• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
হামলার আগে রেকি করে সন্ত্রাসীরা

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা

সংরক্ষিত ছবি

অপরাধ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা

হামলার আগে রেকি করে সন্ত্রাসীরা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আগে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বৈঠকে করে কুশীলবরা। আক্রমণে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা একাধিকবার ঘটনাস্থল রেকি করে। মামলা তদন্ত সংস্থা সিআইডি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সিআইডি সূত্র আরো জানায়, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের পনেরো তলা ভবনের ছাদের ওপর থেকে বেশিরভাগ গ্রেনেড ছোড়া হয়। ২২ গ্রেনেডের ৫টি টার্গেটের খুব কাছাকাছি পড়েছিল, একটি ট্রাকের পেছনের চাকায়, একটি ট্রাকে লাগানো সিঁড়ির কাছে, যেখানে আইভী রহমান মারা যান। ট্রাকের বনেটে পড়ে ছিটকে ফুটপাথের ড্রেনে যাওয়া আরেকটি গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়নি। সবচেয়ে বিপজ্জনক বিস্ফোরণটি হয়েছিল আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার খুব কাছে। ওই বিস্ফোরণে প্রয়াত মেয়র মো. হানিফ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, বর্তমান ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াসহ অনেকেই গুরুতর আহত হন।

তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ওইদিন উপর্যুপরি ওইসব গ্রেনেড ছোড়া হয়। মুহূর্তে রক্তবন্যা বয়ে যায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে। সমাবেশে উপস্থিত অনেক নেতাকর্মীর দেহ ছিনভিন্ন হয়ে ছড়িয়ে পড়ে ওই আঙ্গিনায়।

শেখ হাসিনাকে অক্ষত রাখতে তাৎক্ষণিকভাবে মানববর্ম তৈরি করেন আওয়ামী লীগের নেতারা। ওই মানববর্মে আরো অংশ নেন শেখ হাসিনার দেহরক্ষীরা। গ্রেনেডের আঘাতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর দুই দেহরক্ষীর শরীর রক্তে ভিজে যায়। আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রাজ্জাক ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পাঞ্জাবি লাল হয়ে যায় তাজা রক্তে। ঢাকার সাবেক মেয়র মো. হানিফের ঘাড় বেয়ে রক্ত ঝরতে দেখা যায়।

মানববর্মটি শেখ হাসিনাকে নিয়ে জিপের কাছে যেতেই শেষ গ্রেনেডের বিস্ফোরণে দ্বিতীয় দফায় কেঁপে ওঠে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ। দেহরক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদের মাথা বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। মূলত এই অকুতোভয় দেহরক্ষীর কারণেই নেতাকর্মী পরিবেষ্টিত শেখ হাসিনা প্রাণে বাঁচেন। মাহবুব বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরলেও তার মাথায় হেলমেট ছিল না। গ্রেনেডের মূল টার্গেট (শেখ হাসিনা) লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় আক্রমণকারীরা কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। সেটাও ব্যর্থ হয়। এ অবস্থায় গাড়ির ড্রাইভারের অপেক্ষা না করে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া নিজেই গাড়ি চালিয়ে শেখ হাসিনাকে নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে সক্ষম হন।

বাংলাদেশের ইতিহাসের বর্বরতম এই হামলায় নিহত হন ২৪ জন। আহতের সংখ্যা তিন শতাধিক। আহতদের অন্তত ৩০ জন চিরপঙ্গুত্ব বরণ করেন। ভয়াবহ ওই হামলার পর ২০০৫ সালের ৯ জুন নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার কেশারপাড় ইউনিয়নের বীরকোট গ্রামের কালীমন্দির সংলগ্ন রাজা মিয়ার চা দোকান থেকে জজ মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর আদালতে ১৬৪ ধারায় তার জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। এতে নিন্দার ঝড় ওঠায় তদন্তকারী কর্মকর্তা বদলানো হয়। তদন্তে নতুন আসেন তৎকালীন সিআইডি পুলিশের বিশেষ পুলিশ সুপার ফজলুল কবীর। তিনি ২০০৮ সালের ১১ জুন আসামির তালিকা থেকে জজ মিয়াকে বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র জমা দেন। পরে আদালত এ মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেন। ২০০৯ সালে মুক্তি পান জজ মিয়া।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট মামলাটির অধিকতর তদন্তের জন্য দায়িত্ব পান পুলিশের বিশেষ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ। পুনর্তদন্ত শেষে ২০১০ সালের ৩ জুলাই তিনি আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন। সেই অভিযোগপত্রে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব হারিছ চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদসহ ৩০ জনকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া গ্রেনেড হামলার দায় স্বীকার করে ঢাকার সিএমএম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে আট আসামি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads