• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
ডিসির বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেটকে যৌন হয়রানির অভিযোগ

রাতে নারী ম্যাজিস্ট্রেটকে বাংলোতে ডাকতেন জেলা প্রশাসক

অপরাধ

ডিসির বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেটকে যৌন হয়রানির অভিযোগ

প্রতিকার চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি

  • নাটোর প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৪ নভেম্বর ২০১৮

নাটোরের জেলা প্রশাসকের (ডিসি) বিরুদ্ধে নারী ম্যাজিস্ট্রেটকে যৌন হয়রানি, কর্মচারীকে মারপিট এবং সরকারি দফতরের বিভিন্ন কাজে অসহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী ওই ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিকার চেয়ে গত ২৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা প্রশাসক গোলামুর রহমান।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর নাটোরের ডিসি হিসেবে যোগদান করেন গোলামুর রহমান। বিসিএসের ২০তম ব্যাচের এই ক্যাডার কর্মকর্তা সর্বশেষ শিপিং করপোরেশনের ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সম্প্রতি পদোন্নতি পেয়ে জেলা প্রশাসক হন। নাটোরে যোগদানের পর থেকেই সরকারি দফতরের বিভিন্ন কাজে অসহযোগিতা এবং নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ ওঠে। এসব কারণে স্থানীয় নাগরিক সমাজ তার ওপর ক্ষুব্ধ। ডিসি গোলামুর রহমানের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ, নারী ম্যাজিস্ট্রটকে যৌন হয়রানির বিষয়টি। সম্প্রতি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে নিজ কার্যালয়ের এক নারী ম্যাজিস্ট্রেটকে মেসেঞ্জার এবং মোবাইল ফোনে কুপ্রস্তাব দেওয়া হয়। এই অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ওই ম্যাজিস্ট্রেটকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করেন ডিসি। পরে ভুক্তভোগী ওই নারী ম্যাজিস্ট্রেট লিখিতভাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবগত করলে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে (ম্যাজিস্ট্রেটকে) অন্যত্র বদলি করা হয়। তবে মান-সম্মানের ভয়ে ওই ম্যাজিস্ট্রেট গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। শুধু নারী ম্যাজিস্ট্রেট নয়, জেলা প্রশাসক গোলামুর রহমানের বিরুদ্ধে বগুড়া আর্ট কলেজের এক ছাত্রীকে ফেসবুক মেসেঞ্জারে কুপ্রস্তাব দেওয়ারও অভিযোগও রয়েছে।

সূত্র জানায়, গত ৭ নভেম্বর নাটোর শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠের পাশে পুরাতন ডিসি বাংলো পরিদর্শনে যান জেলা প্রশাসক গোলামুর রহমান। এ সময় বাংলোর দেখভালের দায়িত্বে থাকা ডিসি অফিসের মাস্টার রোলের কর্মচারী মোতালেব হোসেন গেটের চাবি আনতে দেরি করায় তাকে মারপিট করেন জেলা প্রশাসক। এ ছাড়া কর্মচারী মোতালেবসহ দুজনকে চাকরিচ্যুত করে বাংলো থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। এ নিয়ে কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মচারী বলেন, আমার ত্রিশ বছর চাকরির জীবনে এত খারাপ ডিসি কখনো দেখিনি। তার ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পায় না।

গত ১৬ নভেম্বর নাটোর সুগার মিলস এবং নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন হয়। কিন্তু আখের চিনি সাদা করার জন্য সালফারের প্রয়োজন হলেও আজ পর্যন্ত এনওসি অনুমতিপত্র দেননি ডিসি গোলামুর রহমান।

এ বিষয়ে নাটোর সুগার মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মাদ শহিদুল্লাহ বলেন, সালফার আনার অনুমতির জন্য ১৫ দিন ধরে তার কার্যালয়ে ঘুরাঘুরি করলেও ডিসি অনুমতি দেননি। সালফারের অভাবে মিলটি যেকোনো দিন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

গত ৭ নভেম্বর কান্দিভিটা এলাকার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী পুরাতন শিশুপার্ক ভেঙে লেডিস ক্লাব করেন বর্তমান জেলা প্রশাসক। নাটোরের লেখক, সাহিত্যিক, আইনজীবী ও সাংবাদিকরা শিশুপার্কটি চালু কারার দাবিতে স্মারকলিপি দিলেও তিনি ব্যবস্থা নেননি।

এ বিষয়ে কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার বলেন, প্রাচীন এই শিশুপার্কটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে নাটোরবাসীর আবেগ। হঠাৎ করে শিশুপার্কটি বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা ক্ষুব্ধ।

সচেতন নাগরিক কমিটি নাটোর জেলা শাখার সভাপতি রনেন রায় বলেন, বর্তমান জেলা প্রশাসক যোগদানের পর থেকে প্রশাসনে হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে। একজন জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি, কর্মচারীকে মারপিট- এমন সব গুরুতর অভিযোগ মেনে নেওয়া যায় না। অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।

ম্যাজিস্ট্রেটকে কুপ্রস্তাবের অভিযোগের বিষয়ে ডিসি গোলামুর রহমান বলেন, কখনো কখনো আমার ফেসবুক আইডি হ্যাক করা হয়। কেউ হ্যাক করে এই কাজগুলো করে থাকতে পারে। 

ফেসবুক আইডি হ্যাক হলেও আইনগত ব্যবস্থা নেননি কেন- বাংলাদেশের খবরের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তার নিজস্ব গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় চলে। আমি ফেসবুকের বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাই না। কর্মচারীকে মারপিটের ঘটনাও অস্বীকার করেছেন ডিসি গোলামুর রহমান। 

অপরদিকে, নারী ম্যাজিস্ট্রেটকে যৌন হয়রানি, কর্মচারীকে মারপিট এবং সরকারি দফতরের বিভিন্ন কাজে অসহযোগিতাসহ ছয়টি অভিযোগ সংবলিত একটি গোপন প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়সহ বিভিন্ন দফতরে পাঠিয়েছে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ভুক্তভোগী প্রতিকার চাইলে এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads