• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
বাংলামোটরে বাসা থেকে শিশুর মরদেহ উদ্ধার

নুরুজ্জামান কাজল

ছবি : সংগৃহীত

অপরাধ

মাদকাসক্ত বাবা আটক

বাংলামোটরে বাসা থেকে শিশুর মরদেহ উদ্ধার

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮

ঢাকার বাংলামোটরের ১৬ নম্বর লিঙ্ক রোডের বাসায় বাবার হাতে শিশুসন্তানের মৃত্যু নিয়ে জটলার শুরু সকাল ৮টা থেকে। বাসার সামনে, আশপাশে পাড়া-পড়শিদের ভিড়। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যায় পুলিশ, র্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। শাহবাগ পুলিশের কাছে বার্তা আসে শিশুসন্তানকে হত্যা করেছে বাবা। সেখানে গিয়ে বাড়ি ঘেরাও করে পুলিশ। এর মধ্যে রটে যায়, এক সন্তানকে হত্যার পাশাপাশি আরেক সন্তানকে জিম্মি করে রেখেছেন বাবা নুরুজ্জামান কাজল।

এই খবরে উত্তেজনা বাড়ে। পুলিশ, র্যাব ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা বার বার বাড়িতে ঢুকতে চাইলেও নুরুজ্জামান কাজল তা দিচ্ছিলেন না। কোনো সাহায্য লাগবে কি না শিশুটির বাবার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কারো কোনো সাহায্যের দরকার নেই। আপনারা কেন এসেছেন? আপনারা চলে যান। দুপুর ১টার দিকে আমি নিজে আজিমপুর কবরস্থানে গিয়ে আমার ছেলেকে দাফন করব।

পরে কৌশল নেয় পুলিশ। ছেলের জানাজায় অংশ নিতে আশপাশের বাসিন্দারা অপেক্ষা করছে বলায় নুরুজ্জামান কাজল দরজা খুলে দেন। বেরিয়ে এলে র্যাব-পুলিশ সদস্যরা তাকে আটক করে।

দুপুর দেড়টার দিকে পুলিশ নুরুজ্জামান কাজলকে আটক করে বাসার ভেতরে থাকা এক শিশুর মৃতদেহ ও অপর জীবিত শিশুকে উদ্ধার করে। নিহত শিশুটির মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত করে বলতে পারছে না কেউ। মাদকাসক্ত বাবা বলেছেন, শিশুটির মৃত্যু হয়েছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে। শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল হোসেন বাংলাদেশের খবরকে বলেছেন, মৃত শিশুর শরীরে রক্ত বা কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

মাদকাসক্ত নুরুজ্জামান কাজলের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে মাসখানেক আগে দুই শিশুপুত্রকে রেখে বাড়ি ছেড়ে চলে যান তার স্ত্রী। ওই বাড়ি ঘিরে নাটকীয়তার সূচনা গতকাল বুধবার সকাল ৮টার দিকে। কাজল স্থানীয় এক মাদরাসায় গিয়ে বলেন, তার ছোট ছেলে সাফায়েত বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে। তিনি ছেলের মৃত্যু সংবাদ মাইকে ঘোষণা করতে অনুরোধ করেন এবং কোরআন খতমের জন্য মাদরাসা থেকে কাউকে বাসায় পাঠাতে বলেন। তার কথায় মাদরাসা থেকে একজন ওই বাসায় গিয়ে দোয়া দরুদ পড়া শুরু করেন।

র্যাব-২-এর এসআই শহীদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমি বাড়ির ভেতরে ঢোকার পর দেখি শিশুটির পাশে একজন মৌলভী বসে আছেন। কাফনের কাপড়ে  মোড়ানো অবস্থায় একটি টেবিলের ওপর রাখা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, সংবাদ পেয়ে আমরা ওই বাসায় যাই। দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিলে দেখা যায়  ভেতরে টুপি ও পাঞ্জাবি পরা ব্যক্তিও আছেন। টেবিলের ওপর কাফনে মোড়ানো আরেক শিশুর লাশ। নুরুজ্জামান কাজলের হাতে রামদা। আমরা চলে না গেলে অপর শিশুকে হত্যা করার হুমকি দেন তিনি। আমরা জীবিত শিশুটিকে উদ্ধার করতে কৌশল অবলম্বন করি। রক্তপাত এড়াতে বাইরে থেকে মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়- বাইরে আপনাদের জন্য মানুষ অপেক্ষা করছে। শিশুটির জানাজার জন্য মসজিদে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। শিশুটির জানাজার কথা বলাতে নুরুজ্জামান শান্ত হন এবং এক পর্যায়ে দরজা খুলে তিনি বের হন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কাজলদের পরিবার ওই এলাকার পুরনো বাসিন্দা। তার বাবা মনু মেম্বারও স্থানীয়ভাবে বেশ পরিচিত ব্যক্তি। এলাকায় তাদের আলাদা পারিবারিক সুনাম আছে। কাজল নিজেই বাংলামোটর লিঙ্ক রোডের ১৬ নম্বর হোল্ডিংয়ের ওই বাড়ির মালিক। মাদকাসক্তির কারণে কাজলের সঙ্গে অন্যদের সম্পর্কও ভালো ছিল না। এ নিয়ে তার সঙ্গে আত্মীয়স্বজনদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। সম্প্রতি এলাকায় তার চাচার সঙ্গে মারামারিতে লিপ্ত হন। এসব নিয়ে আপন ভাইয়েরাও কাজলের ওপর ছিলেন ত্যক্তবিরক্ত।

শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল হাসান বলেন, ওই বাসায় একটি শিশু মারা গেছে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। শিশুটির বয়স আড়াই থেকে তিন বছর। তিনি জানান, শিশুর বাবা নুরুজ্জামান কাজল এর আগে মাদক গ্রহণের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন। জেলেও পাঠানো হয়। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ওই বাসার দোতলায় থাকতেন কাজল।

পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, তার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মাসখানেক আগে তার স্ত্রী বাড়ি  ছেড়ে চলে গেছেন। স্থানীয় একজন বাসিন্দা আকিল জামান বলেন, কয়েক মাস আগে স্ত্রীকেও মারধর করেন কাজল। প্রতিবেশীরা এসে তার স্ত্রীকে উদ্ধার করেন। নির্যাতন সইতে না পেরে স্ত্রী চলে গেছেন। বাচ্চা দুটি বাবার সঙ্গে ছিল।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads