• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের তৎপরতা নেই

অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র

সংগৃহীত ছবি

অপরাধ

অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের তৎপরতা নেই

  • আজাদ হোসেন সুমন
  • প্রকাশিত ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮

ঘনিয়ে আসছে নির্বাচন। নির্বাচন এলেই আলোচনায় আসে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার-প্রসঙ্গ। এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও এ আলোচনা বাদ পড়েনি। তবে অতীতের জাতীয় নির্বাচনগুলোতে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যতটা তৎপরতা দেখায়, এবার ততটা নয় বলে উঠে এসেছে গবেষণায়। গবেষকদের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ৪ লাখেরও বেশি আগ্নেয়াস্ত্র রয়ে গেছে সন্ত্রাসীদের হাতেই। এসব আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার এবারের নির্বাচনে হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

এদিকে এবারের নির্বাচনকে সামনে রেখে শুধু পুলিশ বাহিনীরই ১ লাখ ৮৪ হাজার সদস্য মাঠে নামছেন। এর বেশিরভাগ সদস্যই সন্ত্রাসী গ্রেফতার, পরোয়ানা তামিল, মাদক উদ্ধারসহ নানাবিধ অপারেশনাল কাজে নিয়োজিত আছেন। কিন্তু সব ক্ষেত্রে ‘মিনিমাম অ্যাচিভমেন্ট’ থাকলেও শুধু অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে সাফল্য নেই। পুলিশ সদর দফতরের নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পুলিশ সদর দফতর ও ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ সেন্টারের (বিডিপিসি) গবেষণাসূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে অবৈধ অস্ত্র রয়েছে ৪ লাখের বেশির। প্রতিবছর দেশে হাজার কোটি টাকার অবৈধ অস্ত্র নিয়ে আসে চোরাচালানি সিন্ডিকেট। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র সিন্ডিকেটের সংখ্যা প্রায় ১২৮। প্রায় ৩০টি সীমান্তপথে এসব আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আসে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। এর নেপথ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্র ও চোরাকারবারিদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। এসব অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী, অস্ত্রধারী ও গডফাদারদের তালিকা হালনাগাদ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, গুলশানের হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়ায় যত অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার

হয়েছে, তাতে এটা নিশ্চিত যে, দেশের অভ্যন্তরে বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র ঢুকেছে। সীমান্তপথে ভারত ও মিয়ানমার থেকে সহজেই দেশে ঢুকছে অস্ত্রের চালান। এ ছাড়া চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ে দেশি প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিপুলসংখ্যক অস্ত্র তৈরি করা হচ্ছে। খুন, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ ছিনতাইয়ে অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু বেশিরভাগ অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। সীমান্ত দিয়ে পাচার হয়ে আসা অবৈধ অস্ত্র ছাড়াও বৈধ অস্ত্রধারীদের অস্ত্রও ভাড়ায় খাটছে। মাত্র পাঁচ হাজার টাকা দিলেই ভাড়ায় মেলে পিস্তল-রিভলবার। আবার ৩০-৫০ হাজায় হোম সার্ভিসে মিলছে ক্ষুদ্র অস্ত্রের। পুলিশের তালিকায় রাজধানীসহ সারা দেশে দুই শতাধিক অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী রয়েছে। তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নামও।

গোয়েন্দা সূত্রমতে, দেশের অপরাধ জগতের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের হাতে আসা এসব আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ খুবই বিপজ্জনক। এসব আগ্নেয়াস্ত্র দিয়েই খুন, ছিনতাই, ডাকাতি ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীল ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হতে পারে। সূত্রের মতে, মজুত করা আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াও প্রতিদিন পার্শ্ববর্তী দেশ দুটি থেকে আগ্নেয়াস্ত্রের চালান ঢুকছে। এসব আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হলে নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা এড়ানো কঠিন হয়ে পড়বে।

এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত আইজিপি (এইচআরএম) শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিনই অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র কমবেশি উদ্ধার হচ্ছে। তিনি বলেন, যেসব সন্ত্রাসী অস্ত্রের ব্যবহার করে তাদের বেশিরভাগই ইতোমধ্যে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। সুতরাং যে রকম আশঙ্কা করা হচ্ছে বিষয়টি তেমন নয়। আমরা তো আশা করছি, এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু-সুশৃঙ্খলভাবেই সম্পন্ন হবে। এবারের নির্বাচনে কোথায় কোন ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ, কারা অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে, কারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে— এসব তথ্য আমাদের কাছে আছে এবং সে অনুযায়ী এবার পরিকল্পিতভাবে পুলিশকে মাঠে নামানো হচ্ছে। পুলিশের পাশপাশি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে র্যাব, বিজিবি, ও সশস্ত্র বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। সুতরাং কেউ যদি মনে করে নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা করে, আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করে পার পেয়ে যাবে তাহলে বোকার স্বর্গে বসবাস করবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads