• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
ফরাহাদকে হত্যার নির্দেশ বিদেশে থাকা সন্ত্রাসীদের

বাড্ডা এলাকায় দিনদুপুরে খুন হয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. ফরহাদ আলী

প্রতীকী ছবি

অপরাধ

ফরাহাদকে হত্যার নির্দেশ বিদেশে থাকা সন্ত্রাসীদের

খুনের পরিকল্পনাকারী রমজান ও আশিক ভারতে, মেহেদী যুক্তরাষ্ট্রে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৫ জুলাই ২০১৮

ঢাকার বাড্ডা এলাকায় দিনদুপুরে খুন হন আওয়ামী লীগ নেতা মো. ফরহাদ আলী। আধিপত্য বিস্তার, অটোরিকশা স্ট্যান্ড ও ডিশ ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বিরোধের জেরে সংঘটিত হয় চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ড। ১৫ জুন জুমার নামাজের পর বাড্ডার পূর্বাঞ্চল ১ নম্বর লেনের বায়তুস সালাম জামে মসজিদের পাশে ফরহাদ আলীকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। তাকে হত্যার নির্দেশ দেয় বিদেশে পালিয়ে থাকা তিন শীর্ষ সন্ত্রাসী রমজান, মেহেদী ওরফে কলিন্স ও আশিক। তাদের পরিকল্পনা ও নির্দেশে খুন করা হয় বাড্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ফরহাদ আলীকে। গতকাল শনিবার সকালে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আবদুল বাতেন।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার জানান, হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট জড়িতদের আটকে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসছিল। এই অভিযানের মধ্যে গত ১০ জুলাই আটক হয় হত্যা মামলার অন্যতম আসামি জহুরুল ইসলাম ওরফে সুজন। পরে তার দেওয়া তথ্যে গুলশান ও শাহআলী এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগের একটি দল শুক্রবার রাতে আরো পাঁচজনকে আটক করে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য। গ্রেফতারকৃতরা হলো- জাকির হোসেন, আরিফ মিয়া, আবুল কালাম আজাদ ওরফে অনির, বদরুল হুদা ওরফে সৌরভ ও মো. বিল্লাল হোসেন ওরফে রনি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আবদুল বাতেন বলেন, গত ১৫ জুন আওয়ামী লীগ নেতা ফরহাদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় বাড্ডা থানায় মামলা হলে মামলার তদন্তভার গোয়েন্দা পুলিশের ওপর বর্তায়। গত ১০ জুলাই হত্যা মামলার অন্যতম আসামি জহুরুল ইসলাম ওরফে সুজনকে গ্রেফতার করা হয়। সে আদালতে ওই হত্যায় জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তার দেওয়া তথ্যে উঠে আসে ঘটনার নেপথ্যে জড়িতদের নাম। এরপর ফরহাদ হত্যাকাণ্ডের দায়ে এই পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা গোয়েন্দা পুলিশকে জানায়, হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিন আগে মূল পরিকল্পনাকারী রমজান ভারতে চলে যায়। রমজান তার আপন ছোট ভাই সুজন এবং অপর দুই সহযোগী জাকির ও আরিফের ওপর হত্যাকাণ্ড সংঘটনের দায়িত্ব দেয়। অপরদিকে শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদীর সামরিক কমান্ডার অমিত তাদের ভাড়াটে শুটার নুর ইসলাম, অনির, সৌরভ ও সাদকে গুলি করার দায়িত্ব দেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৫ জুন সকালের দিকে অমিতসহ ভাড়াটে খুনিরা উত্তর বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে সমবেত হয়। অমিতের নির্দেশনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হয় যে, নুর ইসলাম, অনির ও সৌরভ মূল কিলিং মিশনে অংশ নেবে। আর অমিতের সঙ্গে ব্যাকআপ হিসেবে থাকবে সাদ ওরফে সাদমান। দুপুর ১২টার দিকে রমজানের ছোট ভাই সুজন কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারী তিন শুটার ও ব্যাকআপ সাদকে জাকিরের সঙ্গে অস্ত্র গ্রহণের জন্য একটা রিকশার গ্যারেজে পাঠায়। চারজনকেই অস্ত্র বুঝিয়ে দেয় শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদীর অন্যতম আস্থাভাজন পুলক ওরফে পলক। এরপর জাকির তাদের নিয়ে আরিফের কাছে পৌঁছে দেয়। পরিকল্পনামাফিক আরিফ শুটারদের মসজিদের কাছে নিয়ে গিয়ে বাইরে থেকে টার্গেট ফরহাদকে চিনিয়ে দেয়। নামাজ শেষে ফরহাদ মসজিদ থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুটাররা জনসম্মুখে উপর্যুপরি গুলি করে পালিয়ে যায়।

পরে শুটাররা তাদের অস্ত্রগুলো শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদীর সামরিক কমান্ডার অমিতের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য পল্লবী এলাকায় যায়। সেখানে অমিত তার অপর সহযোগী সুজনের মাধ্যমে অস্ত্রগুলো গ্রহণ করে। হত্যাকাণ্ডের পর অমিত তাৎক্ষণিক এক লাখ টাকা শুটারদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়। হত্যাকাণ্ডের পরপরই দেশত্যাগ করে রমজানের ছোট ভাই সুজন।

প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা আরো বলেন, বাড্ডার শীর্ষ সন্ত্রাসী রমজান ও আশিক বর্তমানে ভারতে এবং মেহেদী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে। ফরহাদকে খুনের পর আরো এক ব্যবসায়ীকে খুন করার পরিকল্পনা করেছিল রমজান। তবে ডিবি পুলিশের তৎপরতা ও অভিযানের কারণে তা ভেস্তে যায়। ফরহাদ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত নুর ইসলাম ও শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদীর সামরিক কমান্ডার অমিত গত ৪ জুলাই মধ্যরাতে গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads