• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
খালে ফেলার আগে ‘থেঁতলে দেওয়া হয়’ পায়েলের মুখ

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মো. সাইদুর রহমান পায়েল

ছবি : সংগৃহীত

অপরাধ

খালে ফেলার আগে ‘থেঁতলে দেওয়া হয়’ পায়েলের মুখ

  • চট্টগ্রাম ব্যুরো
  • প্রকাশিত ২৭ জুলাই ২০১৮

দুর্ঘটনার ‘দায় এড়াতে’ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মো. সাইদুর রহমান পায়েলকে অচেতন অবস্থায় সেতু থেকে খালে ফেলে দেওয়ার আগে তার পরিচয় লুকাতে হানিফ পরিবহনের বাসের চালক মুখ থেঁতলে দিয়েছিল বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। পায়েলের মামা গোলাম সোহরাওয়ার্দী বিপ্লব বলছেন, ওই বাসের সুপারভাইজার মো. জনি গ্রেফতার হওয়ার পর থানায় তার সঙ্গে কথা বলে ওই ঘটনার বর্ণনা জানতে পারেন তারা। কিন্তু তার আগে বাসের চালক জামাল হোসেন ও সুপারভাইজার জনি ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এদিকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাইদুর রহমান পায়েলকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করেছে তার স্বজনরাসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্র পায়েলের বাসা চট্টগ্রামের হালিশহর সিডিএ আবাসিক এলাকায়। শনিবার রাতে দুই বন্ধু আকিবুর রহমান আদর ও মহিউদ্দিনের সঙ্গে হানিফ পরিবহনের একটি বাসে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার পথে রওনা হওয়ার পর নিখোঁজ হন তিনি।

সোমবার মুন্সীগঞ্জ উপজেলার ভাটেরচর সেতুর নিচের খাল থেকে পায়েলের লাশ উদ্ধার করে গজারিয়া থানা পুলিশ। হানিফ পরিবহনের ওই বাসের সুপারভাইজার জনিকে ঢাকার মতিঝিল এবং চালক জামাল হোসেন ও তার সহকারী ফয়সাল হোসেনকে আরামবাগ থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তারা তিনজনই মুন্সীগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

শনিবার পায়েল নিখোঁজ হওয়ার পর সোমবার লাশ উদ্ধার পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা চষে বেড়ান তার মাম বিপ্লব। তিনি বলেন, গজারিয়া থানা পুলিশ ভাটেরচর সেতুর নিচে খাল থেকে পায়েলের লাশ উদ্ধার করার পর প্রথমে তার থেঁতলানো মুখ দেখে চিনতে পারেননি তিনি। পরে পায়েলের পরনের শার্ট দেখে আমার ছোট ভাই দিপু জানায় গত ঈদে ও শার্টটা পায়েলকে দিয়েছিল। এরপর ওর আইডি আর লন্ড্রির স্লিপ দেখে আমরা লাশ শনাক্ত করি। বিপ্লব বলেন, বাসের সুপারভাইজার জনি ও হেলপার ফয়সাল গ্রেফতার হওয়ার পর থানায় তাদের সঙ্গে কথা বলে ‘ঘটনার পুরো বিবরণ’ তারা জানতে পারেন।

জনির বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ভাটেরচর সেতুর আগে বাস যানজটে পড়লে চালককে বলে গাড়ি থেকে নামেন পায়েল। তিনি ফেরার আগেই বাস সামনের দিকে এগিয়ে যায় এবং সেতুর ওপর উঠে দাঁড়ায়। পায়েল দৌড়ে এসে দরজার কাছে দাঁড়ালে চালক ভলভো গাড়ির দরজা খুলতে ‍সুইচ টিপে দেন। কিন্তু দরজা খোলার সময় ধাক্কা লেগে পায়েল নাকে-মুখে আঘাত পান এবং পড়ে যান।

বিপ্লব বলেন, ‘পায়েলের নাক-মুখ থেকে রক্ত ঝরতে দেখে চালক কিছুটা সামনে এগিয়ে যায়। এরপর আবার থামে। তখন সুপারভাইজার পায়েলকে দেখে এসে চালককে বলে, ‘ওস্তাদ অজ্ঞান হয়ে গেছে, উঠাই নিব?’ জামাল হোসেন চালকের আসন থেকে উঠে এসে বলে, ‘বিপদে পড়ে যাবি।’ তারপর নিজেই পায়েলের মাথার দিকের অংশ ধরে এবং সুপারভাইজারকে পায়ের দিকের অংশ ধরতে বলে। এরপর পায়েলের মুখমণ্ডল রাস্তায় আছড়ে ফেলে। তারপর সেতু থেকে নিচে পানিতে ফেলে দেয়।

খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি চান পায়েলের বাবা : পায়েলের বাবা গোলাম মাওলা ২৬ বছর ধরে কাতারের দোহায় চাকরি করেন। বড় ছেলে গোলাম মোস্তফাও সেখানে থাকেন। পায়েলের মৃত্যুর খবর পেয়ে দেশে ফিরেছেন তারা দুজন। বড় ভাই গোলাম মোস্তফার মেয়ে হওয়ার পর তাকে দেখতে চট্টগ্রামে বাসায় ফিরেছিলেন পায়েল। রোববার ক্লাস থাকায় শনিবার রাতের বাসে করে ফিরছিলেন ঢাকায়।

চট্টগ্রামের মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এএসসি এবং সানশাইন কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করা পায়েলকে অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে পাঠাতে চেয়েছিলেন তার বাবা। অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার কাগজপত্রও জোগাড় হয়েছিল। মাঝপথে সে বলে, যাবে না। চট্টগ্রামে যেহেতু আমি আর বড় ছেলে থাকি না, তাই তাকে এখানে পড়তে বলেছিলাম। সে নিজের পছন্দে ঢাকায় পড়তে যায়।

দোষীদের শাস্তি দাবি করে পায়েলের বাবা বলেন, এভাবে যেন আর কারো সন্তানের মৃত্যু না হয়। খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই আমি।

এদিকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাইদুর রহমান পায়েলকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করেছে তার স্বজনরাসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। গতকাল সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, পায়েলকে নৃশংসভাবে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার একমাত্র ফাঁসি। সচেতনভাবে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে তাকে খুন করা হয়েছে। আর কাউকে যাতে এ ধরনের হত্যার শিকার হতে না হয় সেজন্য খুনিদের ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রামস্থ সন্দ্বীপ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম বেলায়েত হোসেন, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক সারওয়ার হাসান জামিল, মানবাধিকার সংগঠক আমিনুল হক বাবু, সন্দ্বীপ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু ইউছুপ রিপন, উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রুমানা নাসরিন, পায়েলের তিন মামা কামরুজ্জামান চৌধুরী টিটু, গোলাম সোহরাওয়ার্দী বিপ্লব এবং বাহার চৌধুরী শিপন প্রমুখ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads