‘এই হেলমেট বাহিনীকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও সেই হেলমেট বাহিনী গ্রেফতারে সফলতা দেখাতে পারেনি কেন?’ গত দুই দিন ধরে ঢাকা মহানগরীর মানুষের মুখে এই প্রশ্ন ঘুরছে।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে ১৩ নভেম্বর পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ও গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় এক সপ্তাহের মধ্যে ‘হেলমেট পরা’ ৬ যুবকসহ প্রায় ৭০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু তিন মাস আগে ‘নিরাপদ সড়কের দাবিতে’ গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে হামলাকারী ‘হেলমেট বাহিনী’কে গ্রেফতার করেনি বাহিনীটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে জনমনে এ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
নয়াপল্টনের সংঘর্ষে অংশ নেওয়াদের গ্রেফতারের বিষয়ে জানাতে গতকাল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। সেখানে ইউনিটপ্রধান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলামকে ধানমন্ডির হামলায় অংশ নেওয়া সেই ‘হেলমেট বাহিনী’ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ওই বিষয়ে এখনো তদন্ত চলছে।
প্রসঙ্গত, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে গত ৭ আগস্ট ধানমন্ডি ও আশপাশ এলাকায় হাতে লাঠিসোটা, লোহার রড, ছোরা, রামদা, কিরিচ ও হকিস্টিক নিয়ে মাথায় হেলমেট পরে সন্ত্রাসীরা সাংবাদিকদের ওপর হামলে পড়ে। তারা নিরাপদ সড়কের দাবিতে মাঠে নামা শিক্ষার্থীদেরও ধরে ধরে পেটায়। রাজধানীর ধানমন্ডিতে এরকম পরিস্থিতির মধ্যে তথ্য সংগ্রহ করার সময় ‘হেলমেট বাহিনীর’ হামলায় গুরুতর আহত ও জখম হন অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) ফটো সাংবাদিক এ এম আহাদ, দৈনিক বণিক বার্তার পলাশ শিকদার, প্রথম আলোর সাংবাদিক দীপ্ত ও ফ্রিল্যান্স ফটো সাংবাদিক রাহাত করিমসহ কমপক্ষে ১০ জন সাংবাদিক।
ওই ঘটনায় গত তিন মাসে কাউকে গ্রেফতারে পুলিশকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। এই তিন মাসে বিভিন্ন সময় ঢাকা মহানগর পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা ‘গ্রেফতার হবে-হচ্ছে, তদন্ত চলছে, হেলমেট বাহিনীকে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে’ জাতীয় কথাবার্তা বলে কালক্ষেপণ করেছেন।
নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের রাতে ৭১ টিভির টক শোতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, হেলমেট বাহিনী কারা- সেটা দুই দিনের মধ্যে চিহ্নিত ও গ্রেফতার করে জাতির সামনে তুলে ধরা হবে।
এ সময় উপস্থিত সিনিয়র সাংবাদিক জ. ই. মামুন প্রশ্ন করেন, তাহলে ধানমন্ডিতে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারী হেলমেট বাহিনী গ্রেফতার করা গেল না কেন? এ সময় ডিএমপি কমিশনার বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন এবং জবাব এড়িয়ে যান।
এ ব্যাপারে পুলিশের সাবেক আইজি মোদাব্বির হোসেন চৌধুরী বলেন, (পুলিশের) কেউ কেউ পক্ষপাতের দোষে দুষ্ট হয়, এটা তার নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু পুলিশের দায়িত্ব হচ্ছে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে নিজেদের পেশাদারিত্ব বাজায় রেখে কাজ করা। এর ব্যত্যয় হলে সাধারণ মানুষের কাছে তারা গ্রহণযোগ্যতা হারায়।
বিশিষ্ট আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সিগমা হুদা বলেন, একই ঘটনায় যদি দুই রকম ব্যবস্থা হয়, তাহলে সেখানে প্রশ্ন ওঠাটা স্বাভাবিক। পুলিশের গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে এই হেলমেট বাহিনী গ্রেফতার হলো, কিন্তু কিছুদিন আগেই সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারী সেই হেলমেট বাহিনী কোথায়?
তিনি আরো বলেন, এসব কারণে পুলিশ এখনো বিতর্কিত। পুলিশ যদি নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে নিজেদের দায়িত্ব পালন করত তাহলে বাহিনীটি এতদিনে জনগণের পূর্ণ আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হতো। কিন্তু সেটা তারা করছে না বা করতে পারছে না।