• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
আড়াই কোটি টাকা আত্মসাৎ করে এসআইবিএলের কর্মকর্তা উধাও

এসআইবিএলের কর্মকর্তা  রোটা. তানভীর আহম্মেদ সিদ্দিকী

সংরক্ষিত ছবি

অপরাধ

আড়াই কোটি টাকা আত্মসাৎ করে এসআইবিএলের কর্মকর্তা উধাও

  • মহিউদ্দিন আল আজাদ, চাঁদপুর প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৮ আগস্ট ২০১৮

চাঁদপুর জেলা সদরের বিভিন্ন ব্যাক্তি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আনুমানিক আড়াই কোটি টাকা আত্মসাৎ করে উধাও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড এর সাবেক কর্মকর্তা রোটা. তানভীর আহম্মেদ সিদ্দিকী। সে শুধুমাত্র আত্মসাৎ নয়, প্রতারণাও করেছেন অনেকের সাথে। পাওনাদাররা এখন টাকার জন্য তাকে হন্য হন্য হয়ে খুঁজছে । কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও দায়ের করেছে।

ভূক্তভোগী ব্যাক্তি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে জানাগেছে, তানভীর সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকে কর্মরত অবস্থায় বিভিন্ন মানুষের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে। এ সুযোগে সে বিভিন্ন সময়ে তার ব্যাক্তিগত প্রয়োজন দেখিয়ে বিভিন্ন অংকের টাকা হাওলাতের নাম করে নেন। এছাড়াও অনেক ব্যাক্তিকে চাকুরী দিবে বলে আর্থিক সুবিধা নেয়। আবার কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা ঋন নেয়ার সময় পরিচিত লোকদের জামিনদার হিসেবে ব্যবহার করেন।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, সে শহরের বাসস্ট্যান্ড ফয়াসল শপিং মার্কেটের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান পিক এ- পের স্বত্ত্বাধীকারী লিটন এর কাছ থেকে ৭ লাখ, মিশন রোডস্থ টাইলস্ ব্যবসায়ী হানিফ গাজীর কাছ থেকে ১৫ লাখ, ডাচ বাংলা ব্যাংক চাঁদপুর শাখার সেকেন্ড ম্যানেজার (বর্তমানে কুমিল্লায় কর্মরত) আহসানের কাছ থেকে ৫ লাখ, ডাচ বাংলা ব্যাংক চাঁদপুর শাখা থেকে ঋণ নেন ৭০ লাখ, শহরের একজন বিশিষ্ট ঠিকাদার এর কাছ থেকে ২৫ লাখ, মিশন রোডস্থ মনু হাজীর ছেলে ওমর হায়দারের কাছ থেকে ১লাখ, জনৈক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ১লাখসহ আরো কয়েকজনের কাছ থেকে বিভিন্ন অংকে টাকা হাওলাত (কর্য) হিসেবে নিয়েছেন।

এ বিষয়ে চান্দ্রা শিক্ষিত বেকার বহুমুখী সমবায় সমিতি লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জসিম উদ্দিন শেখ নতুনেরডাককে বলেন, তাদের সমিতি থেকে ১০লাখ টাকা উত্তোলন করেন। টাকা না দেওয়ার কারণে ওই সমিতি গত ৬ মাস পূর্বে চাঁদপুর আদালতে তানভীর ও জামিনদার সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক চাঁদপুর শাখার কর্মকর্তা মেহেদী হাসানকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় তানভীর পলাতক আসামী হিসেবে রয়েছে।

ডাসচ বাংলা ব্যাংকে চাকুরী দেয়ার নাম করে প্রায় ২ বছর আগে ৫ লাখ টাকা নেন নির্ঝর রায় চৌধুরী নামে যুবকের কাছ থেকে। শহরের পুরাণ আদালত পাড়া নিবাসী নির্ঝর এ বিষয়ে বলেন, আমাকে ডাচ বাংলা ব্যাংকে চাকুরী দিবে বলে ৫ লাখ টাকা নেন তানভীর। কিন্তু কোন রশিদ কিংবা প্রমানপত্র রাখিনি। শুধুমাত্র ফোনে টাকা নেয়ার প্রাপ্তি কথা রেকডিং রয়েছে। কয়েক মাস যাওয়ার পর তার সাথে যোগাযোগ করার জন্য কোন মাধ্যম পাইনি। তাকে এখনো খুঁজে বেড়াচ্ছি।

শহরের মিশন রোডস্থ রামকৃষ্ণ আশ্রম সংলগ্ন নিবাসী জহির উদ্দিন স¤্রাটের কাছ থেকে ৩ বছর আগে এক সপ্তাহের কথা বলে ৭ লাখ টাকা হাওলাত নেন।

এ বিষয়ে স¤্রাট জানান, তানভীর আমার অনেক দিনের পরিচিত। হঠাৎ একদিন ফোন দিয়ে টাকার প্রয়োজনীয়তা জানান। সে প্রথমে এক সপ্তাহ পরে দিয়ে দিবে বলে ৫লাখ টাকা হাওলাত নেয়। এক সপ্তাহ না যেতেই ৬ দিন পর হঠাৎ ফোন করে বলে, আমি ডাস বাংলা ব্যংক থেকে ৭০ লাখ টাকার ঋন নিচ্ছি, এটি পরদিন হয়ে যাবে। এ কথা বলে ওইদিনই আরো ২ লাখ টাকা হাওলাত নেয় তানভীর। এরপর তাকে খুঁজে না পেয়ে হঠাৎ লোক মারফতে ঢাকায় তার অবস্থান সনাক্ত করে আটক করা হয়। সে সময় তানভীর আমাকে ৭ লাখ টাকার একটি চেক ও সাথে ৩শ’ টাকার নন জুডিসিয়্যাল স্ট্যাম্পে স্বীকরোক্তিমূলক বক্তব্য ও স্বাক্ষর দেন। তানভীরের কাছ থেকে টাকা পাওয়ার জন্য প্রশাসনিক ও আইনী সহযোগিতা কামনা করছি।

এ বিষয়ে শহরের মিশন রোডস্থ নোভা এইড নামক চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রের চিকিৎসক রোটা. মো. মিজানুর রহমান জানান, তিনিও তানভীরের কাছ থেকে ২৩লাখ টাকা পাবেন। তার কাছ থেকে টাকা চাইলে সে ব্যবসায়িক লোকসানে পড়েছেন বলে টাকা দিচ্ছে না। বর্তমানে তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সে আত্মগোপনে রয়েছে। তার বিরুদ্ধে প্রতারণাসহ অর্থ আত্মসাতের বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads