• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
রাজনৈতিক ব্যানারে অপকর্ম করত ইভটিজাররা

কলেজছাত্র মারুফ খান

সংরক্ষিত ছবি

অপরাধ

সাভারে কলেজছাত্র খুন

রাজনৈতিক ব্যানারে অপকর্ম করত ইভটিজাররা

  • আরিফুর রহমান, সাভার
  • প্রকাশিত ২৭ আগস্ট ২০১৮

সাভারে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় কলেজছাত্র খুন হওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত ইভটিজার মঞ্জু গ্রুপের সদস্যরা সরকারদলীয় ব্যানার ব্যবহার করে এলাকায় নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিল। এরা কখনো ছাত্রলীগ, কখনো তরুণ লীগ আবার কখনো যুবলীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন ঝুলিয়ে এলাকায় প্রচারণা চালাত। মূলত সরকারদলীয় ব্যানার ব্যবহার করে টেন্ডারবাজিতে সহায়তা, চাঁদা আদায়, মানুষকে জিম্মি করে অর্থ আদায়, ইভটিজিং এদের কাজ। সাভার পৌর এলাকার তালবাগ এবং গেণ্ডা মহল্লার একাধিক স্থানীয় ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এসব তথ্য নিশ্চিত করে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাভার পৌর এলাকার তালবাগ মহল্লার রমিজ উদ্দিন ওরফে রইমার ছেলে মঞ্জু। স্কুলের গণ্ডি পেরোতে না পারলেও নিজেকে ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে দাবি করত।

এলাকায় বখাটে ও উচ্ছৃঙ্খল হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত। ২০১০ সালে ছাত্রলীগের ৬ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রার্থী ছিল। তবে ছাত্রলীগ নেতা না হতে পেরে বাংলাদেশ আওয়ামী তরুণ লীগ নামে একটি সংগঠনে সাভার পৌর সভাপতি হিসেবে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করে। এর পর থেকেই নিজ বাড়ির ভাড়াটিয়া মুস্তাকিন, টিয়াবাড়ি এলাকার রহিজ, গেণ্ডা এলাকার প্লাবন, শ্যামল, শামীম, ইমরান, মমিনসহ প্রায় ১০-১৫ যুবককে নিয়ে সন্ত্রাসী গ্রুপ তৈরি করে মঞ্জু। দলীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে সড়কে তাদের মিছিল করতে দেখা যায়। কখনো ছাত্রলীগ, কখনো তরুণ লীগ আবার কখনো যুবলীগ হিসেবে বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন দিয়ে এলাকায় প্রচারণা চালাত মঞ্জু। তার গ্রুপের সদস্যদের বয়স ২০ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে হলেও অধিকাংশই পড়ালেখা করে না।

টিয়াবাড়ি এলাকার ফারুক হাসান অভিযোগ করে বলেন, বেশ কয়েক মাস আগে গেণ্ডা এলাকার কাঁচাবাজার নিয়ে শুভ, আরিফ ও মঞ্জু গ্রুপের লোকজনের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। এরই জের ধরে তাকে পিটিয়ে তার ডান পা ভেঙে দেয় সন্ত্রাসীরা। তালবাগ এলাকার সামছুল হক বলেন, মঞ্জু এলাকায় উচ্ছৃঙ্খলভাবে চলাফেরা করে। গেণ্ডা কাঁচাবাজার এলাকার বিভিন্ন দোকান থেকে চাঁদা আদায় করত। এ ছাড়া এলাকার বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিক ও নিরীহ মানুষকে বিভিন্ন অজুহাতে জিম্মি করে টাকা আদায় করত বলে জানান তিনি। কেউ প্রতিবাদ করতে চাইলে ছাত্রলীগ ও তরুণ লীগ নেতা পরিচয় দিয়ে মারধরের হুমকি দেয় মঞ্জু গ্রুপের লোকজন।

একই অভিযোগ করেন টিয়াবাড়ি এলাকার মুদি দোকানি লিটন মিয়া, তালবাগ এলাকার বছির উদ্দিন ও আলাল হোসেন। তারা বলেন, মঞ্জু গ্রুপের লোকজন গেণ্ডা বাসস্ট্যান্ড থেকে টিয়াবাড়ি এলাকা পর্যন্ত বিভিন্ন দোকানপাট থেকে অনুষ্ঠানের কথা বলে টাকা আদায় করত। টাকা দিতে না চাইলে মারধরের ভয় দেখাত। এলাকায় ছিনতাইয়ের সঙ্গেও জড়িত ছিল এই গ্রুপের সদস্যরা। এ ছাড়া বিভিন্ন স্কুল-কলেজের মেয়েদের যাওয়া-আসার পথে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত বলেও তারা অভিযোগ করেন।

এদিকে সাভারের তালবাগ এলাকার মঞ্জুর বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে কাউকে পাওয়া যায়নি। টিয়াবাড়ি এলাকার জাহাঙ্গীরের বাসার ভাড়াটিয়া রহিজের বাড়িতে গিয়েও মূল ফটকে তালা ঝুলতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে ঢাকা জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন, ‘মঞ্জু ছাত্রলীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাঝে মধ্যে আসত।’ তবে ছাত্রলীগের কর্মী দাবি করে এলাকায় অপকর্ম করার বিষয়টি তিনি অবহিত নন। একই সঙ্গে মঞ্জু ছাত্রলীগের কর্মী নয় বলেও দাবি করেন তিনি। এ ছাড়া এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান সাইদুর।

বাংলাদেশ আওয়ামী তরুণ লীগ ঢাকা জেলার আহ্বায়ক আলতাফ হোসেন খাজা বলেন, ‘আমাদের সাভার পৌর কমিটি দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। ওই কমিটিতে মঞ্জু সভাপতি প্রার্থী। তার বিরুদ্ধে গেণ্ডায় কাঁচাবাজার থেকে টাকা আদায়সহ একাধিক অভিযোগের কথা শুনেছি। এ কারণে তাকে এখনো কমিটিতে কোনো পদ দেওয়া হয়নি।’ তিনিও হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।

দোষীদের গ্রেফতারের বিষয়ে সাভার মডেল থানার এসআই অপূর্ব দাশ বলেন, ‘মঞ্জু গ্রুপের একজনকে আটকের পর বাকিরা গা ঢাকা দিয়েছে। তাদের গ্রেফতারে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারের উলাইল গরুর হাটের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় এক কলেজছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করে মঞ্জু ও তার লোকজন। বিষয়টির প্রতিবাদ করায় ঢাকা কমার্স কলেজের ছাত্র মারুফ খানকে কুপিয়ে জখম করে বখাটেরা। ওইদিনই মৃত্যু হয় মারুফের।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads