• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
খুনিরা এখনো পর্দার আড়ালে

সোহাগী জাহান তনু

ছবি : সংগৃহীত

অপরাধ

তনু হত্যার ৩৪ মাস

খুনিরা এখনো পর্দার আড়ালে

  • আজাদ হোসেন সুমন
  • প্রকাশিত ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

৩৪ মাস পার হয়েছে, কিন্তু এখনো উন্মোচিত হয়নি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের রহস্য। হত্যাকারীরা রয়ে গেছে পর্দার আড়ালেই। সন্তান হারিয়ে হতাশায় জীবন্ত লাশ হয়ে গেছেন মা আনোয়ারা বেগম। মেয়ে হত্যার বিচার না পেয়ে তার বাবা এখন শয্যাশায়ী।

হত্যা মামলায় সিআইডি যে তিন সন্দেহভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, তনুর পরিবারও তাদেরকেই হত্যাকারী বলে দাবি করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে কী পাওয়া গেছে তা এবং এই তিন ব্যক্তির নাম ও পরিচয় প্রকাশ করতে নারাজ তদন্তকারীরা। তনুর মায়ের অভিযোগ, হত্যাকারীচক্রের সদস্যরা ‘মহাশক্তিধর’ বলেই মামলা ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। 

এ সম্পর্কে তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার বাংলাদেশের খবরকে বলেন, তদন্ত অব্যাহত আছে। সময়মতো অগ্রগতি জানানো হবে। এদিকে তনুর মা আনোয়ারা বেগম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, মেয়ে হত্যার বিচারের আশা ছেড়ে দিয়েছি। বিচার যে পাব না এটা ইতোমধ্যে নিশ্চিত হয়েছে। কারণ তদন্তকারীরা প্রথম দিকে যোগাযোগ রাখলেও গত এক বছরে কেউ কোনো খবর নেয়নি। পুলিশ ইচ্ছা করলে আসামিদের চিহ্নিত ও গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে পারত। এখন মনে হচ্ছে কোনো অদৃশ্য শক্তির ইশারায় পুলিশ চলছে। আমরাও নানা হুমকি- ধমকিতে দিশেহারা। তাই মেয়ে হত্যার বিচার আল্লাহর কাছে দিলাম। কেয়ামতের দিন তিনি ঘাতকদের বিচার  করবেন।

ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তনুকে হত্যা করা হলেও ময়নাতদন্তে মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ না করায় বিচার প্রক্রিয়া ভেস্তে গেছে বলে মনে করেন অনেকেই। ২০১৭ সালের ১৬ মে তনুর ভেজাইনাল  সোয়াবে ৩ জন পুরুষের শুক্রাণু পাওয়ার খবর সিআইডি গণমাধ্যমকে জানায়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে রহস্যজনক কারণে চুপসে যায় সিআইডি।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতর কালা পাহাড় নামের একটি জঙ্গলে তনুর রক্তাক্ত মরদেহ পাওয়া যায়। পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ ও জেলা  গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পর ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল  মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) কুমিল্লা।

তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদকে নিযুক্ত করা হয়। এরপর সিআইডি ঢাকার বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহহার আকন্দসহ সিআইডির সিনিয়র কর্মকর্তারা কয়েক দফা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তনুর পরিবার এবং বিভিন্ন সামরিক-বেসামরিক লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন।

তনুর মরদেহ উদ্ধার করার পরদিন ২১ মার্চ কুমেকের ফরেনসিক বিভাগে তার প্রথম ময়নাতদন্ত করেন ডা. শারমিন সুলতানা। ৪ এপ্রিল দেওয়া হয় প্রতিবেদন। তাতে তনুকে হত্যা ও ধর্ষণের আলামত ছিল না বলে উল্লেখ করায় দেশব্যাপী তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। তবে এর আগেই ৩০ মার্চ তনুর মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ ও ২য় ময়নাতদন্ত করা হয়। ওই বছরের ১৪ মে কুমিল্লার আদালতে এসে পৌঁছায় তনুর ৭টি বিষয়ের ডিএনএ প্রতিবেদন। প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এবং ডিএনএ প্রতিবেদনে ব্যাপক গরমিল পাওয়া যায়। পরে ১১ জুন ২য় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন সিআইডির নিকট হস্তান্তর করা হয়।

সে সময় কুমেকের ফরেনসিক বিভাগ ও ২য় ময়নাতদন্ত বোর্ডের প্রধান ডা. কেপি সাহা জানান, তনুর ২য় দফা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনেও মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে দেশব্যাপী আবারো চরম  ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া তনুর পরিবারও এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৫-২৭ অক্টোবর তিন সন্দেহভাজনকে সিআইডির একটি দল ঢাকা সেনানিবাসে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ ছাড়া ওই বছরের ২২ নভেম্বর ঢাকা সিআইডি কার্যালয়ে তনুর বাবা ইয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম, চাচাতো বোন লাইজু ও চাচাতো ভাই মিনহাজকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads