• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
সীমান্তের অর্ধশত পয়েন্ট দিয়ে ঢুকছে আগ্নেয়াস্ত্র

আগ্নেয়াস্ত্র

সংগৃহীত ছবি

অপরাধ

সীমান্তের অর্ধশত পয়েন্ট দিয়ে ঢুকছে আগ্নেয়াস্ত্র

৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় মিলছে দেশে

  • আজাদ হোসেন সুমন
  • প্রকাশিত ২৮ নভেম্বর ২০১৮

দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর প্রায় অর্ধশত পয়েন্ট দিয়ে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক ঢুকছে ভারত থেকে। ব্যবসাও চলছে রমরমা। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরকের এই রমরমা ব্যবসায় অপরাধ বিশ্লেষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, এর সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। চোরাকারবারিরা সারা বছরই সীমান্তের ওপার থেকে অস্ত্র এনে থাকে।

গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে অবাধে ভারতীয় আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য দেশে ঢুকছে। রাজশাহীর গোদাগাড়ী, পুঠিয়া, বাঘা, চারঘাট উপজেলা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা, শিবগঞ্জ, ভোলাহাট ও গোমস্তাপুর সীমান্ত দিয়ে প্রবেশের পরে সেগুলো সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে।

অস্ত্র চোরাকারবারির গডফাদাররা এসব অঞ্চলকে তাদের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। বিজিবি, র্যাব, ডিবি পুলিশ ও পুলিশ সদস্যরা মাঝে মধ্যে কিছু অস্ত্রের চালান আটক করলেও সিংহভাগই রয়ে যাচ্ছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ ও র্যাবের হাতে ধরা পড়া সাম্প্রতিক সময়ের কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র চালান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশের ৪৮টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিনই অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ঢুকছে। ভারতে তৈরি ৭.৬৫ পিস্তল সীমান্তে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় কিনছে চোরাকারবারিরা। সেগুলো বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায়। আর ৯ এমএম পিস্তল সীমান্তে বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায়। আর দেশের ভেতরে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সূত্র জানায়, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছাড়াও নেত্রকোনা, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, নওগাঁ, জয়পুরহাট, যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, সাতক্ষীরা, দিনাজপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এবং উপকূলীয় বরিশালের বিভিন্ন স্থান দিয়ে ছোট-বড় হাজার হাজার অবৈধ অস্ত্র ঢুকছে।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা, বেলঘরিয়া, বারাসাত, বসিরহাট, বনগাঁ, জঙ্গিপুর, রায়গঞ্জ, লালগোলা, ডোমকল, কৃষ্ণনগর, দমদম, বাণীহাট, হিজলগঞ্জ, ভগবানগোলা এলাকা থেকে আসছে সেই সব অস্ত্র।

এ ব্যাপারে পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (প্রশাসন) মো. মোখলেসুর রহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ভারত থেকে অস্ত্র আসা নতুন কিছু নয়। এর সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক আছে বলেও আমি মনে করি না। চোরাকারবারিরা অস্ত্র বছরজুড়েই এনে থাকে। তাদের বেশিরভাগই ধরা পড়ে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে এরা জামিনে মুক্তি পেয়ে পুনরায় এই ব্যবসা শুরু করে।

তিনি বলেন, এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেউ কোনো অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করার চেষ্টা করলে ঠেকানো হবে। মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের ইতোমধ্যে সদর দফতর থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনো নাশকতা বা বিশৃঙ্খল কর্মকাণ্ড বরদাশত করা হবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিজেদের দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, দেশজুড়ে বিশেষ অভিযান চলছে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে সব উদ্ধার সম্ভব হবে।

পুলিশের সাবেক আইজি নূর মোহাম্মদ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আমাদের অনেক সীমান্ত এলাকাই অরক্ষিত। সীমান্ত নিরাপত্তায় যারা কাজ করছেন তাদের আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। সীমান্তবর্তী জেলা পুলিশকেও অবৈধ অস্ত্র চোরাকারবারিদের শনাক্তকরণ এবং গ্রেফতারে সোর্স নিয়োগ বাড়াতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সীমান্তে গোয়েন্দা নজরদারিও আরো বাড়াতে হবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads