• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
হাজার কোটি টাকার প্রতারণা

টাকা আত্মসাতের অভিযোগে হেলালউদ্দিনসহ তিনজনকে গ্রেফতার

সংগৃহীত ছবি

অপরাধ

হাজার কোটি টাকার প্রতারণা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৯ জানুয়ারি ২০১৯

ফরিদুজ্জামান সেলিম নামে এক ব্যক্তির বাংলাদেশ ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট আছে। ফ্রান্সের এল. সি.এল ব্যাংক থেকে ওই অ্যাকাউন্টে ৫৪ হাজার কোটি টাকা আসে। বিশ্বাস করানোর জন্য ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের যাচাই কপি। এটা দেখিয়েই মানুষকে সহজেই বিশ্বাস করাত প্রতারক হেলালউদ্দিন। ওই ভুয়া অ্যাকাউন্টে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রলোভন দেখিয়ে ৪২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে সে।

এই প্রতারক ওই ভুয়া ৫৪ হাজার কোটি টাকা থেকে শতকরা এক থেকে দুই ভাগ লভাংশ দেওয়ার কথা বলত। যা কিনা টাকার অঙ্কে পাঁচশ কোটির ওপরে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসায় গিয়ে সহজ-সরল মানুষদের কছে সরকারি নানা প্রকল্পের কাজের কথা বলত। প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার স্বাক্ষর জাল করত হেলাল উদ্দিন। প্রধানমন্ত্রী স্বাক্ষর জাল করে সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল সে। 

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের লোগোযুক্ত চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাল স্বাক্ষর দিয়ে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে হেলালউদ্দিনসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। ওই দিনই প্রধানমন্ত্রীর  ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার পরিকল্পনায় রাজধানীর পল্লবী থানায় একটি মামলা (নং-৫৪) করা হয়। গত বছরের ২৯ নভেম্বরে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গত মঙ্গলবার দুপুরে মালিবাগের সিআইডির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (সিরিয়াস অ্যান্ড হোমিসাইডাল স্কোয়াড) সৈয়দা জান্নাত আরা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভুয়া অ্যাকাউন্টধারী ফরিদুজ্জামান সেলিমের সঙ্গে হেলালউদ্দিনের সম্পর্ক কী?  জানতে চাইলে সিআইডির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, হেলালউদ্দিনের সঙ্গে গ্রেফতার মো. এনামুল হক দুবার ভুয়া ফরিদুজ্জামান সেলিম সেজে মানুষের সঙ্গে দেখা করছে এবং আশ্বস্ত করেছে। হেলালউদ্দিনের সঙ্গে এখনো সেলিমের সাক্ষাৎ হয়নি, কিন্তু সেলিমের কাগজপত্রগুলো নিয়ে হেলাল কীভাবে প্রতারণা করে, সেটা খোঁজার চেষ্টা চালাচ্ছি।

তবে আসল ফরিদুজ্জামান সেলিমের নামে এখনো আমরা এমন প্রতারণার খোঁজ পাইনি কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর অফিসের দাফতরিক কাগজ, বাংলাদেশ ব্যাংকের চালান কপি এগুলো সে কেন করল সেটা আমরা জানব, সে কি দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এমনটা করল নাকি সেটাও জানা দরকার। এগুলো সবই তদন্তের ব্যাপার।

তিনি আরো বলেন, ফরিদুজ্জামান সেলিমকে গ্রেফতারের চেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। খুব দ্রুতই তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। তাকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য বের হয়ে আসবে।

জানতে চাইলে এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির (হোমিসাইডাল স্কোয়াড) উপপরিদর্শক নিউটন কুমার দত্ত গণমাধ্যমকে বলেন, হেলালউদ্দিন সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের উন্নয়নের কথা মসজিদ মাদরাসায় গিয়ে সাধারণ সহজ সরল মানুষকে জানাত। প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর সহ-কার্যালযের প্যাডে ওই প্রকল্পের কাজের আদেশ নামাও দেখাত এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫৪ হাজার কোটির টাকার যাচাই কপি দেখাত। যাতে মানুষ সহজেই হেলালকে বিশ্বাস করত।

সে সরকারের বড় বড় প্রকল্প যেমন বিদ্যুৎ, পর্যটন খাত, ওষুধ উৎপাদন, দারিদ্র্য বিমোচনে গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি ও মৎস্য পালন, মসজিদ, মাদরাাসা এতিমখানায় ইসলামিক বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, প্রতিবন্ধী সেবা মূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন কথা বলত।

সহজ-সরল মানুষকে প্রলুব্ধ করতে এসব খাতে বিনিয়োগে উৎসাহী করতে বিভিন্ন কৌশলও নিয়েছে হেলাল। এক্ষেত্রে মানুষকে বিশ্বাস করাতে বলত অমুকে ৫ লাখ দিয়েছে, আপনারাও কিছু দেন, কিংবা ৫৪ হাজার কোটি টাকা থেকে শতকরা এক থেকে দুই ভাগ লভ্যাংশ দেব, যা কিনা টাকার অঙ্কে পাঁচশ কোটির ওপরে। এতে সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করত এবং টাকা বিনিয়োগ করত।

তিনি বলেন, হেলালউদ্দিন পুরো ঠকবাজ প্রকৃতির একজন মানুষ। মানুষকে খুব সহজেই বিভ্রান্ত করে ফেলতে পারে হেলাল। তিনি ব্যক্তিজীবনে দুটি বিয়ে করছে। হেলালউদ্দিন  মোংলা বন্দরে টাইপিস্টের কাজ করত। ২০০৫ সালে দুদকের একটি মামলায় তিনি গ্রেফতার হন। জেল থেকে বের হয়ে তিনি এই প্রতারণার পেশায় জড়ায়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads