• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
ছুড়ে ফেলে সন্তান মেরে মায়ের আত্মহত্যা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ম্যাপ

অপরাধ

ছুড়ে ফেলে সন্তান মেরে মায়ের আত্মহত্যা

  • ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২০ অক্টোবর ২০১৮

শিশুটির বয়স ছিল মাত্র তিন দিন। এ বয়সে যার কোল তার নিরাপদ আশ্রয় হওয়ার কথা, সেই গর্ভধারিণী মা-ই তাকে নির্মমভাবে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় করে দেন। হাসপাতালের ছয়তলা থেকে নবজাতক সন্তানকে ফেলে দিয়ে হত্যার পর নিজেও লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন মা সীমা আক্তার (২৫)।

শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের পুরাতন জেল রোড এলাকার দ্য ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও স্পেশালাইজড হাসপাতালে এ মর্মন্তুদ ঘটনা ঘটে। ঘটনার আগে পার্শ্ববর্তী লাইফ কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন সীমা। পুলিশের ধারণা, প্রবাসী স্বামীর সঙ্গে কলহের জের ধরেই নবজাতক পুত্রসন্তানকে ছয়তলার ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন সীমা। তিনি আখাউড়া উপজেলার কল্যাণপুর গ্রামের বিল্লাল মিয়ার মেয়ে। এক বছর আগে পারিবারিকভাবে সদর উপজেলার ঘাটিয়ার ফুলচং গ্রামের প্রবাসী মনির মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় সীমার। মনির এখন লেবানন প্রবাসী।

গত মঙ্গলবার সীমার প্রসব বেদনা উঠলে সন্ধ্যা ৬টার দিকে পরিবারের লোকজন তাকে পৌর শহরের লাইফ কেয়ার নামে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে। ওই দিনই তিনি একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। হাসপাতালের ৩০২ নম্বর কক্ষে তার চিকিৎসা চলছিল। শুক্রবার সকালে তার মা রেহেনা বেগম হাসপাতালের রুম থেকে নাশতা আনার জন্য নিচে যান। পরে তিনি হাসপাতালের রুমে এসে দেখেন তার মেয়ে নেই। পরে অন্য রোগীর স্বজনদের কাছে জানতে পারেন তার মেয়ে হাসপাতালের ছাদে উঠে পাশে একটি হাসপাতালের ছাদের ছয়তলা থেকে প্রথমে তার নবজাতককে ফেলে দিয়ে তিনি নিজেও লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রবাসী স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া হয় সীমার। গতকাল সকালে সবার অগোচরে তিনি সন্তানকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে পাশের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভবনের ছাদে গিয়ে নিচে লাফিয়ে পড়েন। ফরিদা খাতুন নামে সীমার পাশের বেডের এক রোগীর স্বজন বলেন, সারা রাত বাচ্চাটি দুধের জন্য কান্নাকাটি করছিল। সীমা ফোনে কারো সঙ্গে ঝগড়া করছিল। ফোনে সে বলছিল ‘বাচ্চাকে দুধ দিতে হবে না, সকালে দেখবা আমি কী করি’।

জসিম মিয়া নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আমি ল্যাবএইড হাসপাতালের উল্টো দিকে একটি রেস্টুরেন্টে নাশতার অর্ডার দিয়ে বসেছিলাম। হঠাৎ দেখি হাসপাতালের ছাদ থেকে এক নারী তার নবজাতককে নিচে ছুড়ে ফেলে দেন। এতে ঘটনাস্থলেই নবজাতকটির মৃত্যু হয়। এরপর ওই নারীও যখন লাফিয়ে পড়ার চেষ্টা করছিল আমরা তখন লাফ দিতে মানা করছিলাম। কিন্তু মিনিট তিনেক পরে ওই নারীও আমাদের কথা না শুনে নিচে লাফিয়ে পড়েন।

ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব সীমার মা রেহেনা বেগম জানান, তরকারি গরম করতে তিনি নিচে নেমেছিলেন। ফিরে এসে সীমা ও তার সন্তানকে কক্ষে দেখতে পাননি। এদিকসেদিক খুঁজেও পাননি। একটু পর মেয়ে ও নাতির মৃত্যুর খবর পান। তিনি জানান, সন্তান জন্মের পর শ্বশুরবাড়ির কেউ দেখতে না আসা নিয়ে স্বামীর সঙ্গে সীমার ঝগড়া হয়। এ কারণেই সন্তানসহ তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে কি না, সেটি নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।

ঘটনার পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. রেজাউল করিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক কলহের জেরে সন্তানকে ছুড়ে ফেলে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন সীমা। তবে তার পার্শ্ববর্তী রোগীরা জানান, রাতে তার স্বামীর সঙ্গে ফোনে কথাকাটাকাটি হয়েছে। এরই জের ধরে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তবে বিষয় যা-ই হোক, তা খতিয়ে দেখা হবে। মা ও সন্তানের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads