• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
পরিবারের দাবি হত্যা মন্তব্যে নারাজ পুলিশ

বিএনপি নেতা আবু বকর

অপরাধ

মনোনয়নপ্রত্যাশী বকরের দাফন সম্পন্ন

পরিবারের দাবি হত্যা মন্তব্যে নারাজ পুলিশ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক ও যশোর প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৪ নভেম্বর ২০১৮

বুড়িগঙ্গা নদী থেকে উদ্ধার হওয়া যশোরের কেশবপুরের বিএনপি নেতা আবু বকরের গোপনাঙ্গে জখম রয়েছে। তবে তার শরীরের অন্যান্য স্থানে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। তাই তাকে তুলে নেওয়ার পর অণ্ডকোষ চেপে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মর্গসংশ্লিষ্ট সূত্রের। কিন্তু ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার আগে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি পুলিশ ও ময়নাতদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। যদিও নিহতের পরিবারের দাবি, আবু বকরকে পরিকল্পিতভাবে অপহরণ করে হত্যার পর লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এদিকে, গতকাল শুক্রবার দুপুরে বকরের লাশ ঢাকা থেকে কেশবপুরে পৌঁছার পর দুই দফা জানাজা শেষে বিকালে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে মনোনয়ন চাইতে আবু বকর আবুরকে (৭০)  গত ১৮ নভেম্বর রোববার রাত ৮টার পর রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে তাকে অপহরণ করা হয়। এর দুদিন পর ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ বুড়িগঙ্গা নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে তার লাশ উদ্ধার করে। ঘটনার চারদিন পর গত বৃহস্পতিবার ফেসবুকে ছবি দেখে মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে গিয়ে তার শনাক্ত করেন পরিবারের সদস্যরা।

নিহতের ভাতিজা সুমন ও স্থানীয় বিএনপি নেতারা জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নের জন্য আবু বকর আবু গত ১২ নভেম্বর ঢাকায় যান। পল্টন এলাকার মেট্রোপলিটন হোটেলের চতুর্থ তলার ৪১৩ নম্বর রুমে ছিলেন তিনি। সেখান থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনে জমাও দেন। সাক্ষাৎকার বোর্ডে অংশ নেওয়ার জন্য ওই হোটেলেই অবস্থান করছিলেন। ১৮ নভেম্বর রাত ৮টার দিকে তার সঙ্গী ভাগনে ও মজিদপুর ইউপি মেম্বার সাইফুল ইসলাম ওষুধ কিনে ফিরে এসে তাকে আর হোটেল রুমে পাননি। এদিন সন্ধ্যায় হোটেলের সামনে থেকে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

পরে ০৯৬৩৮৮৮৮২০২ নম্বর থেকে ওই ভাগনের কাছে ফোন দিয়ে তার মামাকে ছাড়াতে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। এ জন্য ওই রাতে কয়েকটি বিকাশ নম্বরও সরবরাহ করে অপহরণকারীরা। কিন্তু রাত ১২টার পর বিকাশে লেনদেন বন্ধ থাকায় মঙ্গলবার সকালে অপহরণকারীরা ০১৭৪৮১১০৫৭৭ নম্বর মোবাইল থেকে পুনরায় যোগাযোগ করে। এরপর তাদের  দেওয়া বিভিন্ন নম্বরে দেড় লাখ টাকা বিকাশ করা হয়। পরে আরো ২০ হাজার টাকা বিকাশ করা হয়। ওই দিন দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে অপহরণকারীদের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, অপহরণের পর কেশবপুর ও ঢাকার সংশ্লিষ্ট থানায় বার বার ধরনা দিলেও পুলিশ অভিযোগ গ্রহণ ও ঘটনার তদন্ত করতে গড়িমসি করে।

কেশবপুর বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন আজাদ গতকাল সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার পর তারা ছুটে যান শাহবাগ থানায়। সবকিছু খুলে বলেন পুলিশকে। কিন্তু পুলিশ তাদের কোনো সহযোগিতা করেনি। এমনকি জিডি করতে চাইলেও পুলিশ তা গ্রহণ করেনি। বকরের নিখোঁজ হওয়া ও লাশ উদ্ধারের মাঝখানে একাধিকবার শাহবাগ থানা পুলিশের কাছে গিয়ে ধরনা দিলেও তারা কোনো সহযোগিতা করেনি। এমনকি টাকা পাঠানোর জন্য যে ১০টি বিকাশ নম্বর দেওয়া হয়েছিল সেগুলোও পুলিশ গ্রহণ করেনি।

দক্ষিণ-কেরানীগঞ্জ থানার ওসি শাহ জামান বলেন, গত ১৯ নভেম্বর বেলা ১টার দিকে বুড়িগঙ্গার চর-খেজুরবাগ বেবী সাহেব ডকইয়ার্ডের কাছ থেকে বকরের লাশ উদ্ধারের সময় তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। পরনে ছিল সাদা পাজামা ও গেঞ্জি। ওই সময় পুলিশ লাশটিকে অজ্ঞাত হিসেবে উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়। এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত নিহতের পক্ষে কেউ থানায় এসে কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগের পর তদন্ত করে হত্যার আলামত পাওয়া গেলে অপমৃত্যু মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়ে যাবে।

এদিকে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন না পেয়ে আবু বকর সিদ্দিকীর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন মিটফোর্ড হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক নওশাদ মাহমুদ। তবে মর্গের অপর একটি সূত্র জানায়, নিহতের অণ্ডকোষে আঘাতের আলামত পাওয়া গেছে।

নিহত আবু বকর বিএনপির শুরু থেকেই দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। তিনি ২০০১ সাল পর্যন্ত কেশবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি এবং নিখোঁজ হওয়ার দিন পর্যন্ত তিনি যশোর জেলার সহ-সভাপতি ছিলেন। কেশবপুরের মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের পাঁচবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যানও ছিলেন তিনি। আবু বকর আবুর মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে কেশবপুরে শোকের ছায়া নেমে আসে।

মনোনয়ন চাইতে গিয়ে লাশ হয়ে বাড়ি ফেরা যশোর জেলা বিএনপির সহসভাপতি আবু বকর আবুর (৭০) দাফন সম্পন্ন হয়েছে গতকাল শুক্রবার। দুপুর ১২টার দিকে তার মরদেহ ঢাকা থেকে কেশবপুরে এসে পৌঁছায়। বাদজুমা কেশবপুর পাবলিক মাঠে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তার গ্রামের বাড়িতে দ্বিতীয় দফা জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। স্থানীয়রা বলছেন, রাজনীতি ও সামাজিক কাজের কারণে জীবনে বিয়েও করেননি আবু। এমন নেতা আর এই এলাকায় হবে না।

আবুর মৃত্যুতে জেলা ও উপজেলা বিএনপি বিভিন্ন শোক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তার মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন ও কালোব্যাজ ধারণ করেছেন নেতাকর্মীরা।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads