• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
উখিয়া-ঘুমধুমে ১৭ টি ইটভাটায় জ্বলছে বনের কাঠ

ইটভাটায় জ্বলছে বনের কাঠ

ছবি : বাংলাদেশের খবর

অপরাধ

পরিবেশ ধ্বংসের ভয়াবহ নির্মমতা

উখিয়া-ঘুমধুমে ১৭ টি ইটভাটায় জ্বলছে বনের কাঠ

  • মাহমুদুল হক বাবুল, উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১২ ডিসেম্বর ২০১৮

পরিবেশ সম্মত স্থান কাল ও পাত্র ভেদে ইট তৈরির বাধ্যবাদকতা থাকলেও এখানেই তা মানা হচ্ছে না। প্রভাব বিস্তার ও কালো টাকা ব্যবহারের মাধ্যমে লোকালয়ে সম্পূর্ণ অবৈধ উপায়ে তৈরি করা হচ্ছে পাকা স্থাপনা তৈরির অন্যতম উপকরন ইট। ইট তৈরি ও পুড়ানোর ক্ষেত্রে বনসম্পদ ব্যবহারের উপর পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ভাটা মালিকেরা লোক দেখানো কিছু পরিমান কয়লা মজুদ করে পেছনের দরজা দিয়ে ইট ভাটায় জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে ব্যাক্তি মালিকানাধিন সামাজিক বনায়নের কাঠ ও বন সম্পদ। এমনকি লোকালয় থেকে ফলজ ও বনজ গাছ কম মূল্যে ক্রয় করে ইট ভাটায় পুড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। ইট ভাটায় স্থাপন করা চিমনির কালো ধুঁয়ায় স্থানীয় পরিবেশ দূষিত হয়ে কৃষিজাত পন্যের উপর প্রভাব পড়ছে। পাশাপাশি ইট ভাটা সংলগ্ন বসতি গুলোতে বয়োবৃদ্ধ ও শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ বললেন, অবৈধ ইট ভাটার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উখিয়ার হলদিয়া পাতাবাড়ী, হায়দার আলী ও ইউপি সদস্য ফজল করিম, মধ্যম হলদিয়া আব্দুস ছবুর কোম্পানি, ঘুমধুমের চাইল্যাতলী ইসহাক সাওদাগর ও তৎসংলগ্ন আজুখাইয়া আবুল কালাম ও পলাশ বড়ুয়ার মালিকানাধীন কয়েকটি ইট ভাটা ঘুরে দেখা যায়, ভাটার সামনে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য কিছু পরিমান কয়লা মজুদ রাখা হলেও তা ব্যবহার করা হচ্ছে না। ইট ভাটার পেছনে গিয়ে দেখা যায়, শতশত টন কাচা লাকড়ী মজুদ রাখা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী শামশুল আলম সাওদাগরসহ আরো কয়েকজন গ্রামবাসী অভিযোগ করে জানান, চাইল্যাতলী ও আজুখাইয়া এলাকায় অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠিত ইট ভাটায় প্রচুর পরিমান সামাজিক বনায়নের গাছ, ফলজ ও বনজ গাছসহ বনসম্পদ নির্বিচারে পুড়ানো হচ্ছে। ইট ভাটার চিমনি থেকে নির্গত কালো ধুঁয়ায় এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠলেও দেখার কেউ নেই। স্থানীয় স্কুল শিক্ষক হেলাল উদ্দিন জানান, ইট ভাটার কালো ধুঁয়ায় শিক্ষার্থীরা ও এলাকার বয়োবৃদ্ধরা শ্বাস কষ্টেরমত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। স্থানীয় কৃষক নজু মিয়া জানান, ইট ভাটার কারনে শীতকালিন শাকসবজির মারাত্নক অবনতি ঘটছে। এ ব্যাপারে ভাটা মালিক আবুল কালামের সাথে যোগাযোগ করে জানতে চাওয়া হলে, তার ইট ভাটার বৈধতা আছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে সে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। তবে মজুদ করা জ্বালানি কাঠের ব্যাপারে জানতে চাইলে সে জানান, তার মালিকানাধীন সামাজিক বনায়নের লাকড়ী মজুদ রাখা হয়েছে। এভাবে প্রতিটি ইট ভাটায় বুলডোজার দিয়ে পাহাড় কাটা মাটি ও ফসলী জমির মাটি কেটে অবৈধভাবে ইট তৈরির ফলে পরিবেশের মারাত্নক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে ভুক্তভোগী গ্রামবাসীর অভিযোগ।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, চাইল্যাতলী এলাকায় অবৈধ ভাবে ২০১৬ সালে  প্রতিষ্টিত ইট ভাটায় জ্বালানি যোগান দিতে গিয়ে দুইজন রোহিঙ্গা শিশু ঘটনাস্থলে মারা যায়। খবর পেয়ে নাইক্ষ্যংছড়ির তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইট ভাটা পরিদর্শন করে মালামাল জব্দ ও নগদ টাকা জরিমানা করেন। হলদিয়া পালং ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সরওয়ার কামাল বাদশাহ অভিযোগ করে জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বিহীন যত্রতত্র গড়ে উঠা অবৈধ ইট ভাটায় কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি হিসাবে নির্বিচারে বনজ সম্পদ পুড়ানো হলেও বন কর্মীরা নির্বিকার। তিনি বলেন, পাহাড় কাটা মাটি, বনসম্পদ ধ্বংসের পাশাপাশি কৃষি জমির মাটি কর্তনের ফলে একদিকে যেমন জমির উর্বরাশক্তি হ্রাস পাচ্ছে অন্যদিকে প্রাকৃতিক পরিবেশের চরম অবনতি হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আশরাফুল ইসলাম জানান, অবৈধ ইট ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেভাবে ইতিমধ্যে টেকনাফের ৩টি ইট ভাটার মালামাল জব্দ করা হয়েছে। অবৈধ ইট ভাটার ব্যাপারে জানতে চাইলে নাইক্ষ্যংছড়ির ইউএনও সাদিয়া আফরিন কচি জানান, অবৈধভাবে গড়ে উঠা  ইটভাটায় অবিলম্বে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উখিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, নির্বাচনী ব্যস্ততায় এ মূহুর্তে অভিযান পরিচালনা সম্ভব না হলেও যে কোনো সময়ে এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads