• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
ভদ্রবেশী ছিনতাই চক্র ‘সালাম পার্টি’

এলাকাভিত্তিক ৪-৫ জনের দলে ভাগ হয়ে কাজ করে থাকে এরা

প্রতীকী ছবি

অপরাধ

ভদ্রবেশী ছিনতাই চক্র ‘সালাম পার্টি’

  • আজাদ হোসেন সুমন
  • প্রকাশিত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

* ওদের শার্ট, প্যান্ট, কোটের ভেতর থাকে অস্ত্র

* সালাম দিয়ে ঘিরে ধরে, কেড়ে নেয় সবকিছু 

 

দেখলে মনে হবে কোনো করপোরেট অফিসে বড় পদে চাকরি করেন নতুবা কোনো বড় মাপের ব্যবসায়ী। বাচনভঙ্গি ও চালচলনে রয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া। হঠাৎই আপনার সামনে এসে সম্মানের সঙ্গে  দেবে সালাম। আপনিও হয়তো থমকে দাঁড়াবেন, কৌতূহলী হয়ে উঠবেন। আর এই সুযোগ নিয়েই হাতিয়ে নেবে আপনার টাকা-পয়সা, মোবাইল ইত্যাদি। এরা হলো সেই ‘সালাম পার্টি’। রাজধানীর অলিগলিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে এরা।

সম্প্রতি পুলিশের হাতে এ চক্রের ৫ সদস্য ধরা পড়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, এ চক্রের সদস্যরা সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে। উন্নতমানের শার্ট, প্যান্ট, জুতা এমনকি শীতকালে কোট ও টাই পরে ঘুরে বেড়ায় টার্গেটের সন্ধানে। বিশেষ কায়দায় তারা চাকু, চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্র নিজেদের প্যান্ট বা কোটের পকেটে লুকিয়ে রাখে। এ চক্রের সদস্যরা নির্দিষ্ট এলাকায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কাজ করে। এক এলাকার সদস্য অন্য এলাকায় কাজ করে না। এলাকাভিত্তিক ৪-৫ জনের দলে ভাগ হয়ে কাজ করে থাকে এরা।

ভদ্রলোকের বেশ ধরে তারা ২-৩ ঘণ্টার জন্য রিকশা ভাড়া করে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করতে থাকে। ব্যাংক অথবা এটিএম বুথের পাশে একজন তীক্ষ দৃষ্টিতে অবস্থান নিয়ে থাকে। লক্ষ্য রাখে কে টাকা নিয়ে বের হচ্ছেন। নিজেদের টার্গেট পেয়ে গেলে ওই লোকটির পিছু নেয় তারা। পথের মধ্যে মোবাইলে তাদের অপর সঙ্গীদের জানিয়ে দেওয়া হয় তাদের অবস্থান।

পিছু নেওয়ার একপর্যায়ে সুবিধামতো জায়গায় রিকশা নিয়ে ঘোরাঘুরিকারীদের একজন সেই ব্যক্তির সামনে এসে সালাম দিয়ে বলে, ‘ভাই কেমন আছেন? আপনি অমুক না?’ এরই মধ্যে এ চক্রের ছদ্মবেশী আরো কয়েকজন রিকশাকে ঘিরে ফেলে। নিজেরা নিজেদের গায়ে ধাক্কা দিয়ে তা না হলে অন্য কোনোভাবে টার্গেট ব্যক্তির আশপাশে একটা জটলা তৈরি করে। এ সুযোগে অন্য সহযোগীরা ভিকটিমের পকেটে হাত ঢুকিয়ে যা পায় নিয়ে নেয় বা তার হাতে ব্যাগ থাকলে ব্যাগসহ টাকা মোবাইল নিয়ে যায়। তার পর খুব দ্রুত সটকে পড়ে।

সূত্র জানায় খোদ রাজারবাগ পুলিশ লাইনস ও এর আশপাশে এই চক্রের সদস্যরা অবস্থান নেয়। তারা সালাম দিয়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই রিকশায় উঠে পড়ে।

এ প্রসঙ্গে গতকাল বাংলাদেশের খবরকে একজন ভুক্তভোগী বলেন, আমি শান্তিনগর চৌরাস্তা থেকে মতিঝিল যাচ্ছিলাম। রাজারবাগ পুলিশ লাইনস গেটের সামনে এক যুবক লম্বা সালাম দেয়। ওর সালামে আন্তরিকতার ভাণ ছিল। আমি তার মুখপানে চেয়ে থাকি। ওই যুবক আবার বলে, ভাই আপনি আমাকে বোধ হয় ভুলে গেছেন। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে রিকশায় উঠে পড়ে। তখন বলি অ্যাকচুয়ালি আমি তোমাকে চিনতে পারিনি। তখন সেই যুবক বলে আমি খারাপ লোক। ওই যুবক যখন বুঝতে পারে আমি তখনো কিছু বুঝে উঠতে পারিনি। তখন সে বলে, ভাই আমি খারাপ লোক আমার কোমরে রিভলবার আছে। মোবাইল আর মানিব্যাগটা বের করেন। এর পর সে মোবাইল আর মানিব্যাগ নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে আবার সালাম দিয়ে বলে ‘ভাই ভালো থাকবেন, আর এদিকে এলে আমার খোঁজ নিয়েন’।

পল্টন থানার ওসি মাহমুদুল হক বলেন, এ চক্রের সদস্যরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় পরে ঘোরাফেরা করে। অবস্থা বুঝে স্যুট-কোটও পড়ে এই চক্রের সদস্যরা। সঙ্গে বিশেষ কায়দায় চাকু, চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্র কাপড়ের আড়ালে লুকিয়ে রাখে। বাইরে থেকে দেখে সন্দেহ করার উপায় নেই। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads