• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
নাটোর জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিসহ নানা অভিযোগ

নাটোর জেলা প্রশাসক গোলামুর রহমান

সংগৃহীত ছবি

অপরাধ

নাটোর জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিসহ নানা অভিযোগ

  • নাটোর প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৩ নভেম্বর ২০১৮

নাটোরের জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে  নারী ম্যাজিষ্ট্রেট কে যৌন হয়রানি, কর্মচারীকে মারপিট এবং সরকারী দপ্তরের বিভিন্ন কাজে অসহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে। নারী ম্যাজিস্ট্রেটকে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে কু-প্রস্তাব দেওয়ায়, ভুক্তভোগি ওই ম্যাজিষ্ট্রেট প্রতিকার চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এছাড়া নানা শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সদ্য যোগদানকারী নাটোরের জেলা প্রশাসক গোলামুর রহমান।

জেলা প্রশাসন সুত্র জানায়, চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর নাটোরের জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন গোলামুর রহমান। বিসিএসএসের ২০তম ব্যাচের এই ক্যাডার অফিসার সর্বশেষ কর্মরত ছিলেন শিপিং কর্পোরেশনের ম্যানেজার হিসেবে। সম্প্রতি পদোন্নতি পেয়ে ২০তম জেলা প্রশাসক হিসেবে তৎকালীন জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুনের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। তবে যোগদানের পর থেকেই সরকারি দপ্তরের বিভিন্ন কাজে অসহযোগিতা এবং নানা শ্রেণি ও  পেশার মানুষের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং বিভিন্ন কর্মকান্ডের কারণে ক্ষুদ্ধ নাগরিক সমাজ।

এদিকে জেলা প্রশাসক গোলামুর রহমান যোগদান করার পর তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ উঠে নারী ম্যাজিস্ট্রট যৌন হয়রানির বিষয়টি।  

সম্প্রতি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্ট থেকে তার কার্যালয়ের এক নারী ম্যাজিস্ট্রেটকে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার এবং মোবাইল ফোনে কু-প্রস্তাব দেয়। জেলা প্রশাসক গোলামুর রহমানের এই অনৈতিক প্রস্তাবে  রাজি না হওয়ায় বিভিন্নভাবে ওই ম্যাজিস্ট্রেটকে হয়রানি করেন তিনি। পরে ভুক্তভোগি ওই নারী ম্যাজিষ্ট্রেট লিখিত ভাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবগত করলে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়। তবে মান-সম্মানের ভয়ে ওই নারী ম্যাজিস্ট্রেট গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে রাজি হননি। শুধু নারী ম্যাজিষ্ট্রেট নয়, জেলা প্রশাসক গোলামুর রহমানের বিরুদ্ধে বগুড়া আর্ট কলেজের এক ছাত্রীকে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে কু-প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।

সূত্র জানায়, গত ৭ নভেম্বর  নাটোর শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠের পাশে পুরাতন ডিসি বাংলো পরিদর্শনে যান জেলা প্রশাসক গোলামুর রহমান। এ সময় ডিসি বাংলোর দেখভালের দায়িত্বে থাকা ডিসি অফিসের মাস্টার রোলের কর্মচারী মোতালেব হোসেন গেটের চাবী আনতে দেরি করায় শারীরিকভাবে তাকে মারপিট করেন ডিসি।  এছাড়া কর্মচারী মোতালেবসহ দু’জনকে চাকরিচ্যুত করে বাংলো থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেন ডিসি।  এ নিয়ে কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। 

এ বিষয়ে মাস্টার রোলের কর্মচারী মোতালেব হোসেন কান্নাজড়িক কণ্ঠে বলেন, ‘আমার আসতে দেরী হওয়ায় ডিসি স্যার আমাকে মেরেছে ‘। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মচারী বলেন, ‘আমার ত্রিশ বছর চাকরির জীবনে এত খারাপ ডিসি আগে কখনো দেখিনি।  সে যোগদানের পর থেকে পুরো ডিসি অফিসে হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে।  তার ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পায়না।  অবিলম্বে এই ধরনের ডিসির বদলির দাবী জানাচ্ছি’।

তবে যোগদানের পর থেকেই সরকারী দপ্তরের বিভিন্ন কাজে অসহযোগিতা এবং নানা শ্রেণি ও  পেশার মানুষের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং বিভিন্ন কর্মকান্ডের কারণে ক্ষুদ্ধ নাগরিক সমাজ।  গত ১৬ নভেম্বর নাটোর সুগার মিলস এবং নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন করে। কিন্তু আখের চিনি সাদা করার জন্য সালফারের প্রয়োজন হলেও আজ পর্যন্ত এনওসি অনুমতিপত্র দেয়নি ডিসি গোলামুর রহমান। বর্তমানে মিল দু’টির স্টকে থাকা সালফার দিয়ে কার্যক্রম চলছে।

এ বিষয়ে নাটোর সুগার মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মাদ শহিদল্লাহ বলেন, ‘বর্তমান জেলা প্রশাসকের কোনো সহযোগিতা আমরা পাচ্ছি না।  সালফার আনার অনুমতির জন্য ১৫ দিন ধরে তার কার্যালয়ে ঘুরাঘুরি করে তিনি অনুমতি দেয়নি। ফলে সালফারের অভাবে মিলটি যেকোনো দিন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।  এছাড়া মিল জোন এলাকায় পাওয়ার ক্রাসার দিয়ে অবৈধভাবে আখ মাড়াই চললেও জেলা প্রশাসকের কোনো সহযোগিতা পাইনি। যার কারণে এবারও মিলটি লোকসান গুনতে হতে পারে’।

এছাড়া গত ৭নভেম্বর কান্দিভিটা এলাকার প্রাচীন  ঐতিহ্যবাহি পুরাতন পার্ক ভেঙ্গে লেডিস ক্লাব করেন বর্তমান জেলা প্রশাসক। এ বিষয়ে নাটোরের লেখক সাহিত্যিক, আইনজীবী ও সাংবাদিকগণ শিশু পার্কটি চালূ কারার দাবিতে  স্বারকলিপি দিলেও  আজ পর্যন্ত তিনি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এ নিয়ে স্থানীয় সুশীল সমাজের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ বিষয়ে বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক জাকির তালুকদার বলেন, ‘প্রাচীন এই শিশু পার্কটির সাথে জড়িয়ে আছে নাটোর বাসীর আবেগ। কিন্তু হঠাৎ করে শিশুপার্কটি বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা ক্ষুদ্ধ’।

সচেতন নাগরিক কমিটি নাটোর জেলা শাখার সভাপতি রনেন রায় বলেন, ‘বর্তমান জেলা প্রশাসক যোগদানের পর থেকে প্রশাসনে হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে। একজন জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি, কর্মচারীকে মারপিট এমন সব গুরুতর অভিযোগ মেনে নেওয়া যায়না।  অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবী জানাচ্ছি’।

অভিযোগের বিষয়ে জেলা প্রশাসক গোলামুর রহমান বলেন, ‘কখনো কখনো তার ফেসবুক আইডি হ্যাক করা হয়। কেউ হ্যাক করে এই কাজগুলো করে থাকতে পারে’। ফেসবুক আইডি হ্যাক হলেও আপনি আইনগত ব্যবস্থা নেননি কেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তার নিজস্ব গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় চলে।  তবে আমি ফেসবুকের বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে চাইন ‘।  তবে কোনো কর্মচারীকে মারপিটের ঘটনা নেই বলে দাবী করেন তিনি।  

এদিকে নারী ম্যাজিষ্ট্রেটকে যৌন হয়রানি, কর্মচারীকে মারপিট এবং সরকারী দপ্তরের বিভিন্ন কাজে অসহযোগিতাসহ ৬দফার একটি গোপন প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠিয়েছে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা। গোপন ওই প্রতিবেদনে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সাথে বিরোধ উল্লেখ করে আসন্ন নির্বাচনে সমস্যা তৈরী হতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি অনু বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। ভুক্তভোগি প্রতিকার চাইলে এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads