• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
সক্রিয় সিন্ডিকেট : শাহ আমানতে সোনা চোরাচালান থামছে না

শাহ আমানত বিমানবন্দর

সংগৃহীত ছবি

অপরাধ

সক্রিয় সিন্ডিকেট : শাহ আমানতে সোনা চোরাচালান থামছে না

  • শামসুল ইসলাম, চট্টগ্রাম
  • প্রকাশিত ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

কিছুতেই রোধ করা যাচ্ছে না চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে সোনা চোরাচালান। প্রায়ই বিভিন্ন দেশ থেকে এ রুটে বাংলাদেশে ঢুকছে অবৈধভাবে বিভিন্ন কায়দায় আনা সোনার চালান। কখনো ফ্লাইটের সিটের ভেতর লুকিয়ে, কখনো টয়লেটের পাশে, কখনো অভিনব কায়দায় বিভিন্ন জিনিসের ভেতর ভরে এসব সোনা নিয়ে আসছে চোরাচালান সিন্ডিকেটের সদস্যরা।

অভিযোগ রয়েছে, কাস্টমসের অভিযানে মাঝেমধ্যে কয়েকটি ছোটখাটো চালান ধরা পড়লেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে বিমানবন্দর এলাকা থেকে তার কয়েকগুণ বেশি সোনা বের করে নিয়ে যাচ্ছে চোরাকারবারিরা।

তবে কাস্টমস কর্মকর্তাদের ভাষ্য, বিমানবন্দর দিয়ে সোনা চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে কাস্টমস কাজ করে যাচ্ছে। সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারি চলছে। বিভিন্ন অভিযানে অবৈধভাবে আনা অনেক সোনার বার জব্দ হচ্ছে। আটক হচ্ছে সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িতরা।

বিমানবন্দর সূত্র জানায়, প্রতি মাসেই সোনার একাধিক চালান আটক হচ্ছে শাহ আমানত বিমানবন্দরে। কখনো যাত্রীর হেফাজত থেকে আবার কখনো পরিত্যক্ত অবস্থায়। ওমান, থাইল্যান্ড, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসছে বেশিরভাগ সোনা।

সূত্র জানায়, গত দুই মাসে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অন্তত ১০টি ফ্লাইট থেকে অবৈধভাবে আনা সোনা জব্দ করা হয়। সর্বশেষ গত ১৬ সেপ্টেম্বর ব্যাংকক থেকে আসা রিজেন্ট এয়ারের একটি ফ্লাইটে অভিযান চালিয়ে জব্দ করা হয় প্রায় ৭ কেজি সোনা।

বিমানবন্দর কাস্টমসের সহকারী কমিশনার মো. মাহবুবুর রহমান জানান, ওইদিন বিকাল সাড়ে ৩টায় ব্যাংকক থেকে রিজেন্ট এয়ারের আর এক্স ৭৮৭ ফ্লাইট চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ফ্লাইটটি চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকা যায়। চট্টগ্রামের যাত্রীরা নেমে যাওয়ার পর ফ্লাইটটি ঢাকা যাওয়ার অপেক্ষায় ছিল। এ সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ফ্লাইটটিতে অভিযান চালিয়ে একটি আসনের কুশনের ভেতর থেকে ৬০ পিস সোনার বার উদ্ধার করা হয়। বারগুলোর ওজন ৬ কেজি ৯৯৮ গ্রাম এবং এর আনুমানিক মূল্য ৩ কোটি টাকা বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। একই দিন সকালে অপর একটি ফ্লাইট থেকে সোয়া এক কেজি সোনা জব্দ করা হয়। ফ্রাইংপ্যানের হাতলের ভেতর লুকিয়ে কৌশলে এ সোনা আনা হয়েছিল।

গত ৬ সেপ্টেম্বর মাস্কাট থেকে আসা ইউএস বাংলার ফ্লাইটের এক যাত্রীর ব্যাগ তল্লাশি করে উদ্ধার করা হয় সোনার ৪৫টি বার, যার ওজন ৫ কেজি ২৪৮ গ্রাম। উদ্ধার করা ওই সোনার বাজারমূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা। কাস্টমস কর্মকর্তারা এ ঘটনায় গিয়াসউদ্দিন নামের ওই যাত্রীকে আটকের পর পতেঙ্গা থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। একই দিন সকালে দুবাই থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটের যাত্রী রবিউলের ব্যাগ তল্লাশি করে ৭৬২ গ্রাম সোনা উদ্ধার করা হয়। প্যাকেটে মোড়ানো অবস্থায় বিশেষ কায়দায় সোনা আনা হয়েছিল।

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করছে সোনা চোরাচালানিরা। বিমানবন্দরকেন্দ্রিক একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট এর সঙ্গে জড়িত। সিন্ডিকেটের মধ্যে বিভিন্ন বিমান সংস্থার লোক, বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী চক্র রয়েছে। সিন্ডিকেটের সদস্যরাই অবৈধভাবে আনা এসব সোনার বার নিরাপদে বিমানবন্দর থেকে বের করে আনতে সহায়তা করে। এর আগে আটক হওয়া একটি সোনার চালানের সঙ্গে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সদস্যরা জড়িত বলে অভিযোগ ওঠার পর তা অনুসন্ধানে নেমেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধান শেষে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে দুদক এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করেছিল। তদন্ত শেষে এ মামলায় লাগেজ মালিক ছাড়াও কাস্টমসের কর্মকর্তা, সিভিল এভিয়েশনের কর্মচারী, আনসার সদস্য ও বিমানের ট্রাফিক হেলপারকেও আসামি করে অভিযোগপত্র দিয়েছিল দুদক। আসামিরা চোরাচালান নির্মূলের দায়িত্বে থেকে উল্টো অন্তরালে থাকা শীর্ষ চোরাচালানিদের সঙ্গে যোগসাজশ করে শাহ আমানত বিমানবন্দরে সোনার বার নিয়ে আসা এবং বিমানবন্দর পার করে দেওয়ার কাজ করত বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছিল।

পুলিশ ও কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইতিহাসে সোনার সবচেয়ে বড় চালান আটক করা হয় ২০১৪ সালের ২৫ মার্চ। ওই চালানে ৯০২টি বার আটক করা হয়। আটক সোনার ওজন ছিল ১০৫ কেজি ২০০ গ্রাম, যার বাজারমূল্য ছিল ৪৫ কোটি ২০ লাখ টাকা। দুবাই থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের উড়োজাহাজ বিজি ০২৬০-এ তল­াশি চালিয়ে এ সোনা জব্দ করা হয়েছিল। সে সময় ওই সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আটক করা হয়েছিল বিমানের ১০ যাত্রীকে।

সূত্র জানায়, কাস্টমসের অভিযানে বিভিন্ন সময় সোনার বারসহ যাদের আটক করা হয় তাদের বেশিরভাগই মূলত বহনকারী। সোনা আটক সংক্রান্ত মামলার তদন্তে নেপথ্যে থাকা শীর্ষ চোরাচালানিদের নাম উঠে আসে না। তাই বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় মূল চোরাচালানিরা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads