর্ঘদিন কারাজীবন কাটিয়ে একজন ৩ মাস ও অন্যজন ২ মাস আগে দেশে ফিরে।
চারজনের ভাষ্যমতে, ‘গত বছরের (২০১৭) জুনে ঈদ-উল ফিতরের ৩ দিন পর ভারতের চেন্নাইয়ের একটি গার্মেন্টে কাজের উদ্দেশ্যে রওনা করে। তাদেরকে ভাল কাজের কথা বলে অল্প খরচে বাংলাদেশ থেকে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়াই সালেহনগর এলাকার জনৈক দালাল ও প্রতারক মোতালেবের লোকজনদের মাধ্যমে এদেকে নিয়ে চেন্নাই পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার পূর্ণ নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু মোতালেবের লোকেরা বাংলাদেশের বর্ডার থেকে তাদের ভারতে পৌঁছে দিলেও তারপর আরো ৮-৯ জন দালাল পরিবর্তনের পর তাদের বেনাপোল সীমান্ত এলাকা পেট্রোপল বনগাঁও রেল স্টেশনে ফেলে চলে যায় দালাল। এরপর পুলিশের হাতে আটক হয় এরা। এরপর তাদেরকে একদিন সেই স্টেশনের জিআরপি থানাতে রাখা হয়। পরের দিন তাদেকে কোর্টে তোলা হয়। আর আগে তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ দাবি করে পুলিশ কর্মকর্তারা। কিন্তু সেই টাকা না পেয়ে অবশেষে কোর্টে চালান করে দেয়া হয়। কিন্তু হাসান ও ফয়সালের বয়স আঠারোর চেয়ে কম থাকায় তাদের দুজনকে ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগোনার একটি কিশোরালয় হোমে (কিশোর সংশোধন হোম) রাখা হয়। আর বাকি দুইজন গাজী ও বাদশার বয়স বেশি হওয়ার তাদেরকে কলকাতার সদর জেলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এখান থেকে তাদের ৪ জনের কাহিনী দুইভাবে বিভক্ত হয়ে যায়। জেলে আরিফ ও বিল্লালকে চরম নির্যাতন ও অত্যাচার সহ্য করতে হয়। তাদের নির্যাতনের কথা বলতে বলতে অনেক ঢুকরে কেঁদে উঠেছিল। ঠিকমত খাবার দেওয়া হতো না। কারাগারের ভেতরে ময়লা আবর্জনা কখনো কখনো ড্রেনে ফেলে দেওয়া হতো তাদেরকে। কারাগারে থাকা সময়ে অনেক কষ্টে বাড়ির লোকজনদের সাথে যোগযোগ করে টাকা ম্যানেজ করে সেখানকার এক লোকের সহায়তায় উকিল ধরে আরিফ প্রায় ৬ মাস জেল খেটে বাড়ি ফিরে। কিন্তু থেকে যায় আরেকজন বিল্লাল। তার অসচ্ছলতার কারণে আরো প্রায় মাস খানেক বেশি সময় অতিবাহিত করে অন্ধকারময় জেলে। অন্যদিকে স্বজনদের থেকে দূরে থাকা হাসান ও ফয়সাল দীর্ঘ ১ বছর পর কিশোরালয় হোম থেকে গত ১১ জুলাই বাড়ি ফিরে।
প্রতারণার অভিযোগে দালাল মোতালেব ভারতে অবস্থান করায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব না হলেও তার বাবা সৈয়দ হোসেন যিনি মধ্যভোগী হিসেবে টাকা লেনদেন করেন তার সাথে কথা হয়। সৈয়দ হোসেন সালেহনগর এলাকায় বসাবাস করে সে নিশ্চয়তায় এই ৪ তরুণ তার হাতে বিদেশে কাজে যাওয়ার টাকা তুলে দেয়।
সৈয়দ হোসেন টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি দুজনের কাছ থেকে ১২ হাজার, একজনের কাছ থেকে ১০ হাজার ও বাকি একজনের কাছ থেকে ৬ হাজার টাকা নিয়েছি। কিন্তু ভারতে যাওয়ার পর তারা মধ্যপথে পুলিশের হাতে আটক হয়। তবে এ ঘটনার ব্যাপারে আমার ছেলে মোতালেব বলতে পারবে। আমি এসব ব্যাপারে প্রথমে রাজি ছিলাম না। কিন্তু আমার ছেলে দূরে থাকার ফলে আমি তার পক্ষ থেকে টাকা নেই। এখন আমার ছেলে দেশে ফিরে আসলে এই সমস্যার সমাধান করা হবে।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads